বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২
মাত্র চারদিনের ব্যবধানে নগরীতে দু’টি চালান আটক

জাল টাকা চক্রের টার্গেট এবার নিম্নবিত্ত!

এস এম মাহবুবুর রহমান

ঈদ বা পূজাসহ যে-কোনো উৎসব আসলেই বেড়ে যায় জাল নোট কারবারিদের দৌরাত্ম্য। পূর্বের ধারাবাহিকতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে টার্গেট করে জাল কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আগে ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট জাল করা হলেও কৌশল বদল করে ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা থেকে শুরু করে সব ধরনের নোট জাল করা হচ্ছে। জাল নোট কারবারিদের দৌরাত্ম্যে সহজ সরল সাধারণ মানুষ অনেকটা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে খুলনা মহানগরীর দু’টি থানা এলাকা থেকে কেএমপি ও গোয়েন্দা পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪০০ টাকার জাল নোটসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে খানজাহান আলী থানা পুলিশ পথের বাজার চেকপোস্ট থেকে বটিয়াঘাটার কল্যানশী গ্রামের মৃত মান্নান গোলজারের ছেলে শহিদ গোলজার (৫২) কে ২৮ হাজার টাকার জাল টাকাসহ গ্রেপ্তার করে। এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ খালিশপুর থানাধীন বঙ্গবাসী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আব্দুল্লাহ ওরফে নয়ন (২৭) কে ৫ লাখ ৭ হাজার ৪০০ জাল টাকাসহ গ্রেপ্তার করে। নয়ন ওই এলাকার মোতালেব হোসেনের ছেলে। দুটি ঘটনায় আটককৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।

২০, ৫০ ও ১০০ টাকা মূল্য মানের নোট জাল করায় সব থেকে বেশি ভীত সন্ত্রস্ত রিকশা, ইজিবাইক ও মাহিন্দ্র চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, পূজাকে টার্গেট করে বিপুল পরিমাণ নোট জাল ছাড়া হয়েছে। নানা কৌশলে এসব জাল নোট বাজারে রয়েছে।

লবণচরা এলাকার বাসিন্দা ইজিবাইক চালক রহিম মুন্সী বলেন, “সারা বছরই বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে এরা আমাদের মত নিরীহ মানুষদের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলছে। কোন যাত্রী ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট দিয়ে ভাড়া নিতে বললে আমরা ভয়ে থাকি। তবে এখন ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নোটও জাল হচ্ছে। যা আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষের ভয়ের সব থেকে বড় কারণ।”

রূপসার চাল ব্যবসায়ী খয়রুল ইসলাম খোকন বলেন, “আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা অধিক লাভের আশায় সৎ পথ ছেড়ে অসৎ পথে পা বাড়ায়। জাল নোটের কারবারও তেমন একটি পেশা।”

তিনি আরও বলেন, “বড় বড় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ওরা সুযোগ পায়না। ওদের টার্গেট এখন ছোট-খাটো ব্যবসায়িসহ নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। তবে এই চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে ব্যবসায়িসহ সকলকে সচেতন হতে হবে।”

কেএমপি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ক্রাইম এন্ড অপারেশন মোঃ রাশিদুল ইসলাম খান বলেন, “ঈদ, পূজা বা যেকোন উৎসব এলে জাল টাকা সরবরাহকারী চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে কুরবানি ঈদ আসলে গরুর হাটগুলিতে এই চক্র কৌশলে জাল নোট ঢুকিয়ে দেয়। এবারের পূজা উপলক্ষ্যে খুলনাঞ্চলে জাল কারবারিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। কেএমপি পুলিশ ইতোমধ্যে জাল নোটসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। জাল নোট ব্যবহার রোধে কেএমপি পুলিশের বিশেষ টিমের নজরদারীসহ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সব থেকে অবাক করার বিষয় এখন ৫০০, ১০০০ নোটের পাশাপাশি ৫০ ও ১০০ টাকার নোটও জাল করা হচ্ছে। যারা বিত্ত্বশালী তাদের অনেকেই কার্ডে লেনদেন করেন। যে কারণে নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করছে চক্রটি।”

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, “জাল নোট তৈরি থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত কয়েকটি ভাগে কাজ করে এই সিন্ডিকেট। প্রথমে অর্ডার অনুযায়ী জাল নোট তৈরি, দ্বিতীয় পর্যায়ে এগুলো যে অর্ডার দেয় তার কাছে পৌঁছে দেওয়া, তৃতীয় পর্যায়ে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রতি ১০০ পিস ১০০০ টাকার নোট অর্থাৎ এক লাখ টাকা তৈরিতে তাদের খরচ ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। সেই টাকা তারা পাইকারি বিক্রেতার কাছে ৯ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পরে পাইকারি বিক্রেতা প্রথম খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, প্রথম খুচরা বিক্রেতা দ্বিতীয় খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। খুচরা বিক্রেতা মাঠপর্যায়ে সেই টাকা বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষকে গছিয়ে দেয়। মাঠপর্যায়ে এ চক্রের কর্মীরা বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার মাধ্যমে এই জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে থাকে। তবে জাল নোটের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে ব্যস্ততম হাট-বাজার ও বিপণিবিতানগুলিতে। এছাড়া সারা বছরই মাদকের লেনদেন, চোরাই পণ্যের কারবার, স্বর্ণ বেচাকেনাসহ বিভিন্ন অবৈধ লেনদেনে জাল নোট চালিয়ে দেয় এ চক্রের সদস্যরা।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন