খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনি রোডম্যাপ দেয়ার আহবান বিএনপির: মির্জা ফখরুল
  চলমান ইস্যুতে সবাইকে শান্ত থাকার আহবান প্রধান উপদেষ্টার: প্রেস সচিব
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৮

সুবোল জেলে

মাজরুল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ

ভৈরব। একটি প্রাচীন নদী। এই নদীতে একসময় গভীর জল থাকত। জলে নানান মাছের প্রাচুর্য ছিল। এখন মরাহাজা রূপ নিয়েছে। তেমন আর মাছ থাকে না।

সুবোলের মাছ ধরা ভৈরবে জন্মগত অভ্যাস। ভৈরবের মায়া ত্যাগ করে অনেকেই অন্যত্র চলে গেছে। সুবোল হালদার এখনও দাঁতে, দাঁত কামড়ে পড়ে আছে। মরাহাজা ভৈরব নদীর মায়া ত্যাগ করে কোথাও যায়নি। ভৈরবের চড়ায় বসতভিটে গেঁড়ে আজও বসবাস করে। অগভীর জলে আগের মতো তেমন মাছ ওঠে না। তবুও ডোঙা, বৈঠা ও ফাঁস জাল নিয়ে সুবোলের এই নদীতে আনাগোনা।

অভাবের সংসার। তার ‘পরে ছেলেটার ক’দিন ধরে শক্ত ব্যামো। কিন্তু অর্থাভাবে ডাক্তারখানা নিয়ে যেতে পারেনি। আজ কিছু মাছ ধরবে এবং মাছ বিক্রি করে ছেলেটার জন্য ঔষধ ও পথ্যি দেবে। এই ভেবে মুখে বিড়ি ধরিয়ে মাথায় ডোঙা, বৈঠা ও ফাঁস জাল নিয়ে রওনা দিল নদীর পথে।চির চেনা নদীর ধারে এসে সে দাঁড়াল।

হঠাৎ করে বাবলা গাছ থেকে একটা কাক ডেকে উঠল। কাকের ডাক শুনে সুবোলের বুকের খাঁচাটা হু হু করে উঠল।

কিছুক্ষণ সে মৌন হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পরে সম্বিত ফিরে এলে নদীর জলে নেমে যায়। তার মানুষপটে ভেসে ওঠে আগের সেই ঝাঁকে ঝাঁকে ভেসে বেড়ানো মাছের ছবি।

না যা-করেই হোক আজকে তাকে কিছু না কিছু মাছ ধরতে হবেই।তা না-হলে ছেলেটাকে আর বাঁচানো যাবে না।

এই ভেবে নদীর বুকে ডোঙা ভাসিয়ে ফাঁস জাল ভাসায়।সে মরা ভৈরবের বুক চিরে চিরে এগিয়ে যায় …আ-নে-ক দূর … আকন্দবোনা থেকে হাঁড়বোনা পর্যন্ত।

অতঃপর সুবোলের সব আশা ভরসা শেষ। তার বুক ফাটা হাহাকার। বিক্রি করার মতো জালে মাছ উঠেনি।সে হাঁড়বোনা থেকে শূন্য খালুই নিয়ে আকন্দবোনা ঘাটে ফিরে এসে দাঁড়াল।

সংকল্প করে আজ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল কিছু মাছ ধরবে বলে।মাছ বিক্রি করে সেই টাকাতে ছেলের চিকিৎসা করাবে। না হল না ! আবারও সেই কাকটা ডেকে উঠল । কাকের ডাক শুনে সুবোলের মাটিতে পা দাঁড়াচ্ছে না। অসুস্থ ছেলের জন্য মন আনচান করছে।বিড়ি টানলে নাকি চিন্তা দূর হয়। তাই, সে একটা বিড়ি ধরাল। মনে মনে ভাবে আর একটু ডোঙা ভাসিয়ে না গিয়ে হয়তো ভুলই হল।

ছেলেটাকে আর বাঁচানো গেল না ! অশ্রুসিক্ত নয়নে বাড়ির দিকে পা বাড়াল।

বাড়ির কাছাকাছি যেতেই কান্নার শব্দ ভেসে এলো কানে। তার স্ত্রী দুলি, দুলি হালদার মরা ছেলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। সুবোল তার মাথার জাল-হাল উঠানে ধপ্ করে ফেলে দেয়। এবং সে-ও কান্নায় ভেঙে পড়ে।সে চোখে কিছু দেখতে পায় না। শতছিন্ন ময়লা ধড়ার কোঁচড়ে চোখ মুছে।

তবুও সুবোল জেলে খিদে- তৃষ্ণা নিয়ে ভৈরবের বুকে জাল ভাসায় …!

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!