শনিবার । ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২

ক্রসফায়ার-গুমের ভয় দেখিয়ে সন্ত্রাস দমন করতে চাই না : আইজিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক 

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, গত ফ্যাসিস্ট আমলে যেই পরিমাণ কলঙ্ক আমাদের উপর চেপেছে, এটি শুধরাতে সময় লাগবে। এটা এত সহজে যাবে না। কিন্তু নির্বাচনটা আমরা করে ফেলতে পারবো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ৪৩ হাজার সেন্টারের কয়টি সেন্টার বন্ধ করবেন ? ৫০০ সেন্টার বন্ধ করবেন রি-ইলেকশন হবে। ৪২ হাজার ৫০০ সেন্টারে করে ফেলবো। ৪২ হাজারে হয়ে যাবে, ৪১ হাজারে হয়ে যাবে। নির্বাচন ঠেকাতে পারবেন না। কারণ মানুষ নির্বাচনমুখী। এটাই হচ্ছে বড় শক্তি।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে খুলনা মহানগরীর বয়রায় অবস্থিত পুলিশ লাইন্সে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আইজিপি বলেন, মানুষ নির্বাচনকে স্বাগত জানাচ্ছে। উদগ্রীব হয়ে মানুষ অপেক্ষা করছে নির্বাচনের জন্য। কাজেই এখানে যেসব বাধা-বিপত্তি আছে, বিশৃঙ্খলা আছে, অপরাধ আছে, সন্ত্রাসের আছে-আমার বিশ্বাস সমাজের কোন লোকই চায় না আর যেহেতু সবাই নির্বাচনের ব্যাপারে উদগ্রীব প্রত্যেকেই আমাদেরকে সহযোগিতা করবে। সমাজের সবচেয়ে সচেতন আপনারা (সাংবাদিক)। আপনাদের কাছ থেকে খবর পাই। আমার বিশ্বাস আমাদের হাতে যে দুই মাস সময় আছে, আমরা অবশ্যই দমন করতে পারবো।

নির্বাচন বানচালে নাশকতা বন্ধে পুলিশের পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে, সমাজের প্রতিটি মানুষ। পুলিশের একার পক্ষে বল প্রয়োগ করে এই নাশকতা শেষ করা অথবা মোকাবেলা করা সম্ভব না, যতোক্ষণ না সমাজের সবাই আমাদেরকে সাহায্য করছে। আমার বিশ্বাস আমরা পারবো।

আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, আগে পুলিশ যেই রূপে ছিল- যে কিছু হলেই একজনকে ধরে নিয়ে আটকে ফেলা। কোর্টকে জানানোর কোন প্রয়োজন ছিল না। তিনদিন আটকে রাখলাম, এক মাস আটকে রাখলাম। অথবা ক্রস ফায়ারের নামে খুন করে ফেললাম। এই যে অন্যায়, অত্যাচার করে টিকে থাকা এটাতো সবলতার লক্ষণ নয়। সবল কর্তৃপক্ষ বা সবল সরকার কি মানুষের উপর অত্যাচার করে ? অত্যাচার কে করে ? করে তো একটা দূর্বল সরকার। যার আইনি ভিত্তি নেই। যার নৈতিক শক্তি নেই। তার জন্যই দরকার হয় মানুষকে অত্যাচার করা, গুলি করা, লাঠি দিয়ে আঘাত করা, মানুষকে গুম করে ফেলা। এই সব কাজগুলো দূর্বল কর্তৃপক্ষের বৈশিষ্ট্য। আমি মনে করি- আমরা নৈতিকভাবে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা যখন ডিউটিতে যাই, পুলিশকে অনেক সময় মানুষ এক্সেপ্ট করতে পারে না। তাদের সেই স্মৃতি মনে পড়ে। যে এই পুলিশতো আমাকে গুলি করেছিল। তার জন্য অনেক সময় আক্রমণ করতে আসে। অনেক সময় আসামি ছিনিয়ে নিতে আসে। আমরা অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে এগুলো মোকাবেলা করি। আমরা এখানে গুলি করে মানুষকে মারি না, জোর করে লাঠিপেটা করি না, গ্যাস মারি না। আমরা কিন্তু এই জায়গায় টলারেন্স। আমরা সেই পুলিশ হতে চাই না গালি দিলে গুলি বরবে। সন্ত্রাসীরা জানে যে ধরা পড়লে ক্রসফায়ার, ধরা পড়লে গুম। এই ভয় দিয়ে আমি সন্ত্রাস দমন করতে চাই না। আমি রুলসের মধ্য দিয়েই ধরা পড়লে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোর্টে পাঠাবো। চার্জশিট দিব, ওইখানে বিচার হবে। এর মধ্য দিয়েই আমি সন্ত্রাস দমন করবো। আমি ক্রসফায়ার দিয়ে দমন করতে চাই না। এর জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে, ঘুমহীন কাটাতে হচ্ছে।

নির্বাচনে সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, আগে বাঁধা দিত সিল মারার কারণে। এ জন্য ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন সময়। আমরা আপনাদের বলবো ভাই আসেন, দেখেন যান কেমন ভোট হচ্ছে। আমি উল্টা করবো। আপনি বরং টায়ার্ড হয়ে যাবেন। আপনাদের প্রতি আমার শত্রুতা নেই, শত্রুতা ছিল যখন আমি অন্যায় করেছি, দেখাতে চাইনি। দেখলে লিখে দিবে পত্রিকায়। আমি চাচ্ছি না সেটা। আমাদের ভেতরে যে অভ্যাসটা গড়ে উঠেছে এক বছরে যাবে না, চেষ্টা করছি। নির্বাচন কমিশন খুবই পজেটিভ।

আইজিপি বলেন, পুলিশের সবগুলো ইউনিটি আমাদের প্রশিক্ষণ চলছে। নির্বাচনে আগের চেয়ে এবার দায়িত্ব পালন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চাচ্ছে এই নির্বাচন সবচেয়ে ফ্রি, ফেয়ার এবং উৎসবমুখর হবে। এ জন্য আমাদের দায়িত্বটা আমরা যেন সবচেয়ে ভালোভাবে পালন করতে পারি, সে জন্য আমরা নিজেরা প্রশিক্ষিত হচ্ছি। গত ৩টি নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক আছে, নানা সমালোচনা আছে। সেইসব সমালোচনা থেকে আমরা যেন বেরিয়ে আসতে পারি। সকলের সহায়তায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে একটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা যেন ভূমিকা পালন করতে পারি। সেই বিষয় সকলকে মনে করিয়ে দিতে সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই খুবই উজ্জীবিত। ইনশাআল্লাহ- নির্বাচনে আমাদের উপর যে দায়িত্ব এসেছে, সেটা পালন করতে পারবো।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন