খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৭ মে, ২০২৪

Breaking News

  চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ট্রাকের সঙ্গে ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত
  রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২

উপকূলের মানুষের জীবন-জীবিকার সুরক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি

কয়রা প্রতিনিধি

প্রতিবছর ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ষাট দশকের দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয় খুলনার সর্ব দক্ষিণের সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা উপকূলীয় কয়রা উপজেলার মানুষের। ষাট দশকের জোড়াতালির বেড়িবাঁধে গত ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর উপজেলার উত্তর বেদকাশি ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের শাকবেড়িয়া ও কপোতাক্ষ নদীর তীরে ১১৭২ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩১.৭৫০ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের অনুমোদন পাওয়ার আশার আলো দেখেছিল উপকূলের মানুষ। এই মেগা প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আজও কাজ শুরু হয়নি।

উপকূলের মানুষের জীবন-জীবিকার সুরক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের মেগা প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন কয়রার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা।

বুধবার (১৫ মার্চ) কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের হলরুমে
কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধের মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন দাবিতে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়। নাগরিক সংগঠন ‘কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি’ এর আয়োজন করে।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন, কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেয়াছাদ আলী, খুলনা জেলা আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরাপদ মুন্ডা, উপকূলীয় উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান কমলেশ মন্ডল প্রমুখ।

খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিগত দিনে অনেক সরকার ক্ষমতায় ছিল, কেউ কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধের উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে কয়রাবাসী। তবে তার বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি। কয়রার অব‌হে‌লিত মানু‌ষের কথা বি‌বেচনা ক‌রে অগ্রা‌ধিকার ভি‌ত্তি‌তে টেকসই বেড়িবাঁধের মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন বলে আশাকরি।

কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেয়াছাদ আলী বলেন, খুলনার সর্ব দক্ষিণের সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা কয়রা উপজেলার মানুষেরা দুর্যোগের আঘাত সহ্য করতে করতে ক্লান্ত। প্রতিবছর বেড়িবাঁধ ভেঙে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয় মানুষকে। সেই ষাটের দশকের বেড়িবাঁধ প্রায় অর্ধশত বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধের মেগা প্রকল্পের কাজ আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে শুরু করার দাবি জানাই।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন। তিনি বলেন, গত ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর কয়রার দুইটি ইউনিয়নে জন্য ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকার টেকসই বেড়িবাঁধ প্রকল্প অনুমোদনের পর আশার আলো দেখেছিল কয়রার মানুষ। কিন্তু কাজটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবার কথা থাকলেও আজও তা শুরুই হয়নি। এছাড়া কয়রা উপজেলা প্রতিবছর মৎস্য খাত, সুন্দরবন, আংটিহারা কাস্টমস, বৈদেশিক রেমিটেন্সসহ বিভিন্ন খাত থেকে সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করে থাকে। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা উপকূলের মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হোক।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, ১৯৬০-এর দশকের বাঁধ পরিকল্পনা বর্তমানে কয়রার মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ জোয়ারের চাপে বাঁধ ভেঙে বারবার মানুষ সহায়-সম্বল হারাচ্ছেন। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে টেকসই বেড়িবাঁধের অনুমোদিত প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করতে জোর দাবি জানাই।

অনুষ্ঠানে কয়েকটি দাবি তুলে ধরে বলা হয়, কয়রার দুটি ইউনিয়নের টেকসই বেড়িবাঁধের অনুমোদিত প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে পুরো উপকূলীয় এলাকাকে টেকসই বেড়িবাঁধের আওতায় আনতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরি তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াপদা) বাঁধের ১০০ মিটারের মধ্যে চিংড়ি বা কাঁকড়ার ঘের তৈরিতে সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা দ্রুত কার্যকর করতে হবে। এছাড়া কয়রায় নিরাপদ খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দাবি জানানো হয়।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!