খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকচাপায় নিহত ৩, আহত আরও ২ জন
  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

খালের মুখ বন্ধ, পাইকগাছায় কাজে আসবে না কপোতাক্ষ খনন

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য নদী খননের জন্য এক বিঘা জমি দিছি। কোন কষ্ট পাইনি। ভাবছি, এক বিঘা জমিতে আর কী হবে। প্রতিবছর তো আর পানিতে ডুববো না। ফসল করে তো বাঁচতো পারবো। নদী খননে তো কাজ হচ্ছে না। পানি নামার খালগুলো নষ্ট হলো। আমাদের ফসলতো হবেই না। পানিতে ডুবে আর না খেয়ে মরার জোগার হবে।’ কষ্ট, ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে এভাবেই কথা বলছিলেন কপোতাক্ষ পাড়ের নেয়ামত আলী মোড়ল (৭০)। তিনি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বাকারচর গ্রামের বাসিন্দা।

শুধু নেয়ামত মোড়লই নন, রাড়ুলী ও বাকারচরসহ আশপাশ এলাকার ১০ হাজারের বেশী কৃষক পরিবারের চোখে-মুখে এখন ঘোর অমাবশ্যা। প্রায় দুই যুগ পর মরা কপোতাক্ষ নদ খননে তারা যে আশার আলো দেখছিলেন, তা ফের অন্ধকারে রূপ নিয়েছে। কপোতাক্ষ নদ সংযুক্ত বিলের খালগুলো খনন না করা, উল্টো মুখ বন্ধ করে মাটি ফেলায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন এসব শ্রমজীবী মানুষগুলো।

স্থানীয়রা জানান, কপোতাক্ষ নদের প্রবাহ না থাকায় প্রায় দুই দশক আগে রাড়ুলী ইউনিয়নের বাকারচর, কষ্টিপাড়া, ভাটরাসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা শুরু হয়। ওই এলাকার প্রায় আড়াই হাজার বিঘা জমিতে আমন ও বোরো ধান তিন ধরণের ফসলের আবাদ হতো। এখন শুস্ক মৌসুমে বোরো আবাদ হলেও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় ২০২০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পে (২য় পর্যায়)’ খনন শুরু হওয়ায় আশায় বুক বাধেন কৃষিজীবী মানুষেরা। এ প্রকল্পে কপোতাক্ষ নদের উজান অংশে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর হতে মনিরামপুর উপজেলার চাকলা ব্রিজ পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার ও নীচের অংশে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়া হতে কয়রা উপজেলার আমাদী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার নদী খনন, তীর প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন, নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত, কপোতাক্ষ নদের দুই তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে।

 

 

এছাড়া প্রকল্পটিতে পলি ব্যবস্থাপনা, টাইডাল প্রিজম বৃদ্ধি ও নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৩৫ বছর মেয়াদী জোয়ার-ভাটা নদী ব্যবস্থাপনা (টিআরএম) কার্যক্রম চালানোর উদ্যোগ রয়েছে। ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা। তবে নদটি খনন হলেও পাইকগাছা রাডুলি ইউনিয়নসহ আশাপাশের সংযুক্ত খালগুলো উম্মুক্ত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছন স্থানীয়রা। এক সময় পাম্পের সাহায্যে পানি অপসারণ করে কৃষিকাজ করলেও খাল ও খালের মুখে চওড়া বাঁধ থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েও কোন সুফল পাননি স্থানীয়রা। ফলে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ খননের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বাকা গ্রামের আহাদ আলী গোলদার (৫৮) বলেন, এক সময়ে খাল দিয়ে বিলের পানি নদীতে নামতো। এখন নদী খনন হলেও খালের মুখ বন্ধ। আমাদের বিপদের শেষ নেই। খননের সময় কেউ আমাদের গায়ে লাগায়নি।

গৃহবধূ রোজিনা বেগম (২৮) বলেন, বৃষ্টির সময় আবার ডুবতে হবে। খালগুলো খোলা থাকলে আমরা ধান-পান কইরে বাঁচতে পারতাম। পানির নোনা কম হতো।

বাকার চরের নূর ইসলাম গাজী (৩৭) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা হাজার কৃষক মরতে বসেছি। কপোতাক্ষ খননে বাঁচার স্বপ্ন দেখছিলাম। এখনতো দেখি আরো বিপদ। নদও চালু হয়নি। আবার খালের মুখে ৩০-৪০ ফুট বাঁধ! পানিতে না খেয়ে মরতে হবে। খননের সময় আমরা কতো বলেছি; কেউ কথা শোনেনি। এবার ফসলের সাথে মানুষও মরবে।’

রাড়ুলি ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের দৌড়তো উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত। কতোপাক্ষ খনন হলেও ভিতরের সংযুক্ত খাল খনন হয়নি। খালের মুখ আঁটকে বাঁধ রয়েছে। শুনছি বাজেট নেই। কিন্তু খাল খনন ও বাঁধমুক্ত না হলে কোন লাভ হবে না। হাজার হাজার বিঘা জমিতে বছরে দুই-তিনবার ধান হতো; ফসল হতো। বিলের পানি নদীতে নামার ব্যবস্থা না করলে কপোতাক্ষ খননে কোন কাজ হবে না। ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট নাই কিছু করা যাবে’

ছয় বার নির্বাচিত প্রবীণ এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের চারিপাশে নদী। কতোপাক্ষ খনন কাজে লাগাতে হলে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ফসল-মাছ হবে। না হলে সরকারের টাকার অপচয় হবে। আমরা এ অবস্থা থেকে বাঁচতে চাই।’

প্রকল্পের বাস্তবায়নের দায়িত্বে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি কপোতাক্ষ নদ সযুক্ত খালগুলো খননে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা ভুক্তভোগীরা সরাসরি আমাদের দৃষ্টিতে আনলে সমাধান হতো। তারপরও বাকাচর ও আশপাশের খালগুলো যাতে দ্রুত নদী সংযুক্ত করা যায়, সে ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!