বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার কৃষক কামরুল ইসলাম (৩৫) বিদেশী ফল ড্রাগন চাষে সফল হয়েছেন। আঙ্গিনায় শখের বসে লাগানো কয়েকটি গাছ থেকে তার এখন শতাধিক গাছ। মৌসুমের অর্ধেক সময়েই এই গাছের ফল দিয়ে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করেছেন তিনি।আরও দুই একর জমিতে নতুন করে ড্রাগনের চাষ শুরু করেছেন। কামরুলের সফলতা দেখে প্রতিবেশীরাও ঝুকছেন ড্রাগন চাষে।
শুধু কামরুলের প্রতিবেশী নয় বাগেরহাট জেলার অনেকেই সখের পাশাপাশি বানিজ্যিক ভাবে ড্রাগনের চাষ শুরু করেছেন।মাত্র তিন বছর আগে বড় ভাইয়ের দেওয়া চারা দিয়ে ড্রাগনের চাষ শুরু করেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের কামরুল ইসলাম।
বড় ভাইয়ের পরামর্শে নিজেদের খাওয়ার জণ্য নিজ বাড়ির উঠোনে কয়েকটি চারা রোপন করেন কামরুল।৬ মাস পরেই ফল আসে এই গাছে। গাছের ফলের চেহারা ও স্বাদে মুগ্ধ হন কামরুল ও তার পরিবার।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে এক বছরের মাথায় নিজের গাছের কাটিং (গাছের ডালেরমত কিছু অংশ) দিয়ে চারা তৈরি করেন তিনি।
২য় বছরেই নিজের তৈরি বেশকিছু চারা রোপন করেন তিনি। বাড়ির উঠোনে ২০টি ঝাড়ে (পিলারে) কামরুলের ড্রাগন গাছের সংখ্যা পৌছায় ১২০ টিতে। মাত্র ২ থেকে ৩ শতক জমিতে লাগানো শতাধিক গাছ দিয়ে এ পর্যন্ত অর্ধলক্ষাধিক টাকার বেশি বিক্রি করেছেন। গাছে যে ফুল ও ফল রয়েছে তাতে আরও সমপরিমান আয় হবে এবার কামরুলের। অন্যসব কাজ ছেড়ে দিয়ে এখন শুধু ড্রাগন চাষে মন দিয়েছেন কামরুল ইসলাম।
সফল ড্রাগন চাষী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বড় ভাই চাকুরীর সুবাদে চট্টগ্রাম থাকেন। বছর চারেক আগে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসার সময় কিছু ড্রাগণের কাটিং (চারা) নিয়ে আসেন। আমাকে বলে এগুলো লাগা ভাল কিছু হতে পারে। আমি ক্যাকটাস ধরণের গাছ ভেবে না লাগিয়ে ফেলে দেই। পরবর্তীতে ভাই জানতে চাইলে বলি ও দিয়ে কি হবে। আমি ফেলে দিয়েছি। পরের বছর ঈদে আবারও ড্রাগনের কয়েকটি কাটিং নিয়ে আসেন। এবার কঠোর নির্দেশনা দেন আমাকে ভাল ভাবে লাগানোর জন্য। আমি কোন মতে লাগাই।
মাত্র ৬ মাসেই গাছে ফল আসায় আমি অবাক হয়ে যাই। যত্ন নিতে থাকি গাছ গুলোর।২য় বছর থেকে গাছের কাটিং দিয়ে চারা তৈরি শুরু করি। বর্তমানে ২০টি খুটিতে আমার একশ এর মত গাছ রয়েছে। এবার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার বিক্রি করেছি। এবছর আরও ৫০ হাজার টাকার মত ফল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।এছাড়া ড্রাগন গাছের কাটিং দিয়ে চারা তৈরি করে বিক্রি করছি। তা দিয়েও ভাল আয় হচ্ছে আমার।’
কামরুল আরও বলেন, ‘এবছর আমি নতুন করে দুই একর জমিতে ড্রাগণের চাষ শুরু করেছি। প্রতিদিনই ২ একজন লোক আমার ড্রাগন ক্ষেতে কাজ করছেন। অনেকে আমার দেখাদেখি ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। এই গাছে তেমন সার ঔষধ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।মোটামুটি গাছের গোরার আগাছা পরিস্কার ও মাঝে মাঝে ছত্রাক নাশক দিলেই গাছ থেকে ভাল ফল পাওয়া যায়।
কামরুলের প্রতিবেশী হাফিজুর রহমান বলেণ, ‘কামরুলের বাড়িতে বিদেশী ফল ড্রাগনের ফলন দেখে আমাদের ভাল লাগে। কামরুলের কাছ থেকে আমরা কিনে নিয়ে এই ফল খাই। এছাড়া মাঝে মাঝে কামরুল আমাদেরকে প্রতিবেশী হিসেবে খেতেও দেয়।’
কামরুল ইসলামকে দেখে ড্রাগন চাষ শুরু করা ইমতিয়াজ শেখ এবং আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কামরুলের বাড়ির উঠোনে যে পরিমান ড্রাগন হয়েছে আমরা দেখে অবাক হয়েছি। ফলের দামও অনেক ভাল। এবছর ৩‘শ থেকে ৫-৬শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। কামরুল এবং কচুয়া কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে আমরাও বানিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেছি। আসাকরি এর মাধ্যমে আমরা আর্থিকভাবে সফল হব।’
ড্রাগন চাষে ব্যয়ের বিষয়ে কামরুল বলেন, ‘৪টি গাছের জন্য একটি পিলার প্রয়োজন হয়। প্রতিটি চারা অন্য ৩৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করি। প্রতিটি পিলারের খরচ পরে ৫‘শ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত। আমার দুই একর জমিতে ৮‘শ পিলারে ৩ হাজার দুইশ চারা রয়েছে। ভূমি উন্নয়ন, পিলার, সার ও চারা সব মিলিয়ে ৮ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে।’ তবে একবার শুরু করার পরে খরচ খুবই কম। মাসে আগাছা পরিস্কার, সেচ ও ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, ‘ড্রাগন একটি বিদেশী ফল। পুষ্টিগুন, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্ব বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগ বালাইও কম। তাই চাষীরা সহজে এই ফল চাষ করতে পারে। বাগেরহাটে নিজ উদ্যোগে এবং কৃষি বিভাগের সহায়তায় কচুয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের কামরুল সহ অনেকেই বানিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। বানিজ্যিক, অবানিজ্যিক ও ছাদ কৃষি সব মিলিয়ে বাগেরহাটে ১০ একরের উপরে জমিতে ড্রাগন চাষ হয়েছে। চাষীরা ফলও পাচ্ছেন ভাল।’
খুলনা গেজেট/এনএম