নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা, কারণ তার পালানোর পথ ছাড়া কিছুই ছিল না। উনি যদি না পালাতেন তাহলে তার হাড্ডি মাংস পাওয়া যেত না বাংলাদেশে। যারা বলে শেখ হাসিনা আবার দেশে ফিরে আসবে, আমি তো বলি পারলে আসেন। সেদিন একটি চ্যানেলে দেখলাম উনি একটু টুপ করে ঢুকে পড়বেন, তার আগে বলেছিলেন টুস করে ফেলে দিবেন। পারবেন না। বিদেশের মাটিতে পৃথিবীর কেউ তাকে জায়গা দেয়নি। সবাই তাকে জানে সে একটা লুটেরা, সে খুনি, সে ফ্যাসিস্ট এবং তার দল বাংলাদেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের খুলনা নগর ও জেলার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য আন্দোলন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকারকে এভাবে দেশ থেকে বিতারিত করা সত্যিই এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের ছাত্র-জনতা। গত ৫৪ বছর ধরে আমরা যে অনিয়ম-দুর্নীতির দেশ দেখেছি, তা থেকেতো আমরা বের হতে পেরেছি। আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এইতো সেই দেশ, যে দেশের বর্ণনা কবিরা করে গেছেন সুজলা, সুফলা, শষ্য শ্যামলা। এখন আর এই দেশ রেখে ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বিদেশে যেতে হবে না। আমাদের এক সময় যে সম্পদ ছিলো, যা দেখে ব্রিটিশরা, পর্তুগিজরা এই দেশে বাণিজ্য করতে এসেছিল। এই দেশের সম্পদ লুট করে তারা নি:স্ব করে দিয়েছে। অথচ ভুটান, নেপাল, ভারত এমনকি চিনের থেকেও উন্নত ছিল এই দেশ। তারা আজ উন্নত হলেও আমরা কেন আজ পিছিয়ে? এর একমাত্র কারণ হলো যারা দেশটাকে গড়বে, তারা দেশ গড়ার চেয়ে নিজেদের গড়ায় ছিল ব্যাস্ত। তারা জণগণের কল্যাণের চেয়ে নিজের কল্যাণ, পরিবারের কল্যাণ, নিজের দলবাজী করতে চেয়েছে বেশি।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গত ১৫ বছরের ইতিহাসের কথা সবার ঘরে-ঘরে আছে উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার কি বলতেন? আমি উন্নয়নের রাজনীতি চাই, বাংলাদেশকে আমি যে উন্নয়ন দিয়েছি, তা আর কেউ দিতে পারেনি। তিনি উন্নয়নের নামে হাজার-হাজার কোটি টাকার লুটপাটের খবর আজ আমরা সবাই জানি। এক পদ্মা সেতুর নামে তিনি যে প্রপাগান্ডা চালিয়েছেন তা বিশ্বের সবাই দেখেছে। মেট্রোরেল তৈরিতে যে টাকা খরচ হয়েছে, তার থেকেও বেশি ব্যয় হওয়ার কথা বলতেও দিধা করেনি এই ফ্যাসিস্ট মিথ্যাবাদী সরকার।
তিনি আরও বলেন, ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই পদ্মা সেতু তৈরি হলে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবর্তনের কথা বলেছিল। অথচ কি হয়েছে? হ্যা হয়েছে, লুটপাট হয়েছে, জমি দখল হয়েছে, হাসিনা ও তার দোসরদের উন্নতি হয়েছে। চোর-ডাকাত একসঙ্গে দেশকে লুটেছে, কোনো উন্নতি হয়নি। চোর যদি দেশ শাষণ করে তাহলে দেশের উন্নতি হয়?
মান্না বলেন, এইবার যে লড়াই হলো সেখানে ছাত্র-জনতা বলেছে, তারা নতুন বাংলাদেশ চায়। তারা পুরনো সেই আগের বাংলাদেশ চায় না। বিগত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়নের গান গেয়েছে; এক পদ্মা সেতু করতে ৪০ হাজার কোটি টাকা লাগিয়েছে। অথচ, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ভূপেন হাজারিকা সেতু করতে মাত্র ১১৮৬ কোটি ভারতীয় মুদ্রা ব্যয় হয়েছে। আমাদের পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার আর ভূপেন হাজারিকা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। বোঝাই যাচ্ছে কি পরিমাণ দুর্নীতি করেছে শেখ হাসিনার সরকার।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দলের নগর শাখার আহবায়ক ও নব-নিযুক্ত জিপি এড. ড. মো: জাকির হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক এস এম মহিদুজ্জামান।
এ সময় বক্তৃতা করেন, জেলা আহবায়ক এড. মো: আব্দুল মজিদ হাওলাদার, নগর শাখার সদস্য কাজী আমিনুর রহমান, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় আহবায়ক মো: তরিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক ইয়াসিন ইসলাম শুভ। এ অনুষ্ঠানে এড. লাভলী শেখ ও রুহুল আমিন হাওলাদার দলে যোগদান করেন। সম্মেলনের শেষ পর্বে জেলা ও মহানগরীর নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দের নাম ঘোষণা করা হয়। পরে তিনি বসুপাড়ায় কোঠাবিরোধী আন্দোলনে শেখ সাকিব রায়হানের কবর জিয়ারত করেন।
খুলনা গেজেট/ টিএ