খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৭ মে, ২০২৪

Breaking News

  তৃতীয় টি-টুয়েন্টি : বাংলাদেশের দেয়া ১৬৬ টার্গেটে ব্যাট করছে জিম্বাবুয়ে
  হজ ভিসা ইস্যুর মেয়াদ ১১ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের : হাব
  টাঙ্গাইলের কা‌লিহাতী‌তে কাভার্ডভ্যান-ট্রা‌ক সংঘ‌র্ষে চালক নিহত

লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষের কপালে ভাঁজ

সাজ্জাদুল ইসলাম

কাক ডাকা ভোরের শহুরে পরিবেশ, সাথে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া। আর এই সাত সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সী নারী, পুরুষ আসছেন নগরীর সাত রাস্তার মোড়ে। কারো হাতে কোঁদাল, কারো হাতে রং করার বালতি, কারো হাতে রাজমিস্ত্রীর যন্ত্রপাতি, আবার কেউ আসছেন খালি হাতেই। সকলেই এই মোড়ে ভিড় করছেন কাজের আশায়।

প্রতিদিন সকালে এই মোড়ে জড়ো হয় প্রায় এক দেড় শো নারী-পুরুষ শ্রমিক। যারা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার বিনিময়ে সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শ্রম বিক্রি করেন। রং মিস্ত্রী, মাটি কাটার কাজ, রাজমিস্ত্রী, টাইলস মিস্ত্রীসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমিকদের অলিখিত বাজার যেন এই সাত রাস্তার মোড়।

দেশের করোনা মহামারি সংকটের বিরূপ প্রভাব পড়েছে খেটে খাওয়া এই মানুষ গুলির উপরেও। চলমান করোনা সংক্রামনের উর্ধগতি ও লকডাউনের কারণে কাজের সংকট দেখা দেওয়ায় নানা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তারা।

শহরের মতি মসজিদ এলাকার মাঝবয়সী শাহজাহান মিয়া ৫০০ টাকা মজুরিতে দিন মজুরের কাজ করেন। বলছিলেন, চলতি মাসের গত সপ্তাহে মাত্র দুদিন কাজ পেয়েছেন। লকডাউনের কারণে কাজ কমেছে, আজকেও কাজ পাবেন কিনা জানেন না তিনি।

সাত রাস্তার মোড়ের গোল চত্বরে সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে বসে আছেন রং মিস্ত্রী জাকির ও তার সহকারী মহেশ। রং মিস্ত্রী পেশায় তিনি ত্রিশ বছর। গত মাসে ২০ দিন কাজ পেয়েছেন, আর লকডাউন এর কারণে এ মাসের দশ দিনে কাজ পেয়েছেন মাত্র ২দিন।

তিনি বলছিলেন লকডাউনের কারনে লোকজন কাজ বন্ধ করে দেয়, অতি প্রয়োজনীয় না হলে কেউই এই সময়ে কাজ করায় না।

অনেকে বলছেন, লকডাউনে কাজ কম থাকায় এবং শ্রমিক বেশি থাকায় কাজের রেট অনেক কমে গেছে। যারা একসময় ৬০০ টাকা হাজিরায় কাজ করতো তারা এখন লকডাউনে কাজ না থাকায় ৪০০ টাকায়ও কাজ করছেন।

বাপ্পী নামের এক যুবকের সাথে কথা হয় । তিনি জানান, তিন বছর থেকে দিন মজুর হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ৬০০ টাকা হাজিরায় কাজ করতেন। করোনার কারনে কাজ নাই, গত সপ্তাহে কাজ পেয়েছেন মাত্র একদিন, তাই লকডাউনের মধ্যে মজুরি কম হলেও কাজে যাবেন তিনি।

এদিকে শ্রমের মূল্য কমে যাওয়ায় পুরুষ শ্রমিকরা কোন রকমে যে কোনো কাজ পেলেও নারী শ্রমিকদের পড়তে হচ্ছে আরো বিপাকে। সেই সাথে পুরুষ শ্রমিকরা কম পারিশ্রমিকে কাজ করায় কাজ পাচ্ছেন না নারী শ্রমিকরা।

বাগমারা থেকে সাত রাস্তার মোড়ে কাজের জন্য এসেছেন ময়না বেগম। গত পাঁচ বছর পূর্বে স্বামী মারা গেছে তার। দশ বছরের মেয়ের মুখে খাবার জোগান দিতে রাজমিস্ত্রীর সাথে সিলিং কোপানোর কাজ করেন তিনি। করোনার লকডাউনের কারণে কাজ কম। আর মহামারীর কারণে অনেকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। বলছিলেন, গত সপ্তাহে তিনদিন কাজ করেছেন। আর কাজ কম থাকায় পুরুষ শ্রমিকরা অল্প হাজিরায়ও কাজ করছে। যে কারণে তার মতো অনেক নারী শ্রমিকই কাজ পাচ্ছেনা।

এই লকডাউনে কোনো রকমে দু একদিন কাজ পেলেও সামনের ১৪ তারিখ থেকে কঠোর লকডাউনে কিভাবে চলবে সংসার সে চিন্তায় কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না অনেকেই।

অনেকের অভিযোগ ছিলো, লকডাউন ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে। কেউ কেউ প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন করেন, লকডাউন দিলে তাদের মত দিনমজুররা বাঁচবে কি ভাবে, খাবে কি?

এদের মধ্যে ৩০ নং ওয়ার্ডের জাহানারা বেগম বলছিলেন লকডাউনে কাজ কাম বন্ধ থাকে, ঘর থেকে বের হতে দেয়না, আবার সরকার যে ত্রাণ দেয় সেটাও গরিবরা পায়না, চলে যায় নেতা আর তাদের চামচাদের পকেটে।

রূপসা ভেড়িবাধ এলাকা থেকে আসা ৫৫ বছর বয়সী রহিমা বিবি। চেহারায় চিন্তার ছাপ নিয়ে বলছিলেন, অনেক বছর থেকে এই কাজই করছেন তিনি। তবে বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় এখন কেউ কাজে নিতে চায়না তাকে, যাও কাজ পায় তাও এই লকডাউনে পাচ্ছে না। গত বছরে লকডাউনে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে তার, সে সময় নামেমাত্র ত্রাণ পেয়ে ছিলেন তিনি। সামনের লকডাউনে কিভাবে দিন যাবে সে চিন্তাই করছেন এখন।

বেলা বাড়তে বাড়তে ঘড়ির কাটায় সকাল নয়টা ত্রিশ মিনিট। সাজাহান মিয়া ভাতের ব্যগ আর কোঁদাল ঘাড়ে শুষ্ক মুখে, কপালে চিন্তার ছাপ নিয়ে বাসার পথে পা বাড়ালেন,আজও কাজের আশায় খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন তিনি।

এমন অনেক রহিমা বিবি ও শাজাহান মিয়াদের সংসার চলে এই শ্রমের হাটে এসে শ্রম বিক্রির অর্থ দিয়েই। তবে চলমান করোনা সংকট ও লকডাউনের কারণে চিন্তিত তারা। সামনে কঠোর লকডাউন দিলে কিভাবে কাটবে জীবন? এটাই যেন এখন তাদের ভাবনার একমাত্র বিষয়। করোনার সংকটের চেয়ে লকডাউনের মাঝে বেঁচে থাকাটাই যেনো তাদের মূল সংকট। তাদের ভাষ্য এমন যেনো করোনাকে তারা ভয় পায়না, ভয় পায় লকডাউনকে।

খুলনা গেজেট/ এস আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!