‘উপকূলীয় সকল মানুষের বিনামূল্যে নিরাপদ ও পর্যাপ্ত সুপেয় পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে বুধবার (২২ মার্চ) সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি হলরুমে পানি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। পানি অধিকার প্রচারাভিযান ওয়াটারম্যুভ ক্যাম্পেইনের আওতায় স্বদেশ-সাতক্ষীরা, পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক-প্রান এবং একশনএইড বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে এই শুনানীর আয়োজন করে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ আজাহার হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) প্রকৌশলী মোঃ হরুন অর রশিদ, জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ আবদুল হামিদ, সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মফিজুর রহমান প্রমূখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্বদেশ’র নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত।
জেলার আশাশুনি, তালা ও শ্যামনগর সুপেয় খাবার পানির প্রচন্ড সংকট, মিষ্টি আধার পুকুরগুলো এখন লবণাক্ত হয়ে গেছে। সুপেয় পানি সংকটে ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষে নিজের সমস্যার কথা তুলে ধরেন, শ্যামনগর উপজেলার কালিঞ্চি গ্রমের জেলে গোবিন্দ মুন্ডা, তালা উপজেলার রোজিনা আক্তার ঝুমা, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরের দিনমজুর সুকুমার দাস, শ্যামনগর উজেলার দাতিনাখালি গ্রামের সমাজকর্মী শেফালী বেগম, আশাশুনি উপজেলার কলেজ শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা। সুপেয় পানি সংকট কীভাবে তাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে এ বিষয়ে তারা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
বেঁচে থাকার জন্য দৈনিক প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহে তাদের সংগ্রামের কথা জানিয়ে তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে উপকূলে/সাতক্ষীরায় পানীয় জলের সংকট সময়ের সাথে সাথে তীব্র আকার ধারণ করেছে, জনজীবনে যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে পানি সংগ্রহ করতে দূর-দুরান্তে গিয়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয়, কলস, ড্রামের মত পানি সংরক্ষণের ভারী আধার বহন করার ফলে শারীরিক নানা অসুস্থতা, বাধ্য হয়ে লবণাক্ত ও দূষিত পানি পানের ফলে উচ্চরক্তচাপ, পেটের পীড়া, হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি, শিশুমৃত্যু, গর্ভবতী নারীদের খিঁচুনি, অকালগর্ভপাত ও উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি সংকট। আবার লবনাক্ততাজনিত অসুস্থতার চিকিৎসায় এবং প্রয়োজনীয় পানীয় জল কিনতে গিয়ে পরিবারগুলোর উপর রয়েছে অতিরিক্ত খরচের বোঝা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, সুপেয় পানির সাথে সকল মৌলিক অধিকারসমূহ ওতপ্রোভাবে জড়িত। বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির অনিশ্চয়তা কীভাবে অন্যান্য মৌলিক অধিকারকে ব্যাহত করছে, এই শুনানির মধ্যে দিয়ে তা ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে সরাসরি জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে যা আগামীতে পরিকল্পনা গ্রহণে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সকলের সুপেয় পানি ও দৈনন্দিন সকল কাজে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্থানীয় জনমানুষের সুবিধা-অসুবিধাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে অঞ্চলভিত্তিক সংকটের ভিত্তিতে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের আশু দাবি জানান তারা।
আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ নেতৃবৃন্দ বলেন, সাতক্ষীরায় উপকূলের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রতিনিয়ত মানুষকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক, কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সুপেয় পানির সংকট তৈরি হয়েছে। পানি সংকটকে কেন্দ্র করে এলাকায় প্রতিদিন নানাধরণের পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। সংকট ঘিরে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অভিযোজন চর্চাও বৈচিত্র্যময়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং উপকূল মানুষের জীবনসংগ্রামের সাথে সাথে এলাকায় যেসব ধান, মাছ, গাছ, পাখি ও বন্য জীবজন্তু ছিল, সেসব এখন হারিয়ে গেছে। বদলে গেছে এলাকার দুর্যোগ পঞ্জিকাও।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী ফারুক রহমান, উন্নয়নকর্মী লুইস রানা গাইন, শ্যামল কুমার বিশ^াস মহুয়া মঞ্জুরী, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান, আহসান রাজিব সাংবাদিক ও আসাদুজ্জামান সরদার, দলিত নেতা গৌরপদ দত্ত প্রমুখ।
পানি শুনানিতে সুপেয় পানি সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী, নাগরিক আন্দোলনের কর্মী, গণমাধ্যম কর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, উপকূলে জলবায়ু ও পানি সংকট নিয়ে কমর্রত ৫০ এর ও অধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
খুলনা গেজেট/ এসজেড