দেশের সাদা সোনা খ্যাত রপ্তানীযোগ্য গলদা ও বাগদা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশের ঘটনা সাতক্ষীরায় যেন দিনদিন বেড়েই চলেছে। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশের সাথে জড়িত অসাধু মাছ ব্যবসায়ীদের। অপদ্রব্য পুশ বন্ধে মাঝেমধ্যে প্রশাসনের অভিযান পরিচালিত হলেও, বেশিরভাগ সময়ে অপদ্রব্য পুশকৃত গলদা ও বাগদা চিংড়ির চালান প্রশাসনের নাগাল টপকে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন রপ্তানিকারত প্রতিষ্ঠান মাছ কোম্পানীতে।
দেশের বিভিন্ন রপ্তানিকারত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব মাছ চলে যাচ্ছে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর সেখানে যেয়ে আমাদের দেশের অনেক মাছে ধরা পড়ছে ম্যালাকাউট গ্রিন নামের একটি পদার্থ। ম্যালাকাউট গ্রিন এক ধরনের টেক্সটাইল ডাই। যা মাছের ক্ষেত্রে অ্যান্টি প্রোটোজোয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাস ওষুধ হিসাবে কাজ করে। আমাদের দেশ থেকে রপ্তানী হওয়া কোন মাছে এই ম্যালাকাউট গ্রিন এর উপস্থিতিতে পেলে তা ফেরত আসছে। এত করে নিজেদের অজান্তেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন মাছ ব্যবসায়িরা। এভাবে পথে বসার উপক্রম হয়েছে দেশের কয়েকটি রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানের মালিককে। এই করাণে সম্প্রতি সাতক্ষীরার একজন ব্যবসায়ির ইউরোপ থেকে চার কন্টিনার মাছ দেশে ফেরত এসেছে। এতে করে দিনদিন বিশ^বাজারে সুনাম ও ঐতিহ্য হারাচ্ছে সাতক্ষীরার চিংড়ি। মাঝেমধ্যে রপ্তানীতে পড়ছে নিষেধাজ্ঞা। ব্যাপক হারে হচ্ছে চিংড়ির দরপতন। জেলার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, সদর, তালা, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ সক্রিয় চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করা অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে তারা এই অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে যানা যায়, সিরিঞ্জ ও সুঁইয়ের মাধ্যমে রপ্তানীযোগ্য চিংড়িতে জেলি, সাগুদানা, ফিটকিরি’র মিশ্রন, পানিতে ভেজানো চিড়া ও ভাতের মাড়ের মিশ্রন ইনজেক্ট করে চিংড়ির ওজন ও সাইজ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। খুচরা ক্রেতারা ঘের বা স্থানীয় আড়ত থেকে চিংড়ি বা গলদা কিনে বাড়িতে নিয়ে পরিবারের সবাই মিলে তাতে অপদ্রব্য পুশ করছে। পরে গ্রেড অনুসাওে পুশকৃত ওই চিংড়ি চড়া দামে মাছ কোম্পানীতে বিক্রি করে অর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে বিশ^বাজারের পাশাপাশি দেশীয় বাজারেও প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা।
সম্প্রতি দেবহাটার পারুলিয়া চিংড়ি বণিক সমিতির নের্তৃবৃন্দ রপ্তানীযোগ্য বাগদা ও গলদা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। অপদ্রব্য পুশকালে কোন অসাধু ব্যবসায়ী হাতেনাতে আটক হলে জরিমানার পাশাপাশি তাদের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত এক সপ্তাহে কয়েকজন অসাধু চিংড়ি ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়েছে। তাদের তৎপরতায় বর্তমানে দেবহাটার পারুলিয়াতে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ অনেকটা কমেছে। কিন্তু জেলার অন্যান্য এলাকায় এই অবৈধ কাজ এখনো অব্যহত আছে বলে জানা গেছে। এদিকে পারুলিয়াতে অপদ্রব্য পুশ প্রায় বন্ধ হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বর্তমানে আশপাশের এলাকা গুলোতে গোপনে রপ্তানীযোগ্য চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশের আস্তানা গেড়েছেন।
পারুলিয়া চিংড়ি বণিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর বলেন, আমাদের তৎপরতায় পারুলিয়াতে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করা অনেকটা কমেছে। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন আশপাশের এলাকা থেকে অপদ্রব্য পুশ করে তারপর পারুলিয়াসহ বিভিন্ন মৎস্য সেডে এনে বিক্রি করছেন। তিনি আরও বলেন, উপজেলার গাজীরহাট মৎস্য সেড, শশাডাঙ্গা মৎস্য সেড এবং আশাশুনির, মহিষকুড়, হলদিপোতা ব্রীজ এলাকা, বদরতলা মৎস্য সেড ও ব্যাংদহা এলাকা এখন অসাধু ব্যবসায়ীদের নিরাপদ স্থানে পরিনত হয়েছে। এসব স্থান থেকে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি ও রপ্তানী করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে অপদ্রব্য পুশ কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এ
কইসাথে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ বন্ধে গাজীরহাট, শশাডাঙ্গা, বদরতলা ও ব্যাংদহা এলাকায় অভিযান পরিচালনাসহ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্কক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান জানান, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে সাতক্ষীরায় ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৬০ হাজার ঘেরে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার টন এবং গলদা চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার টন। কিন্তুতে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ি চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করায় এর সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, অবৈধ পুশ বন্ধে আমরা এর ক্ষতিকর বিষয় তুলে ধরে জেলার ঘের মালিক, চাষী ও ব্যবসায়িদেরকে বিভিন্নভাবে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুশকৃত মাছ জব্দ করে তা বিনষ্ট করা হয়েছে। সাতক্ষীরার চিংড়ির সুনাম রক্ষায় আমাদের এধরনের কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/কেডি