শিশু-কিশোরদের বিষন্নতা ও আমাদের করণীয়

প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী

শিশু কিশোরদের কথা মনে হলে- আমাদের হৃদয়ের মানসপটে যে ছবিটি ভেসে আসে তা হলো হাসি-খুশি, প্রাণোচ্ছল মুখ। শিশু-কিশোররা প্রাণবন্ত, উচ্ছ্বসিত চেতনা তাদের প্রাত্যহিক জীবন ধারা। কিন্তু এর বিপরীত অবস্থা অবহেলার নয়। কখনো কখনো শিশুদের মধ্যে কারো কারোর হৃদয় দুঃখ ভারাক্রান্ত, কোন কাজে তারা মন বসাতে পারে না। আমরা দেখি তারাও বয়স্কদের মত গুরুতর বিষন্নতায় শিকার যা তাদের স্বাভাবিক জীবন ধারা প্রবহমান পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখা দেয়। ডিএসএম-৪ অনুযায়ী শিশুদের বিষন্নতাকে বয়স্কদের বিষন্নতার অধীনে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।

শিশু-কিশোরদের বিষন্নতার লক্ষণ : সাধারণত সাত থেকে সতেরো বছর বয়সের শিশুদের বিষন্নতার লক্ষণ অনেকটা বয়স্কদের মতই হয়ে থাকে। শিশুদের বিষন্নতার লক্ষণ সমূহ হলো-

(১) কোন কিছুতে তারা যেন আনন্দের অনুভূতি খুঁজে পায় না।
(২) সহজেই তারা কোন কাজে ক্লান্তি বোধ করে,
(৩) তাদের মনোযোগ সমস্যা বিদ্যমান।
(৪) তাদের বেশির ভাগই অপরাধ বোধে আক্রান্ত।
(৫) কোন ঘটনার নেতিবাচক দিকে তাদের মনোযোগ বেশি।
(৬) বিষন্ন শিশু কিশোরদের অনেকের মধ্যে আত্মহত্যা চিন্তা বিদ্যমান।
(৭) দোষ আরোপণের সংস্কৃতিতে তারা আবদ্ধ।
(৮) তাদের মধ্যে নীচু মাত্রার আত্ম মর্যাদাবোধ প্রতীয়মান।

শিশু-কিশোরদের বিষন্নতার কারণ :

(১) বংশগত বা জিনসংক্রান্ত কারণ : পিতা- মাতার মধ্যে বিষন্নতা থাকলে তাহা সন্তানদের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

(২) ত্রুটিপূর্ণ পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ : পিতামাতার সাথে শিশুর সম্পর্ক গোলযোগপূর্ণ হলে তাহা শিশুর মধ্যে বিষন্নতার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।

(৩) সামাজিক দক্ষতার অভাব : শিশুর মধ্যে সামাজিক দক্ষতার অভাব থাকলে বিষন্নতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে।

(৪) পিতা- মাতার তিরস্কার ও সমালোচনা : পিতা- মাতা শিশুকে বিভিন্ন কাজে তিরস্কার ও সমালোচনা করলে, শিশুর সক্ষমতায় সন্দেহ সৃষ্টি হয় এবং আত্মাবমননার অনুভূতি তৈরি হয় যা শিশু-কিশোরদের মধ্যে বিষন্নতার অনুভূতি তৈরি করতে পরে।

(৫) আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক : বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শিশুর সম্পর্ক আনন্দদায়ক না হলে, শিশুর মধ্যে নেতিবাচক আত্মধারণা সৃষ্টি হয় যা শিশু-কিশোরদের মনের মধ্যে বিষন্নতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে।

শিশু-কিশোরদের বিষন্নতা দূর করার উপায় :

(১) আন্তঃব্যক্তিক চিকিৎসা : এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে সমবয়সীদের পীড়ন, পিতা-মাতা হতে বিচ্ছিন্নতা, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সমস্যাকে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়।

(২) শিশুর জ্ঞানীয় নেতিবাচক মনোভাবের পরিবর্তন আনায়ন : অন্যের দোষ ধরার প্রবণতা, নিজেকে অযোগ্য মনে করা বা নেতিবাচক উদ্দীপকের দিকে মনোযোগ দেওয়ার প্রবণতাকে দূর করতে বিশেষ জ্ঞানীয় কাঠামোতে পরিবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে শিশুর বিষণ্নতা দূর করা সম্ভব।

(৩) শিশুর পিতামাতার নৈরাশ্যবাদ ধারণা দূরীকরণ : শিশুর প্রতি পিতামাতার বিরূপ মনোভাব দূরীকরণের মাধ্যমে শিশুকে আনন্দঘন পরিবেশে প্রতিপালনের সুযোগ দানের মাধ্যমে বিষন্নতা দূর করা সম্ভব।

আজকের শিশু-কিশোরা আগামী দিনের পথ প্রদর্শক। তাই তাদের সকল প্রকার কলুষমুক্ত জীবন ধারায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে জাতির সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের সকলের দায়িত্ব। তাই আপনার সন্তানের কোন প্রকার মানসিক সমস্যা দেখা দিলে, দেরি না একজন দক্ষ মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ গ্রহণপূর্বক শিশুকে স্বাভাবিক জীবন ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

লেখক : সাইকোলজিস্ট ও সাইকোথেরাপিষ্ট।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন