বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের একটাই উদ্দেশ্য একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করা। এ কাজের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে হবে। জামায়াতকে দেশ গড়ার দায়িত্ব দিলে একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র উপহার দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সোমবার (৩ মার্চ) নগরীর খানজাহান আলী রোডের তারের পুকুরস্থ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরী কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আমাদের সবগুলো অফিস সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুম খুন নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের নেতাদেরকে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের প্রতি প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। তবে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনা দরকার।
তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা ময়দানে ফেরার যে তৌফিক দিয়েছেন তার জন্য শুকরিয়া হিসেবে আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব। যে শক্তি বিতাড়িত হয়েছে তাদের ব্যাপারে পাহারাদারের ভূমিকায় থাকতে হবে। তারা যেন দেশে ঢুকে আবার অন্যায় করতে না পারে। তাদের এখন একটাই পরিকল্পনা, কীভাবে বাংলাদেশের এই পরিবেশকে নস্যাৎ করে সারা দুনিয়াকে দেখানো যায় যে বাংলাদেশ অচল হয়েছে।’
গোলাম পরওয়ার বলেন, আজকে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর যে কার্যালয় উদ্বোধন হলো এখানে কুরআন-হাদিসের চর্চা হবে। অন্য কোন দরীয় কার্যালয়ের মতো একটি আড্ডা খানায় পরিণত হবে। এখানে কুরআন-হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য পড়ে গবেষণা কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে একটি মডেল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য একদল আদর্শবাদী ও চরিত্রবান লোক তৈরির কোনো বিকল্প নেই।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শবাদী সংগঠন। জামায়াত দেশকে একটি মডেল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য দীর্ঘ পরিসরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এ মহতি কাজ সম্পাদনের জন্য একদল আদর্শ ও চরিত্রবান লোক তৈরি করার কোনো বিকল্প নেই। সে লক্ষ্যেই আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে এমন একটি জনগোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি যারা দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছেন।
বছর ঘুরে আবারো মুমিনের জীবনে উপস্থিত হয়েছে পবিত্র রমযান তিনি আরও বলেন, একজন মুসলিমের জন্য রমযান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমলের মাস। এটি আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সংযম, ত্যাগ ও অপরের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের মাস। অন্যান্য মাসে আমাল-ইবাদাত বা ভালো কাজ করলে যে পরিমাণ সওয়াব হয়, রমযান মাসের আমলে তার সত্তর গুণ বেশি সওয়াব হয়। রমযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মানবতার সেবা করা। এই মাস আমাদের আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল, ভালোবাসা প্রকাশ এবং সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের প্রয়োজন মিটাতে উদ্বুদ্ধ করে।
তিনি বলেন, রমযান মাসে দান-ছাদকা করলে, গরীব-অসহায়দের আহার করালে অন্যান্য মাসের থেকে সত্তর গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। হাদিসের সবথেকে গ্রহণযোগ্য কিতাব সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী (সা.) ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তার সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযানের প্রতি রাতেই জিবরীল আলাইহিস সালাম তার সাথে একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী (সা.) তাকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন। অন্য একটি হাদিসে এসেছে।
এক মজলিসে রাসুল (সা.) বললেন, সাওম ও সদাকা একত্রিত হলে জান্নাত পাওয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়। জান্নাতে একটি প্রাসাদ রয়েছে যার ভিতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভিতর পরিদৃষ্ট হবে। তখন এক বেদুঈন উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) এটি কার হবে? তিনি বললেন, এটি হবে তার যিনি ভালো কথা বলে, অন্যকে খাদ্য খাওয়ায়, সর্বদা সাওম পালন করে এবং যখন রাতে মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন সে উঠে সালাত আদায় করে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল ইসলাম ফারাজী, মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, সেক্রেটারি রাকিব হাসান, মাওলানা শেখ ওয়ালিউল্লাহ, ইকবাল হোসেন, মীম মিরাজ হোসাইন প্রমুখ। কুরআন তেলাওয়াত করেন হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলান আ ন ম আব্দুল কুদ্দুস। দীর্ঘ নয় বছর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে এবং হামলা মামলায় জামায়াত নেতৃবৃন্দ অফিসে নিয়মিত বসতে পারেনি। আওয়ামী সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী অফিসটি বন্ধ করে দিয়েছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে।
খুলনা গেজেট/এমএম