খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

আদি যমুনা নদী দায়সারা খনন, ক্ষতির মুখে কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর

রুহুল কুদ্দুস

সাতক্ষীরার ঐতিহাসিক যমুনা নদী কালিগঞ্জ অংশে দায়সারা ভাবে খনন করে বিশাল এলাকাকে মরুকরণের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে যে প্রক্রিয়ায় খাল খনন করা হচ্ছে তাতে উপকারের পরিবর্তে কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে চরম ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে এমন আশঙ্কায় প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও জনপ্রতিধিবৃন্দ।

এলাকার সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে যাতে অতিদ্রূত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সে ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাঈদ মেহেদী জানান, আদি যমুনা একটি ঐতিহ্যবাহী নদী। এই নদীর পানি ব্যাবহার করে হাজার হাজার বিঘা জমিতে কৃষি কাজ হতো। কিন্তু ১৯৯০ সালে অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে আদি যমুনায় পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে কয়েকটি ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশন বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং বহু মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন।

তিনি বলেন, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরকে রক্ষা করতে এবং সুন্দরবনকে বাঁচাতে এই আদি যমুনা নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইছামতি নদীর মিষ্টি পানি এসে এলাকার কৃষিকাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকার করে। প্রায় কুড়িবছর আন্দোলনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ২০১০ সালে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে যমুনা নদী ৮০ ফুট প্রশস্ত করে খনন করা হয়। পরবর্তীতে একটি সার্ভে চক্র চক্রান্ত করে এখানে ব্রীজের অজুহাত দিয়ে ৬০ ফুট প্রশস্ত ও ৩০ ফুট গভীরতায় খননের জন্য প্রস্তাবনা তৈরী করেন। সেই অনুযায়ী পরবর্তীতে কার্যাদের পাওয়ার পর কিছুদিন পূর্বে ঠিকাদার খনন কাজ শুরু করেছে। এর ফলে যমুনা খাল এখন আরও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে উদ্দেশ্যে যমুনা খনন করা হচ্ছিল সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন তো হবেই না, বরং আরও ক্ষতি হবে। এ ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় দুষ্টুচক্রের হাত আছে বলে আমি মনে করি। তিনি আরও বলেন, যমুনা খাল পুন:খনন সংক্রান্ত বিষয়ে আমি ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক ও কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে অবগত করেছি। কিন্তু তারা এ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আসেন নি। অথচ এর মধ্যে ঠিকাদার অর্ধেক খনন কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছে। এ কাজ বন্ধ রেখে পুনরায় এস্টিমেট তৈরী করে আদি যমুনার ৩২ কিলোমিটার খনন করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদাউস মোড়ল জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ যমুনা খাল শ্যামনগর থেকে কালিগঞ্জ পর্যন্ত কাটানো হচ্ছে। সার্ভে করে এখন যেভাবে খাল কাটানো হচ্ছে তাতে স্থানীয় জনগণের কল্যাণে আসবে না। এই খালটা আগে প্রসস্ত ছিল ৮০ থেকে ১০০ ফুট। বর্তমানে ৬০ ফুট প্রসস্ত করে খনন করা হচ্ছে, আর গভীর করা হচ্ছে ৩০ ফুটের মতো। বর্তমানে যে ভাবে খালটা পুন:খনন করা হচ্ছে তাতে এলাকার মানুষ খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিশাল এলাকা মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাবে। প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যায়ের এই খনন কাজে সম্পূর্ণ টাকা অপচয় হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আদি যমুনা বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জাফরুল্যাহ ইব্রাহিম বলেন, অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে যমুনা খাল এখন ড্রেন-নর্দমায় পরিণত হয়েছে। কয়েক বছর পূর্বেও খালটি ১শ’ ফুটের বেশী প্রশস্ত ছিলো। ২০১০ সালে ৮০ ফুট প্রশস্ত করে পুন:খনন করা হয়। অজ্ঞাত কারণে সম্প্রতি ৬০ ফুট প্রশস্ত করে যেনতেন ভাবে খাল পুন:খনন করা হচ্ছে। প্রশস্ততা কমিয়ে খাল খননের পিছনে অবৈধ দখলদারদের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার আঁতাত আছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এভাবে খনন করলে জনগণের কল্যাণে আসবে না বরং এতে অবৈধ দখলদাররা আরও সুবিধা পাবে। খালটি রক্ষা না করলে অদূর ভবিষ্যতে এটি বিলীণ হয়ে যাবে। আর যমুনায় পানিপ্রবাহ না থাকলে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।

এলাকাবাসী জানান, খাল খননের নামে এখানে হরিলুট চলছে। ঠিকাদারের লোকজন ইচ্ছামতো কাজ করছে। খাল খনন করে যেভাবে খালপাড়ে মাটি ফেলা হচ্ছে তাতে খাল আরও ভরাট হয়ে এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তারা এই খনন কাজ বন্ধ রেখে আবারও যথাযথ ভাবে খনন কাজ করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ -১ এরা আওতাধীন ৫ নং পোল্ডারের সেকশন অফিসার তনয় হালদার বলেন, ৩ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে কালিগঞ্জ স্লুইসগেইট থেকে যমুনা খালের ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত খনন কাজ চলছে। ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়েছেন। সিডিউল অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আজাহার আলী বলেন, খাল খনন সংক্রান্ত বিষয়ে আমাকে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে কিছু জানায়নি। তাছাড়া এ বিষয়টি আমার এখতিয়ারভুক্ত নয়।

খুলনা গেজেট/ বিএমএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!