আগামী ৩০ জানুয়ারী তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার নির্বাচন। বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে শেষ হচ্ছে প্রচার প্রচারণা এবং পৌরসভা অভ্যন্তরে বন্ধ থাকবে মোটর সাইকেল চলাচল। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনের দিন শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত পৌরসভা অভ্যন্তরে সকল প্রকারের ইঞ্জিন চালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
পৌরসভার সর্বত্র চলছে উৎসবের আমেজ। শেষ মুহুর্তে প্রার্থীরা ছুটে চলেছেন ভোটারদের কাছে। প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ভোটাররা বলছেন, তারা প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী না। নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩, ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র ঝুকিপুর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীরা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় থাকলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে।
নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও প্রত্যাহারের শেষ দিনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। এখন মেয়র পদে দুইজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১২ জন ও সাধারন কাউন্সিলর পদে ৩২ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০ জানুয়ারী শনিবার তৃতীয় ধাপে খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার ৫ম বারেরমত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন উপলক্ষে পৌরসভার সর্বত্রই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রার্থীদের পোষ্টারে পোষ্ঠারে ছেয়ে গেছে পৌরসভার অলি-গলিসহ প্রধান প্রধান সড়কগুলি। শেষ মুহুর্তে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে প্রার্থীরা ছুটে চলেছেন ভোটারদের কাছে। বেলা ২ টা থেকে প্রচার মাইক বের হয়ে পৌরসভার অলি-গলিতে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে রাত ৮ টা পর্যন্ত।
প্রার্থীরা পৌরসভার বিভিন্ন হাট বাজারে গণ সংযোগের পাশাপাশি করছেন ছোট ছোট নির্বাচনী পথ সভা। নির্বাচনে মেয়র পদে দুইজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। একজন হলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর ও অপরজন হলেন সিপিবি মনোনীত কাস্তে প্রতীকের প্রার্থী এড. প্রশান্ত কুমার মন্ডল। ইতোমধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ এলাকায় এসে গন সংযোগ ও পথসভা করেছেন।
নির্বাচনে ৯টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩ নং ওয়ার্ডের সরল দীঘিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬ নং ওয়ার্ডের পাইকগাছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ৯ নং ওয়ার্ডের শিববাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রকে ঝুকি পুর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৩ নং ওয়ার্ডে সাধারন কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন তিনজন প্রার্থী। এর হলেন গত দু’বারের কাউন্সিলর গাজী আব্দুস সালাম, মোঃ গপ্ফার মোড়ল ও মোঃ আব্দুল মান্নান।
মেয়র প্রার্থী আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, তিনি এবারও নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখবেন। পাশাপাশি পৌরসভাকে মডেল পৌরসভায় রূপন্তর করবেন।
অপর প্রতিদ্বন্ধী মেয়র প্রার্থী সিপিবি মনোনীত কাস্তে প্রতীকের প্রার্থী এড. প্রশান্ত কুমার মন্ডল জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হলে দুর্ণীতি, লুটপাট মুক্ত ও পরিবেশ বান্ধব সকলের বাসযোগ্য পৌরসভা গড়ার লক্ষে কাজ করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে কিনা সে ব্যাপারে তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবি এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, আইন-শংখলার অবস্থা খুবই ভালো রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে পৌরসভা অভ্যন্তরে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়ন থাকবে। এছাড়া ৯জন ম্যাজিষ্ট্রেট ও ভোটের দিন র্যাবের ২টি টিম নির্বাচনে আইন-শৃংখলার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমানে আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। ৩, ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র ঝুকিপূর্ণ বলা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন মনে হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ হবে। ভোটাররা যাকে বেশী ভোট দিবে সেই প্রার্থীয় বিজয়ী হবেন। কেউ নির্বাচনী আচারনবিধি ভঙ্গ করার চেষ্ঠা করবেন না।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামালউদ্দীন আহম্মেদ জানিয়েছেন, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে এবং মোট ভোটার ১৪ হাজার ৪ শত ৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৭৩ জন ও মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৩ শত ৫৮ জন। নির্বাচনের পরিবেশ ও আইন-শৃংখলার পরিস্থিতি খুবই ভালো আছে, কোন সমস্যা নাই।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন