খুলনার দাকোপ উপজেলার ব্যস্ত বিভিন্ন সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে ২০টি করাতকল। এ কারণে যানবাহনের চালক, যাত্রীসহ পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আইন অমান্য করে গড়ে ওঠা করাতকলগুলো গত কয়েক বছরে উচ্ছেদ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ করাতকল (স‘মিল) প্রকাশ্যেই কার্যক্রম চালালেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কোন সাড়া নেই।
অথচ ১৯৯৮ সালের করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা অনুযায়ী, ‘করাতকল স্থাপনে বনবিভাগে আবেদন করতে হবে। জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন জায়গায় করাতকল স্থাপন করা যাবে না।’
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ঘেঁষে ২০টি করাতকল রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি করাতকলের মালিক লাইসেন্স নিয়ে চালাচ্ছে। আর আটটি লাইসেন্সবিহীন চলছে। এরমধ্যে গত বছর চারটি করাতকলের লাইসেন্সের জন্য বনবিভাগে আবেদন দেয় মালিকেরা। নীতিমালার মধ্যে না থাকায় দুইটির আবেদন বাদ রেখে বাকি দুইটির লাইসেন্স অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
চালনা বাজারের স্কুলশিক্ষক রিচার্ড অধিকারী বলেন, রাস্তা দিয়ে চলার সময় বাতাসে কাঠের গুঁড়া উড়ে চোখে এসে পড়ে।
আঁচাভূয়া এলাকার বাসিন্দা খানজাহান আলী মোল্যা বলেন, দিনরাত করাতকলে কাজ চলায় কাঠের গুঁড়া বাতাসে উড়ে চলন্ত যানবাহনের চালক ও পথচারীদের চোখে পড়ে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। সেই সঙ্গে সড়ক ঘেঁষে করাতকলগুলোর কাঠ ও গাছের গুঁড়ি রাখায় সড়কগুলোও সংকুচিত হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় অন্তত ১২ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব অবৈধ করাতকলে সুন্দরবন থেকে পাচার হয়ে আসা বিভিন্ন প্রকারের কর্তন নিষিদ্ধ গাছ চেরাই করে থাকে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবনের বনজসম্পদ। আর এসব থেকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমানের রাজস্ব। করাতকলগুলো বেশির ভাগ উপজেলার সদর চালনা বাজার ও বাজুয়া ইউনিয়নে অবস্থিত।
বনবিভাগের নীতিমালায় (সংরক্ষিত আইন) সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন সম্পর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরেও নীতিমালা ভেঙ্গে সরকার দলীয় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় লাইসেন্সবিহীন গড়ে ওঠা এসব করাতকলে দিনরাত অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রকারের কাঠ চেরাই করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায় খুলনা গেজেটকে বলেন, এসব অবৈধ করাতকলের মালিকরা বনবিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলেমিশে অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। মাঝে মধ্যে লোক দেখামাত্র প্রশাসন অভিযান চালালেও বন্ধ হয় না অবৈধ করাতকলগুলো।
বাজুয়া ইউনিয়নের ধূতিহারা গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী ও করাতকল মালিক অরেবিন্দু শীল বলেন, বনবিভাগের লাইসেন্স নিয়ে করাতকলের কার্যত্রম চালাচ্ছি। গ্রামের ভিতর হওয়ায় সরকার নিষিদ্ধ কোন প্রকার গাছ কাটায় না বলে দাবী করে তিনি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘পরিবেশের কোনো অনুমতিপত্র এ মূহুর্তে নেই। অনেক আগে ছিল কিন্তু এখন পরিবেশ অধিদপ্তরের গেলে নবায়ণ করতে চায় না। আর ওই অফিসে গেলে ছাড়পত্র না পেয়ে ফিরে আসতে হয়।’
খুলনা রেঞ্জ সামাজিক বন কর্মকর্তা মো. সোহেবুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘বনবিভাগের নীতিমালা অমান্য করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব করাতকল সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার বাহিরে স্থাপনপূর্বক সরকারি লাইসেন্স নিয়ে পরিচালনার জন্য নোটিশ করা হয়েছে।’ এছাড়া জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করছে অবৈধ ওইসব করাতকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, ‘নানা ধরণের জটিলতার কারণে অনেক সময় আমরা চাইলেও ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’
জানতে চাইলে দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্টু বিশ্বাস মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘বৈধ-অবৈধ করাতকল শনাক্ত করার জন্য বনবিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শনাক্ততের পরে অবৈধ করাতকলের জন্য জোর তাগিদ দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় করাতকল আইনের নীতিমালা না মেনে পরিবেশের ক্ষতি করলে এসকল করাতকলের লাইসেন্স বাতিল করে ‘স’মিল মালিককে আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খুলনা গেজেট / এআর / এ হোসেন