সাতক্ষীরার আশাশুনির লাঙলদাড়িয়া গ্রামের সাইকেল মিস্ত্রী অনিমেষ সরকার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আব্দুল মালেক মল্লিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সাতক্ষীরা আমলী-৮নং আদালতের বিচারক মোঃ সালাহউদ্দিন আসামী মালেক মল্লিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
একই সাথে মামলার স্বাক্ষী বাবুল আক্তার মোল্লার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে আসামি শ্রেণীভুক্ত করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপ-পরিদর্শক নাহিদ হোসেন শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আব্দুল মালেক মল্লিককে অনিমেষ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায়। একইসাথে মামলার সাক্ষী বাবলু আক্তার মোল্লাকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য পাঠানো হয়।
বিএনপি নেতা আসামী আব্দুল মালেক মল্লিক (৫৫) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের ওমর ছিদ্দিক মল্লিকের ছেলে ও বাবুল আক্তার মোল্লা (৩৯) একই গ্রামের আব্দুল খালেক মোল্লার ছেলে।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপ-পরিদর্শক নাহিদ হোসেন জানান, শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আব্দুল মালেক মল্লিককে সাইকেল মিস্ত্রী অনিমেষ সরকার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। সোমবার রিমান্ড শুনানি শেষে বিচারক মোঃ সালাহউদ্দিন তাকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সোমবার বিকালে আদালত থেকে তাকে আশাশুনি থানায় আনা হয়েছে।
আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নোমান হোসেন জানান, মামলায় ১নং সাক্ষী হিসেবে বাবুল আক্তার মোল্লার নাম থাকলেও জিজ্ঞাসাবাদে ও ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সে নিজে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে প্রতীয়মান হয়। ফলে আদালত তাকে মামলার আসামি শ্রেণীভুক্ত করার আদেশ দেন। সোমবার বিকালে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেষে বাবুল আক্তারকে আদালত থেকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ গত ২০ জানুয়ারি সোমবার একটি পুকুর থেকে অন্য পুকুরে জল সরানোর সময় মাছ লাফ দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী মালেক ও অহিদের সাথে অনিমেষের বিরোধ হয়। একপর্যায়ে অনিমেষকে মারপিট করেন অহিদ মল্লিক ও তার ভাই শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক মালেক মল্লিক। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানোয় গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় অহিদ মল্লিকের বাড়িতে এক শালিসি বৈঠক হয়। সেখানে শালিসদাররা শালিসের ভার মালেক মল্লিকের উপর চাপিয়ে দিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেন। একপর্যায়ে অনিমেষের মুখে ঘুষি মেরে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেন অহিদ মল্লিক।
এ ঘটনার পর অনিমেষ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে দোকান থেকে ঘের হয়ে বাড়ি ফিরে না আসায় রাতে বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের বাবুল আক্তার মোল্লার নিম গাছে নাইলনের দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় অনিমেষের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায় তারা। অনিমেষকে হত্যার পর লাশের গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রাচর দেয় মালেক মল্লিক। শনিবার সকাল ১১ টায় নাকতাড়া কালিবাড়ি বাজার থেকে মালেক মল্লিক ও বিকালে বাবুল আক্তার মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।
খুলনা গেজেট/এনএম