খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ
কর্তৃপক্ষ বলছে জনবল সংকট

খুলনা করোনা হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তি, ৩৬ দিনে মৃত্যু ৫০

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন ডেডিকেটেড করোনা হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। অসুস্থ রোগীরা ভর্তি হতে এসে অপেক্ষায় করতে করতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘বেডের তুলনায় রোগীর চাপ বেশি, সেই সাথে জনবল সংকটও রয়েছে। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

রোববার (৬ জুন) খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে করোনায় পজিটিভ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন মারুফা আক্তার (৩৫)। তখন ঘড়ির কাটা দুপুর ১টা ৩৭ মিনিট। মুখে অক্সিজেন লাগানো অবস্থায় হাসাপাতালে গেটের বাইরে অপেক্ষা করছেন। তার সাথে রয়েছেন ভাগ্নী আমেনা খাতুন। তিনি বলেন, “গত বুধবার মামীর করোনা টেস্টে দিলে বৃহস্পতিবার পজিটিভ রেজাল্ট আসে। ওই দিন অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অক্সিজেন লেবেল ৬৫-৭০ থাকায় মামীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে রেফার্ড করেন। এখানে আধা ঘন্টা ধরে অপেক্ষায় রয়েছি। করোনার রিপোর্ট না পেলে ভর্তি নিচ্ছে না। মামা (শহিদুল) রিপোর্ট আনতে বাইরে গেছেন। আমরা বলেছি, আগে অসুস্থ রোগীকে ভেতর নেন। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, মামা রিপোর্ট আনতে গেছে। কিন্তু কেউ আমলেই নিল না।”

করোনা উপসর্গ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আসেন মো: আবু কায়সার (৭০)। রোগীর স্বজন আতিকুর রহমান জানান, “বয়স হওয়ায় তিনি হাটতে পারছেন না। ট্রলির জন্য ভেতরে লোক গেছে। ২০-২৫ মিনিট হয়ে গেছে। এদিকে তার কষ্ট হচ্ছে, একবার শুয়ে পড়ছেন, আরেকবার উঠে বসছেন।” এর কিছুক্ষণ পর একজন ট্রলি নিয়ে হাজির হলেন।

মারুফা আক্তার ও মো: আবু কায়সারের মতো অনেকেই চিকিৎসা নিতে এসে নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। গত সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত রোগির মৃত্যুর পর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ করেন স্বজনরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসে খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসাপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৭৮ জনকে। এর মধ্যে পুরুষ রোগী ছিলেন ৭৪৭ জন, বাকিরা মহিলা। গত ৩৬ দিনে (১ মে থেকে ৫ জুন) করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৫০ জন। এর মধ্যে মে মাসে মারা গেছেন ৩৫ জন। আর চলতি জুন মাসে (আজ ৬ জুন সকাল পর্যন্ত) ১৫ জন। এই সময়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান আরও ৬ জন।

এ ব্যাপারে ডেডিকেটেড করোনা হাসাপাতালের ফোকাল পার্সন ও আরএমও ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার খুলনা গেজেটকে বলেন, রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এইচডিইউ, আইসিইউ ও রেড জোন মিলে ৯৫ জন এবং ইয়োলো জোনে ৩০ জন সহ সর্বোমোট ১২৫ জন রোগী ভর্তি ছিলো। এ সময় পর্যন্ত মারা গেছেন ৬ জন। এর মধ্যে রেড জোনের রোগী ছিলো ৫ জন। বেলা যতো বাড়ে, হাসাপাতালে রোগীও ততো আসতে থাকে। বেড সংকটও দেখা দিয়েছে। তার সাথে জনবল সংকট লেগেই আছে। যার কারণে অনেক সময় ভর্তি হতে আসা রোগীরা একটু ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ জন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সেবাকর্মী যারা ডিউটিতে আছেন, তারা রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সবার প্রতি সহনশীল আচরণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যারাই চিকিৎসা নিতে আসুক না কেনো তাদেরকে সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত মে মাসে খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে টেস্টে মোট করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় ১ হাজার ২৮৪ জন। এর মধ্যে খুলনা জেলাতেই ছিল ১ হাজার ২১ জন।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!