নগরীর মশিয়ালী এলাকায় ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় প্রতিপক্ষের হামলায় শেখ জিহাদ নিহত হয়। ওই হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে রেজাউল শেখ ওরফে ক্যাবলা। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক মো: আল আমিনের নিকট এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে সে। মশিয়ালী পূর্বপাড়া এলাকার মৃত আজিজ শেখের ছেলে সে। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক একেএম মাহফুজুল হক জানান, ট্রিপল মার্ডারের কয়েকদিন আগে ওই এলাকার রফিকুল ইসলাম ওরফে গুরুর ছেলে তুহিনের সাথে জাফরিনের মারামারির ঘটনা ঘটে। মূলত: ওই ঘটনার জের ধরে এ ট্রিপল মার্ডারের সূত্রপাত হয়। পরে প্রতিপক্ষ গ্রুপ জাফরিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে। এ ব্যাপারে খানজাহান আলী থানায় ওই এলাকার দোকানী তুহিন ও মিটুলসহ কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করে জাফরিন। এ ঘটনার কয়েকদিন পর মিটুলের দোকানও চুরি হয়। তখন স্থানীয়রা জাফরিনকে সন্দেহ করে।
২০২০ সালের ১৬ জুলাই বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মশিয়ালী পূর্বপাড়া এলাকার মুজিবর আলীম জুট মিলের পাশে জাকারিয়াদের নির্মিত একটি বাড়ি থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়। এ ঘটনায়ও তারা জাকারিয়া ও জাফরিনদের সন্দেহ করতে থাকে। ওই দিন সন্ধ্যায় এলাকার প্রায় আড়াইশ’ মানুষ একত্রিত হয়ে মিল্টন, জিহাদ ও জাকারিয়াদের বাড়ি ভাংচুর এবং অগ্নি সংযোগ করে। পরে বিক্ষুদ্ব জনতা জাফরিনের বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করতে গেলে জাকারিয়া গ্যং একত্রিত হয়ে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। তাদের গুলিতে ওই এলাকার তিনজন নিহত হয়। এরপর উত্তেজনা বাড়তে থাকলে জাকারিয়া পরিবারের সদস্যরা পলাতে থাকে। কিন্তু জিহাদ পলাতে পারেনি। তাকে ধরে ফেলে বিক্ষুদ্ব জনতা। গণপিটুনী ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক আহত হয় জিহাদ। উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় খানজাহান আলী থানার এসআই মো: হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা তিনশ’ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গেল বছরের ১৮ নভেম্বর মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ পরিদর্শক একেএম মাহফুজুল হকের উপর তদন্তভার ন্যাস্ত হয়। তিনি ওই দিনের অগ্নিসংযোগ ও ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ এবং স্থিরচিত্র সংগ্রহ করেন। আগের ঘটনার বিবরণ ও মামলার তথ্য সংগ্রহ করেন। এ সকল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সোমবার দুপুরে নগরীর ডাকবাংলা মোড় থেকে রেজাউল শেখ ওরফে ক্যাবলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার দিনে তার ভূমিকা ও জড়িতদের অনেকের নাম সে পুলিশকে জানিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছেনা। মূলত: অনুমানের ওপর ভিত্তি করে মশিয়ালীর এ ট্রিপল ও জিহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।