খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৭ মে, ২০২৪

Breaking News

  তৃতীয় টি-টুয়েন্টি : বাংলাদেশের দেয়া ১৬৬ টার্গেটে ব্যাট করছে জিম্বাবুয়ে
  হজ ভিসা ইস্যুর মেয়াদ ১১ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের : হাব
  টাঙ্গাইলের কা‌লিহাতী‌তে কাভার্ডভ্যান-ট্রা‌ক সংঘ‌র্ষে চালক নিহত
জরুরী মুহুর্তে চরম বিড়াম্বনায় গর্ভবতীরা

এনেস্থেসিওলজিস্ট না থাকায় অপারেশন বন্ধ কয়রায়!

তরিকুল ইসলাম

খুলনা জেলা শহর থেকে একশ’ কিলোমিটার দূরবর্তী কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে ঝিমিয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের রোগীদের চিকিৎসা সেবা। বিশেষ করে অপারেশন বন্ধ থাকায় এলাকার দরিদ্র গর্ভবতীদের জরুরী মহুর্তে পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে অন্যত্র। এনেস্থেসিওলজিস্ট পেলেই সিজার করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তবে ‘স্থানীয় ব্যবস্থাপনার’ নামে সরকারী সুবিধা নিয়ে অর্থের বিনিময়ে ছুটির দিনে সিজারসহ ছোট-খাট অপারেশন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত হলেও সে অনুযায়ি লোকবল দেওয়া হয়নি এখনও। ৪টি কনসালটেন্টের পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সবগুলো পদ রয়েছে শূণ্য। এছাড়া ১৪ জন মেডিকেল অফিসার পোস্টিং থাকলেও এনেস্থেসিওলজিস্টসহ ৪ জন প্রেষণে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন জেলা শহর খুলনাতে। তাছাড়া ওই ১০ জনের মধ্যে রয়েছে ১ জন ডেন্টিষ্ট, ১ জন আয়ুর্বেদিক ও ১ জন মেটার্নী চিকিৎসক। শিশু ও জেনারেল সার্জারির জন্য নেই কোন চিকিৎসক। ফলে উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে ওখানকার চিকিৎসকদের হিমসিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে শিশু বিশেষজ্ঞ ও সিজারিয়ান সেবা না থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এলাকার মা ও শিশুরা।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা নিজে গাইনীতে অভিজ্ঞ হওয়ায় এনেস্থেসিওলজিস্ট থাকলে সিজারের ব্যবস্থা করা যাবে বলে জানান তিনি। দীর্ঘদিন পরে রুপা টিকাদার নামে এনেস্থেসিয়ায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একজন চিকিৎসককে পোস্টিং দেওয়া হলেও প্রেষণে তাকে খুলনার কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, ‘কৌশলগত কারণে’ অত্র হাসপাতালে এনেস্থেসিয়া ও সার্জারী পদ ফাঁকা রাখা হয়।

এদিকে, স্থানীয় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছুটির দিনে সিজারসহ ছোট-খাট অপারেশন করছেন এক ডাক্তার। তিনি নিজেই এনেস্থেসিয়ায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। নিজের কর্মস্থল থেকে ছুটির দিনে এলাকার মানুষের টানে চিকিৎসা সেবা দিতে ছুটে আসেন বলে তার অভিমত।

স্থানীয়রা জানান, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৃহস্পতিবার রাত, শুক্র ও শনিবার ছাড়া কোন অপারেশন করা হয় না। এজন্য ওই সময় বাদে জরুরী মুহুর্তে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রোগীদের। গর্ভবতীদের সিজারের জন্য আসতে হয় একশ’ কিলোমিটার দূরের জেলা শহরে অথবা কোন প্রাইভেট ক্লিনিকে। ফলে এলাকার অসহায় ও স্বল্প আয়ের রোগীদের সিজার ও সিজার পরবর্তী খরচ জোগাড় করে অন্যত্র সেবা নেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। এছাড়া দূরে নেওয়ার পথে অনেক প্রসূতির মৃত্যু ঝুঁকিও থাকে।

আরও অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় ছুটির দিনে অপারেশনের কথা বললেও নিয়মানুযায়ী কোন রোগী ভর্তি কওে না তারা। ওই সময়েও অপারেশনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে কোন সহযোগীতা মেলেনা। ভর্তির জন্য যেতে হয় দালালের কাছে অথবা ওই ডাক্তারের চেনাজানা নার্সদের কাছে। অপারেশনের জন্য ওই ডাক্তারের (দালাল খ্যাত) নির্ধারিত নার্সের কাছে যেয়ে চুক্তি অনুযায়ী নগদ টাকা জমা দিয়ে নিতে হয় সেবা। রোগীর কোন সমস্যা হলে দায় নেয় না কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে নূন্যতম সিজার অপরেশন চালুসহ শিশুদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি।

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অপারেশন করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট সমাধানে উর্ধ্বতনদের অবহিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ খুলনা গেজেটকে বলেন, “এনেস্থেসিওলজিস্টের ব্যবস্থা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। আমি খুলনায় নতুন যোগদান করেছি। এখনও কয়রায় যাওয়া হয়নি। শিঘ্রই ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে যাবতীয় সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. রাশেদা সুলতানা খুলনা গেজেটকে বলেন, “সিভিল সার্জনকে বলেছি ওখান থেকে একজন ডাক্তার নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে পুনরায় ওখানে ফিরিয়ে দিতে। কয়রায় অপারেশন চালু করা খুবই জরুরী। আমরাও যথেষ্ট আন্তরিক। রূপা টিকাদারকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রূপা টিকাদারকে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে কোভিড এর কারণে আইসিইউ’তে এনেস্থেসিয়ার ডাক্তারও গুরুত্বপূর্ণ।”

খুলনা গেজেট/ টি আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!