খুলনা, বাংলাদেশ | ১৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  ৫২ বছরে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড যশোরে
  আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছুটি থাকছে স্কুল-মাদ্রাসা
  হিট স্ট্রোকে এক সপ্তাহে ১০ জনের মৃত্যু : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক,বাগেরহাট

বঙ্গোপসাগরে নিন্ম চাপের প্রভাবে গত তিন দিন থেমে থেমে বৃষ্টি আর জোয়ার পানিতে বাগেরহাটের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট সদর উপজেলার তিনটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি জমে ওইসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এসব পরিবারে রান্না খাওয়ার দারুণ অসুবিধা হচ্ছে। তারা ভৈরব নদের উপর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরনখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের দু’হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুর ও ঘেরের মাছ।

মোংলা ও রামপাল উপজেলার নদী তীরবর্তী  এলাকার কয়েক হাজার মানুষের ভোগান্তিতে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষ তাদের বেড়িবাঁধের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। ওই সব এলাকার খুব শিগগির নদীতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মান কাজের আশ্বাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

জেলার চিংড়ি মাছের ঘেরগুলোতে পানি ছুঁইছুঁই করছে। বৃষ্টিপাত ও নদনদীতে জোয়ারের পানির চাপ অব্যাহত থাকলে মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছে মৎস্য বিভাগ। তবে এই বৃষ্টিতে চলতি রোপা আমন ধানের উপকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

এদিকে, তৃতীয় দিনের মতো উচ্চ জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তৃীর্ণ এলাকা ও করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি তলিয়ে গেছে।

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, গত তিন দিন ধরে জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তৃীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের প্রধান প্রধান নদনদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। কমরজলে পানির উচ্চতা ছিল চার ফুট। সম্প্রতি সময়ে নদীতে যেহারে পানি বাড়ছে তাতে সুন্দরবনের প্রাণিকুল হুমকির মুখে পড়ছে। বনের বাঘ, শুকর, হরিণ, বানর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এই প্রাণিকুল রক্ষায় সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন এই বন কর্মকর্তা।

বাগেরহাট কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিজুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় বাগেরহাট জেলাজুড়ে রবিবার সকাল থেকে থেমে থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত দুই দিনে জেলায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে ফকিরহাট উপজেলায় একদিনে সর্বোচ্চ ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমে বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শীতকালিন সবজিক্ষেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। দ্রুত এই পানি নেমে না গেলে চাষিদের ক্ষতি হবে। তবে এই বৃষ্টিতে রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে চলতি রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে। জেলায় ইতিমধ্যে ৮৭ ভাগ জমিতে রোপা আমন ধান রোপন শেষ হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।

বাগেরহাট(মোরেলগঞ্জ –শরনখোলা) চার আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণ, বহরবুনিয়া, ঝিউধারা ও চিংড়াখালীসহ মোরেলগঞ্জ সদর ও শরনখোলা উপজেলার দুই হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে ।এছাড়া জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসহায় মানুষের পাশে দাড়তে বলেছি। প্রয়োজনে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোরেলগঞ্জের পৌরসভা অংশে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। ওই অংশে নদীতীর প্রতিরক্ষার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নদীতীর সংরক্ষণের কাজ চলতি অর্থ বছরে শুরু করা হবে। জোয়ারের পানি ওঠা রোধ করতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার জন্য ৯৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মান করা প্রয়োজন। এরজন্য চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তার সমীক্ষা খুব শিগগির শুরু হবে। ওই বাঁধ নির্মিত হলে পাশ^বর্তি রামপাল ও মোংলা উপজেলারও জোয়ারের পানি প্রতিরোধ হবে। এছাড়া বাগেরহাট সদরের জোয়ারের পানি ঠেকাতে জাইকার অর্থায়নে নদীতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মান কাজ খুবশিগগির শুরুর কথা জানান এই কর্মকর্তা।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে লঘু চাপের প্রভাবে জোয়ার ও অব্যাহত বৃষ্টিতে বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলার নদীতীরবর্তি নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কয়েকশ পরিবার সাময়িকভাবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা তৈরি করতে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!