খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ
বক্ষ রোগের চিকিৎসা নেই, নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতাল : রোগী ৩৮, নার্স ৯৩

একরামুল হোসেন লিপু

খানজাহান আলী থানার ফুলবাড়িগেট মীরেরডাঙ্গায় অবস্থিত খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। হাসপাতালটি পদ্মার এপারের ২১ টি জেলার যক্ষ্মা বা টিবি রোগীদের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল। নামকরণ বক্ষব্যাধি হলেও হাসপাতালটিতে বক্ষ সংক্রান্ত কোন রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয় না। শুধুমাত্র অন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত যক্ষ্মা বা টিবি রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই মাত্র ৪ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।

হাসপাতালটিতে রোগী রয়েছেন ৩৮ জন। অথচ সেবিকা বা নার্স রয়েছেন ৯৩ জন। পরিসংখ্যান দেখে অনেকেই ভাবতে পারেন হাসপাতালে রোগীরা কতইনা সেবা পাচ্ছে। বাস্তবতা ভিন্ন। রোগী এবং কাজের চাপ কম থাকায়, অলস সময় পার করেন সেবিকারা। কাজ ও ঝামেলা কম থাকায় এই  হাসপাতালে পোস্টিং পাওয়া নার্সরা অন্য কোন হাসপাতালে যেতে চান না। ঝামেলামুক্ত, নিরিবিলি সময় পার করার জন্য বক্ষব্যাধি হাসপাতাল নার্সদের পছন্দের কর্মস্থল।

নানা সংকট

হাসপাতালে নার্স ছাড়া অন্য সব পদে রয়েছেন জনবল সংকট। হাসপাতালে নার্সিং ৯৬ পদের বিপরীতে কর্তব্যরত রয়েছেন ৯৩ জন। এদের মধ্যে নার্সিং সুপারভাইজার ৬ জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৮০ জন, স্টাফ নার্স ৭ জন। মাত্র ৩ জন স্টাফ নার্সের পদ শূন্য রয়েছে।

এদিকে হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, সহকারীদের ১৮৪ মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরীতে জনবল আছে মাত্র ১২২ জন। শূন্য রয়েছে ৬২ টি পদ। বিভাগীয় এ হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে নেই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। শূন্য রয়েছে ২ জন সিনিয়র কনসালটেনন্ট, ২ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ১ জন প্যাথলজিস্ট, ১ জন রেডিওলজিস্ট, ১৬ জন সহকারী সেবক/ সেবিকা, ১৬ জন অফিস সহায়ক, ৩ জন কুকার, ১২ জন পরিচ্ছন্ন কর্মীর পদ। কুকার, পরিচ্ছন্ন কর্মী, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কাজ করছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে ৩ বেলা খাবারের জন্য রোগী প্রতি সরকারি বরাদ্দ মাত্র ১৭৫ টাকা। যা একজন রোগীর জন্য পর্যাপ্ত নয়। হাসপাতালের জরাজীর্ণ ভবনে চলছে রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ছাদের প্লাস্টার খসে রোগীদের গায়ে পড়ার ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে। রোগীদের জন্য টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্লাড, এক্সরে, ইসিজি ছাড়া অন্য কোন রোগের পরীক্ষার যন্ত্রপাতি সরবরাহ নেই। বাকি পরীক্ষাগুলো রোগীদের বাইরে থেকে করাতে হয়। যা গরীব রোগীদের পক্ষে সম্ভব হয় না । এমন নানা কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে অনীহা বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে কমে আসছে।

হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জনবল সংকটের বিষয়টি নিয়ে কথা হয় খুলনার স্বাস্থ্য পরিচালক, খুলনা ডা. মোঃ মনজুরুল মুরশিদের সাথে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত লিখছি। নতুন করে নিয়োগ না দেওয়ায় বাকী শূন্য পদ গুলো পূরণ করতে পারছি না।

হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস খুলনা গেজেটকে বলেন , হাসপাতালটিকে বহিঃর্বিভাগে রোগী দেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধুমাত্র অন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত যক্ষ্মা বা টিবি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী ৬ মাস থেকে ৯ মাস পর্যন্ত চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। ভর্তি যোগ্য নয় এমন রোগীদের দেখে আমরা কিছু পরীক্ষা করার প্রয়োজন হলে পরীক্ষা করিয়ে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিই। বহির্বিভাগে রোগী দেখার ব্যবস্থা না থাকায় এ সকল রোগীদের ঔষধ দেওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। তিনি বলেন, জরাজীর্ণ ভবন এবং পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনগুলো পুনঃনির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল এবং গণপূর্ত থেকে চলতি বছরের শুরুতে দুইটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!