খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

বাগেরহাটে ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

বাগেরহাটে ধীরগতিতে চলছে সরকারি বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম। এখনও দুই-একটি উপজেলায় ধান সংগ্রহ কমিটির সভাও হয়নি। ধান সংগ্রহে নেই কোন প্রচার প্রচারণা, কৃষকের মধ্য নেই কোন উৎসাহ। ২৮ এপ্রিল খাদ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করলেও ১৯ দিন পরে ১৭ মে বাগেরহাটের ফকিরহাটে ধান সংগ্রহ শুরু হয়।

বাগেরহাট জেলায় সংগ্রহের লক্ষমাত্রা ৮ হাজার ৬৪৫ মেট্রিক টন থাকলেও রবিবার (২২ মে) পর্যন্ত মাত্র ১৩৪ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার বেশিরভাগ কৃষক ধান মাড়াই শেষে তাদের ধান স্থানীয় বাজারে অথবা বাড়ি থেকেই ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। যার ফলে ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে এই জেলায়।

খাদ্য বিভাগ বলছে, ধান সংগ্রহের এখনও অনেক সময় রয়েছে, লক্ষ মাত্রা অর্জনের চেষ্টা করবেন তারা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানাযায়, চলতি বছরে বাগেরহাট জেলায় ৮ হাজার ৬৪৫ টন ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা রয়েছে । এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫৪৯ টন, মোরেলগঞ্জে ১ হাজার ৪৩ টন, রামপালে ৬২৯ টন, শরণখোলায় ৬৫ টন, ফকিরহাটে ১ হাজার ২৩৬ টন, মোল্লাহাটে ১ হাজার ২০৬ টন, কচুয়ায় ১ হাজার ১১০ টন এবং চিতলমারী উপজেলায় ১ হাজার ৮০৭ টন রয়েছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৩১ আগস্টের মধ্যে এই মৌসুমের সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ করতে হবে। ২০২০ ও ২০২১ সালেও জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়নি। ২০২০ সালে ৬ হাজার ৪১৮ টন লক্ষমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছিল ৫ হাজার ৯৭৬ টন, ২০২১ সালে ৮ হাজার ৫৩০ টন লক্ষমাত্রায় অর্জিত হয়েছিল ৬ হাজার ৭৩৭ টন।

কচুয়া উপজেলার কৃষক আমজেদ আলী মোল্লা বলেন, এবছর প্রায় ১১০ মন ধান হয়েছে। বছরের খোরাক (যে পরিমান চাল লাগে- সেই পরিমান ধান) রেখে ঈদের আগেই ৭৫০ টাকা দরে ৭০ মন ধান বিক্রি করেছি। শুনেছি সরকারি গুদামে ১ হাজার ৮০ টাকা মন বিক্রি করা যায়। কিন্তু কিভাবে বিক্রি করব, আমিতো সিস্টেম জানি না।ধান বিক্রির উদ্দেশ্যে খাদ্য গুদামে কখনও গেছেন? এমন প্রশ্নে আমজাদ আলী মোল্লা বলেন, অশিক্ষিত মানুষ, কার কাছে যাব কি বলব তাই যাইনি।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, এলাকার ধান কেটে বিক্রি করার অন্তত ২০ দিন পরে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বেশিদামের জন্য এতদিন অপেক্ষা করলে, পাওনাদারদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। তাই কম পাই-বেশি পাই , লোকসান স্বীকার করে আগেই বিক্রি করে দিয়েছি।

বাগেরহাট সদর উপজেলার পাতিলা খালি গ্রামের কৃষক মাহাবুবুল আলম কাজল বলেন, ফড়িয়া আর মধ্য সত্ত্ব ভোগীদের কারনে প্রতি বছর প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক গনকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকার ১ হাজার ৮০ টাকা দরে প্রতি মন বোরো ধান ক্রয় করলেও, খোলা বাজারে প্রতিমন বোরো ধান বিক্রয় হচ্ছে ৭২০-৭৫০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি করতে পারলে কৃষকরা লাভবান হতে পারত। এজন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকার কর্তৃক সরাসরি ধান ক্রয়ের ব্যবস্থা নেয়া ও ভরা মৌসুমে চাল আমদানি বন্দ রাখার দাবি জানান এই কৃষক।

কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, বাগেরহাটে বোরো চাষ অন্য জেলার থেকে একটু আগেভাগে শুরু হয়। সরকারি ভাবে ধান বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত হওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া। বাগেরহাট সদর এবং ফকিরহাট উপজেলায় অনলাইনে আবেদন করতে হয়। তারপর লটারি হয়, সেখানে টিকলে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের সময় মত ধান বিক্রি করা যায়। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় কৃষি অফিসের মাধ্যমে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাদের কাছে তালিকা প্রদান করেন।

এক্ষেত্রে বেশিরভাগ কৃষকের তালিকা যায়, ব্যক্তি সম্পর্ক ও রাজনৈতিক বিবেচনায়। যারা কৃষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন, তাদেরও ধান বিক্রয় করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়া ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে প্রকৃত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের প্রচার প্রচারণারও অভাব রয়েছে। এসব কারণে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ লক্ষমাত্র অর্জিত হয় না।

বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এম.এম তাহসিনুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংকটের কারণে বাজার মূল্য যে দিকে যাচ্ছে, তাতে ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হওয়া কষ্টসাধ্য। তারপরও আমাদের হাতে সময় রয়েছে, আমরা শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা করব। আশাকরি এবার আমাদের জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, বোরো মৌসুমে বাগেরহাটে ৫৯ হাজার ২ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার থেকে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর বেশি। এতে প্রায় ৪ লাখ ১৩ হাজার ৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। শতভাগ চাষি তাদের ধান মাড়াইয়ের কাজ শেষ করেছেন।

খুলনা গেজেট /এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!