খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২ মে, ২০২৪

Breaking News

  ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের

সামেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা অব্যাহত রাখতে তৎপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাসিস মেশিন নষ্ট হওয়ায় মৃত্যু ঝুঁকিতে শতাধিক কিডনি রোগী। বুধবার থেকে এ হাসপাতালের পূর্বের মত ডায়ালাইসিস সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিডনি রোগীরা। নামমাত্র ২০০ টাকা ফি দিয়ে গরীব দুস্থ সাধারণ মানুষ ডায়ালাইসিস সেবা পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কিডনি রোগীদের ডায়ালাসিস সেবা একদিনের বেশি দেওয়া সম্ভব হবে না এমন নির্দেশনার মুখে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন শতাধিক রোগী।

এ সংক্রান্ত একটি খবর বুধবার খুলনা গেজেট অনলাইনসহ কয়েকটি মিডিয়ায় প্রকাশ হলে সকাল থেকে সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন।

সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সাথে কথা বলেন এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি মন্ত্রীকে একটি ডিও লেটারও প্রদান করেন। মন্ত্রী নিজেই এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।

জহুরুল কবীর জানান, আমার স্ত্রীকে সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করাতে হয়। জমিজমা সহায়-সম্পদ বিক্রি করে কিডনি আক্রান্ত স্ত্রীকে চিকিৎসা করিয়ে আসছি। ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা কারনোর মতো সামর্থ আমার নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সপ্তাহে তিন সেশনে ১২ঘন্টা করে নেওয়া কথা থাকলেও মেশিন স্বল্পতা ও রোগীর চাপের কারণে দুটি সেশনের ৪ঘন্টা করে সপ্তাহে ৮ ঘণ্টা করে নেওয়া হয়। তারপরও দেওয়া হয় ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। এমতাবস্থায় মঙ্গলবার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনে জানানো হয়েছে বুধবার থেকে সপ্তাহে একবার কিডনি আক্রান্ত রোগিদের ডায়ালাসিস করানো হবে। সপ্তাহে ৪ঘন্টা নেওয়া হলে অধিকাংশ রোগী টিকবে না। খবরটি শুনে তিনি ডুকরে কেঁদেছেন। স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য তিনি জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

মহিউদ্দিন, ব্রোজেন, জয়নালসহ কয়েকজন রোগী বলেন, শতরোগীর জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে বন্ধপ্রায় সামেক হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট। মঙ্গলবার ডায়ালাইসিস ইউনিট ইনচার্জ নমিতা রানী রোগীদের ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন বুধবার থেকে সপ্তাহে দু’টির পরিবর্তে একটি ডায়ালাইসিস করানো হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৯টি মেশিনের মধ্যে মাত্র দু’টি জোড়াতালি দিয়ে চলছে। তাই সপ্তাহে আর দুই অথবা তিনবার ডায়ালাইসিস দেওয়া হবে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার শীতল চৌধুরী জানান, অদক্ষ ব্যক্তি দ্বারা মেশিন পরিচালনা করায় সব মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মোট ডায়ালাইসিস মেশিন ১৯টি যার মধ্যে বর্তমানে তিনটি সচল আছে।

নষ্ট মেশিনগুলো মেরামত প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটাতো দীর্ঘ প্রসেসের ব্যাপার মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। মেরামতের জন্য কয়েক দফায় টেকনিশিয়ানও এসেছে কিন্তু খুচরা যন্ত্রাংশ না পাওয়া যাওয়ায় ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দ্রুত মেরামত করার চেষ্টা করছি।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ডাক্তার রুহুল কুদ্দুস জানান, সম্ভবত ২০১৮ সালের শেষের দিকে ১৯ টি ডায়ালাইসিস মেশিন নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা চালু করা হয়। বিভিন্ন সময়ে মেশিন খারাপ হলে তা মেরামত করে ডায়ালিসিস সেবা চালু রাখা হয়। কিন্তু বর্তমানে তিনটি মেশিন ছাড়া বাকিগুলো সব অকেজো হয়ে পড়েছে। কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা কমিয়ে দিলে তাদের কৃটিনিন বেড়ে গিয়ে রোগী ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন।

তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস সেবা চালু রাখার জন্য আমরা নতুন ত্রিশটা মেশিন আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। খুব শিগ্রি হয়তো আবার নতুন করে ডায়ালাইসিস সেবা চালু করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, প্রলংকারী ঘুর্ণিঝড় আয়লার পর ২০১০ সালের ২৩ জুলাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে শ্যামনগরে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় সাতক্ষীরার মেডিকেল কলেজ স্থাপনের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পরের বছর ২০১১ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হকের প্রচেষ্ঠায় সাতক্ষীরায় ভাড়া বাড়িতে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু করা হয়। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে শুরু করে। বিগত করোনা মহামারীর সময় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বহু মানুষ এখানে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে। এমনকি ঠিকানা পরিবর্তন করে পার্শ্ববতী দেশের রোগীরাও এখানে এসে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে সামেক হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মান প্রশ্নের সম্মুখিন হয়। যারই ধারাবাহিকতায় কিডনি রোগীদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ডায়ালাসিস মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের চিকিৎসা সেবার মনোন্নয়নে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতাল থেকে সাধারণ মানুষ যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা পেতে পারে সে ব্যাপারে সবধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ডায়ালেসিস মেশিনগুলো নষ্ট হওয়াসহ যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো আমরা সাতক্ষীরার ৫ জন সংসদ সদস্যসহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সম্মিলিতভাবে সমাধান করবো।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!