খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ কার্তিক, ১৪৩১ | ৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  তরিকুল ইসলাম ভূইঁয়াকে কলকাতা, ভারত মিশনের প্রেস উইংয়ের প্রথম সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  ঝিনাইদহের সাবেক এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী গ্রেপ্তার

আছে ফুটওভার ব্রিজ, নেই ব্যবহার

তানভীর আহমেদ

নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর এ বছর অনেকটা নিরবে চালু হয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) দুটি ফুটওভার ব্রিজ। তবে চালু হওয়ার দীর্ঘ দিন পার হলেও ব্রিজগুলো অলস পড়ে থাকছে সারাদিনই। ফলে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজগুলো কাজে আসছে না।

নগরবাসী বলছেন, স্বল্প দুরত্বের ব্রিজ হওয়াই আগ্রহ নেই ব্যবহারে।

অপরদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরীতে ফুটওভার ব্রিজ আসলে কোন জায়গাটিতে প্রয়োজন সেটা নির্বাচন করা বেশি প্রয়োজন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নগরীর খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) সামনে ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা ও খুলনা-যশোর মহাসড়কের সরকারি বিএল কলেজের সামনে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ব্যয়ে তৈরি হয় এই ফুটওভার ব্রিজ দুটি।

জানা যায়, খুবি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছিলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের শেষের দিকে খুলনা সওজ ওই স্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। অপরদিকে দৌলতপুর সরকারি বি এল কলেজের সামনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক তখনকার সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে ডিও লেটার দেন।

এরপর ব্রিজ ২টি নির্মাণের কাজ দেওয়া হয় কংক্রিট অ্যান্ড স্টিল টেকনোলজি লিমিটেড, আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশন (জেভি) নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নীরব মুর্তির ভূমিকায় দাড়িয়ে আছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ফুটওভার ব্রিজটি। খুবির প্রধান ফটক অর্থাৎ শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ ও খুবি পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন গেটের ঠিক মাঝখানে অবস্থান এই ব্রিজটির। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরত্বে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও এটি ব্যবহারে আগ্রহ নেই শিক্ষার্থীদের। ব্রিজটি এখন কেবল একটি সৌন্দর্যবর্ধক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানার পোস্টার টাঙানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যবহার না করার ফলে ফুটওভার ব্রিজটি দিনদিন স্থানীয় বখাটেদের নিরাপদ আখড়া হিসেবে পরিণত হচ্ছে।

এ বিষয়ে খুবি শিক্ষার্থী মো. নাঈম মল্লিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ফুটওভার ব্রিজের দরকার নেই, এর কারণ হলো, ওই জায়গাটিতে জ্যাম থাকে না এবং শিক্ষার্থীরা দ্রুত যাতায়াতের কারণে নিচ দিয়ে চলে যায়। গল্লামারিতে যেহেতু ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলমান তাই হয়তো এখানে ব্রিজ নির্মাণ হয়নি, তবে ভবিষ্যতে গল্লামারিতে ব্রিজ প্রয়োজন। আমরা শিক্ষার্থীরা যেহেতু গল্লামারিতে বাজার করতে যায় এবং সাধারণ মানুষের চলাচলও এখানে বেশি ফলে জ্যামও সৃষ্টি হয়, তাই এই জায়গাটিতে ফুটওভার ব্রিজ প্রয়োজন।

এদিকে কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে দৌলতপুর কলেজ মোড়ের ফুটওভার ব্রিজটি। একদিকে সরকারি বিএল কলেজ ও অন্যদিকে দৌলতপুর দিবা নৈশ কলেজ। ওভার ব্রিজটিতে প্রত্যাশা অনুযায়ী পথচারীর পারাপার না থাকলেও অভাব নেই এখানে বসে আড্ডা দেওয়া বা সময় কাটাতে আসা তরুণ-তরুণীদের।

ব্রিজটিতে দাড়িয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন শিক্ষার্থী রিজভী। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, রাস্তা পারাপার হওয়ার জন্য এখানে ফুটওভার ব্রিজ কেউ ব্যবহার করে না। ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হতে ৫ মিনিট সময় লাগে, আর নিচ দিয়ে গেলে কয়েক সেকেন্ডে রাস্তা পার হওয়া যায়। শুধু শুধু সময় নষ্ট করবো কেন। রাস্তা পার হওয়ার জন্য খুব কম মানুষই ব্রিজে ওঠে। এখানে সবাই এসে আড্ডা দেয়, ছবি তোলে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে আরেক নারী কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কেউই ব্রিজ ব্যবহার করি না। মাঝেমধ্যে ওপরে উঠে ছবি তুলি, অনেকে টিকটক করে, ভালো লাগে তাই। এছাড়া কলেজ মোড়ে তেমন ট্রাফিকও নেই। তাই আমরা এগুলো ব্যবহার না করে নরমালি আগের মতোই রাস্তা পার হই। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করার কারন জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এখানকার রাস্তা খুবই ছোট, মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে পার হতে। ব্রিজ দিয়ে পার হতে আরও বেশি সময় লাগে, তাই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে আগ্রহ কম।

এদিকে, বিএল কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, দৌলতপুরের ফুটওভার ব্রিজটি সঠিক জায়গায় নির্মাণ হয়নি। ব্রিজটি যদি কিছুটা এগিয়ে, দৌলতপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে রেল ক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে বিএল কলেজের গেট পর্যন্ত নির্মাণ করা হতো তাহলে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদের উপকারে আসতো।

সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতপুর কলেজ গেট থেকে বিএল কলেজ পর্যন্ত যাতায়াতে পার হতে হয় একটি রেলক্রসিং। এই রেলক্রসিংটিতে নেই কোন গেট। ফলে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এই স্থান দিয়ে।

নগরবাসীর ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে অনাগ্রহ নিয়ে বিব্রত খোদ নির্মাণকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগও। সংস্থাটির খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ গণমাধ্যমে জানান, ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের জায়গা নির্ধারণে কোনো ত্রুটি ছিল না। কারণ কোনো প্রতিষ্ঠানের গেটের মুখেই এটি নির্মাণ করা যায় না। লোকজন অলসতা করে ওভারব্রিজে ওঠে না। অথচ সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়ানোর জন্য এ দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এগুলো ব্যবহারে লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আপাতত আর নতুন কোনো ওভারব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা নেই সংস্থাটির।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!