চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন রুহুল আমিন। তিনি প্লাটিনাম জুট মিলের ব্যাচিং বিভাগের বদলি শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালের ১ জুলাই বিজেএমসির ২৫টি মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় অন্য শ্রমিকদের মতো তিনিও বেকার।
তবে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য রিকশা ও ইজিবাইক চালক হয়েছেন তিনি। সংসারের আর্থিক অনটন ঘোচাতে রিকশা-ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু করোনাভাইরাস তার সংসারে অভিশাপ হিসেবে দেখা দেয়।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ। চলে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। ফের ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আট দিনের বিধিনিষেধ প্রদান করা হয়। গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
বিধিনিষেধের কারণে এখন রাস্তায় রিকশা বা ইজিবাইক নিয়ে নামতে পারছেন না রুহুল আমিন। তার আয়ের পথ প্রায় বন্ধ। ছেলেও একই পেশায়। সব মিলিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এ অবস্থায় মিলের বদলি শ্রমিক রুহুল আমিন পেশা পাল্টেও ভালো নেই।
এ প্রতিবেদককে এমনটাই জানিয়েছেন বদলি শ্রমিক রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে বদলি শ্রমিক হিসেবে প্লাটিনাম জুট মিলে যোগদান করি। দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করেছি। মিল চালু থাকাকালীন কাজ করে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু মিল বন্ধ হওয়ার পর বেকার হয়ে যাই।
রুহুল আমিন বলেন, এরপর রিকশা, ইজিবাইক চালাতাম। কিন্তু লকডাউনের কারণে গাড়ি বন্ধ। এখন তাও চালাতে পারছি না। রিকশা নামলে পুলিশ উঠিয়ে দেয়। এখন খুব কষ্টে যাচ্ছে দিন।
তিনি আরও বলেন, আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেটা মাহিন্দ্রা ও ইজিবাইকচালক। সেও ঘরে বসা। মেয়েটা এবার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তার লেখাপড়ার খরচ দিতে পারছি না। মেয়েটাকে কীভাবে লেখাপড়া করাব? আমার মতো মিলের যারা বদলি শ্রমিক ছিল, সবারই একই অবস্থা।
শুধু রুহুল আমিনই নয়, এমন অসংখ্য শ্রমিক রিকশা, ভ্যানগাড়ি, ইজিবাইক, দিনমজুরের কাজ করছেন। এখন কাজ করতে না পেরে তারা হতাশায় রয়েছেন। এমনটা বললেন স্টার জুট মিলের শ্রমিক এবং বদলি, দৈনিকভিত্তিক শ্রমিক হাজিরায় কর্মরত কর্মচারী সমন্বয়ক খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব আলতাফ হোসেন।
তিনি বলেন, বদলি শ্রমিকদের ২০১৯ সালের ৬ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। এছাড়া মজুরি কমিশনের এরিয়ার টাকা বকেয়া রয়েছে। এই টাকা কবে দেওয়া হবে, সেই তথ্য কারও কাছে নেই। শ্রমিকদের অনেকেই বেকার। দৈনিক কাজ করবে সেটাও করতে পারছে না। কেই রিকশা, কেউ ভ্যান চালাচ্ছেন। দিনমজুরের কাজও করছেন।
বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে প্লাটিনাম জুট মিলে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চিরচেনা মিল এখন অচেনা। মিল গেটে নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক মজুরি শাখা আর প্রশাসনিক ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও গোটা মিল ফাঁকা।
প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মুরাদ হোসেন বলেন, মিলে ৬ হাজার ২০০ এর বেশি বদলি শ্রমিক রয়েছেন। তাদের এরিয়ার টাকা বকেয়া রয়েছে। টাকা কে কত পাবে, সব কিছুই হিসাব করা হয়। স্থায়ী শ্রমিকদের পর বদলিদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী বলেন, মিলগুলোর স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের পর বদলি শ্রমিকদের পাওনা প্রদান শুরু হবে। তাদের হিসাব প্রস্তুত করে পাঠানো হয়েছে।