খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৭ মে, ২০২৪

Breaking News

  জিম্বাবুয়েকে ৯ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ
  হজ ভিসা ইস্যুর মেয়াদ ১১ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের : হাব
  টাঙ্গাইলের কা‌লিহাতী‌তে কাভার্ডভ্যান-ট্রা‌ক সংঘ‌র্ষে চালক নিহত

উপকূলের প্রাণের দাবী, বাস্তবায়নের অপেক্ষায়

নিতিশ সানা, কয়রা

উপকূলীয় অঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে বেড়িবাঁধ। কিন্তু ষাট দশকের দুর্বল বেড়িবাঁধ অরক্ষিত হয়ে পড়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় উপকূল। উপকূলীয় খুলনার কয়রায় পুরোনো বাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) একনেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে যুক্ত হয়ে এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেন। একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ‍্য জানান।

খুলনার কয়রা উপজেলার ১৪/১ নং পোল্ডারে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের শাকবেড়িয়া নদীর তীরবর্তী গাববুনিয়া গ্রাম থেকে শুরু করে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন ঘুরে এসে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদীর তীরবর্তী গনেশ মেম্বর এর বাড়ি ৩১.৭৫০ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে, একনেকে পুনর্বাসন প্রকল্পে ব‍্যয় ধরা হয়েছে ১১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ২৪ কিলোমিটার জিও ব্যাগ ওব্লক এবং ১৩ কিলোমিটার অত্যাধুনিক ভাবে মাটির কাজ হবে। পুরো ব্যয় বহন করবে সরকার।

স্থানীয় বাসিন্দা গনেশ মন্ডল বলেন, প্রতিবছর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় আমাদের ঘরবাড়ি। ষা‌টের দশ‌কে তৈরী করা বাঁধ অত‌্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ায় পানির চাপ ও বাতাসের গতিবেগ বাড়লেই নদীর বাঁধ ভে‌ঙে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দশহা‌লিয়া, পবনাসহ ক‌য়েক‌টিস্থানে বাঁধ চরম ঝুঁ‌কিপূর্ণ অবস্থায় র‌য়ে‌ছে। যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় থা‌কে এলাকাবা‌সি। তাই কয়রার অব‌হে‌লিত মানু‌ষের কথা বি‌বেচনা ক‌রে অগ্রা‌ধিকার ভি‌ত্তি‌তে অন্যান্যস্থানে প্রকল্প অনুমোদনের পাশাপাশি অনুমোদিত প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থার অনু‌রোধ রইল।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ, এটা কয়রার মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো। দীর্ঘদিন আমরা কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি থেকে শুরু করে মানববন্ধন, গণস্বাক্ষরের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে চলেছি একটি সত্যিকারের মজবুত বেড়িবাঁধের জন্য। কয়রার সাধারণ মানুষের দাবির ফলেই সরকার এই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তবে দ্রুত স্বচ্ছতার সাথে কাজটি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত জনমনে স্বস্তি নেই। কারণ আমরা দেখেছি বিগত ১০ বছরে জরুরী কাজের নামে কয়রার বেড়িবাঁধ সংষ্কার ও নির্মাণ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে- ১শ ৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৮ হাজার টাকারও বেশি। অথচ সেইসব জোড়াতালিতেও লুটপাট বাঁধ সংস্কারের নামে যেটুকু কাজ হয়, সেখানেও রয়েছে আমলা-কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধি-ঠিকাদার মিলিয়ে সরকারি তথা জনগণের অর্থ লুটপাটের অসাধু চক্র। টেন্ডারে কাজ পেয়ে মূল ঠিকাদার নিজের লাভটা রেখে কাজটা বিক্রি করে দেন আরেকজনের কাছে। এভাবে হাতবদল হলে কাজের মান খারাপ হতে বাধ্য- এটাই দেখে এসেছি এতদিন।

কয়রার এই নাগরিক নেতা জানান, কয়রায় নদী ভাঙনের কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তাঘাটে, পরের জমিতে কোনরকমে আশ্রয় নেন। অনেকে আবার সর্বস্ব হারিয়ে ভাসমান কচুরিপানার মতো শহর-বন্দরে পাড়ি দেন, যাদের প্রকৃত হিসাব সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। উপকূলীয় এ উপজেলার প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষকে নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয়। একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এতোদিন কয়রার মানুষ আন্দোলন করে আসছিল। এখন বরাদ্দ হয়েছে, এবার আন্দোলন সচ্ছতার সাথে কাজটি বাস্তবায়নের বিষয়টি বুঝে নেয়ার।

ইমতিয়াজ উদ্দিন আরও বলেন, নদী শাসন ছাড়া শুধু বাঁধ নির্মাণ হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সেটি আবারও নদীতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাই নদী শাসনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া বাঁধের সঙ্গে পানি নিষ্কাশনের জন্য স্লুইস গেটের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। তিনি টেকসই বাঁধের সঙ্গে স্লুইস গেট নির্মাণের জন্য কয়রাবাসীর পক্ষে দাবি জানান।

সাতক্ষীরা ডিভিশন-২ সহকারী প্রকৌশলী এস এম মশিউল আবেদীন জানান টেকসই বেড়ীবাঁধ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের প্রায় ৩২ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও পুনঃর্নিমাণ। পুরানো কিছু ব্লকের সংস্কার সহ মাটি, জিওব্যাগ দিয়ে নতুনভাবে নির্মাণ, বাঁধে ব্লক ডাম্পিং, ব্লক স্থাপন প্রক্রিয়া রয়েছে এ প্রকল্পের আওতায়। ২০২২ সালের শুরুতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে। যা ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি উপকূলের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা একনেকে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রকল্প অনুমদন দেওয়ায়। প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন উপকূলীয় কয়রার সর্ব স্তরের মানুষ। উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছে উপকূলবাসী।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!