Edit Content
খুলনা বাংলাদেশ
বুধবার । ২৩শে জুলাই, ২০২৫ । ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

সরকারি মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি অনিশ্চিত মিমির

লোহাগড়া প্রতিনিধি

সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন দরিদ্র পরিবারের মেয়ে মিমি আক্তার। কিন্তু অর্থাভাবে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা। তার বাবা দিনমজুর। খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে তাদের। এই বাস্তবতায় মেডিকেল কলেজে ভর্তির খরচ বহন ও পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া অসম্ভব। এখন এই নিয়ে দুশ্চিন্তা পরিবারের সবার।

মিমি আক্তারের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের নোয়াগ্রামে। তার বাবার নাম মো. আফসার উদ্দিন সরদার। মা শিউলি বেগম। তিন ভাই বোনের মধ্যে মিমি বড়। মিমি স্থানীয় নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি ও দিঘলিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। আর এবার মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। মেধাতালিকায় ২ হাজার ১১৬তম স্থান পেয়েছে মিমি।

উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে নোয়াগ্রামে তাদের বাড়ি। তাদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। ছোট এক খন্ড জমিতে তাদের পৌত্রিক বসতভিটা। সেখানে দুটি ছোট টিনের ঘর। এক ঘরে একটি কক্ষ ও বারান্দা, আরেক ঘরে একটি কক্ষ। রাতে খোলা বারান্দায় থাকেন বাবা ও মা। ঘরে থাকেন দুই বোন।

মিমি আক্তার বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হব। কিন্তু সাইন্সে পড়লে অনেক খরচ, অস্বচ্ছলতার কারণে সাইন্সে পড়তে চাইনি। তারপরও ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে স্কুল-কলেজের স্যারদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় পড়েছি। মা বলতেন পড়াশোনাই তোমাদের প্রধান হাতিয়ার। মা-বাবার বড় সন্তান আমি। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে পড়েছি। এখন মেডিকেলে ভর্তি হওয়া ও পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়া পরিবারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই ভর্তি হতে পারব কি না সেই দুশ্চিন্তায় আছি।’

আলাপকালে বাবা আফসার উদ্দিন সরদার বলেন, ‘সবদিন কাজ পাওয়া যায় না। বাড়ির মধ্যিখানে ছোট্ট ছোট্ট কিছু কাঠের গাছ ছেল সংসার চালাতি তা বিক্রি করে দিছি। এবার শীতের কাপড়ের দরকার ছেল ছাওয়াল মায়ের, তাও কিনে দিতে পারি নেই। শুনলাম, মেডিকেলে ভর্তি হতি ২৫ হাজার টাকা লাগবি। দুইডে দেবদার গাছ আছে, তা বিক্রির জন্য খরিদ্দার দেখাইছিলাম। ১২ হাজার টাকা বলিছে। ভর্তিতি তো আরও ১৩ হাজার লাগবি। ভর্তি করেও বা কিভাবে খরচ চালাব ? তাই ভর্তি করতি পারব কি না, পড়াতি পারব কি না তাই ভাবছি।’

নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোশারেফ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘মিমি খুব মেধাবী একজন মেয়ে। স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের সহযোগিতায় তার পড়াশোনা চলেছে। কিন্তু মেডিকেলে তো অনেক খরচ। সব মিলে ওই পরিবারের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। দেশের মুখ উজ্জ্বল করার মতো মেধাবি একটি মেয়ে মিমি। তার পড়াশোনার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার।’

নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি ও নড়াইল জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, অদম্য এ মেধাবি মেয়েটি যাতে মেডিকেলে পড়তে পারে সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু রিয়াদ বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো। আমার এবং আমার প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে মিমির জন্য। মিমির ভর্তি ও পড়াশোনার জন্য আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন