খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

ইজিবাইক ছিনতাই করে চালককে শ্বাসরোধে হত্যা, গ্রেপ্তার ৮

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনায় ইজিবাইক ছিনতাই করে চালক মো. আবুল কালাম আজাদকে (৫৬) হত্যার ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে কেএমপির সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক এ তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার ও মঙ্গলবার গোয়েন্দা তথ্য এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রুপসার সাহিল হোসেন মকবুলের ছেলে মনির হাওলাদার ওরফে মনির (৩২), খানজাহান আলী থানার আটরা পশ্চিমপাড়া এলাকার আব্দুল গনির ছেলে মো. রনি শেখ (৩৬), ফুলতলার মোহাম্মদ শেখের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৮), ফুলতলা পয়গ্রামের আলমাস হোসেনের ছেলে ফোরকান হোসেন ওরফে তোহান (২৯), একই এলাকা লতিফ লস্করের ছেলে রিয়াদ লস্কর ওরফে রিয়াদ (২৩), আটরামিরপাড়া এলাকার আহসান আলীর মীরের ছেলে সৈয়দ মোহন হোসেন (৩৭), দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা সেনপাড়া এলাকার মোঃ আবুল কাসেমের ছেলে মো. জাহিদুল ইসলাম (৩৮) ও মহেশ্বরপাশা জিয়া কলেজ রোডের মুন্সিপাড়া এলাকার মো. আব্দুল মজিদ কাজীর ছেলে মো. আল আমিন কাজী (৩৫)।

কেএমপি কমিশনার জানান, গত ৫ জানুয়ারি রাত ৯ টার দিকে খানজাহান আলী থানাধীন আটরা পশ্চিম পাড়া নতুন রেল লাইনের পূর্ব পাশে জনৈক সাইফুল ইসলামের সরিষা ক্ষেত হইতে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় খানজাহান আলী থানা পুলিশ অজ্ঞাত একটি মৃত দেহ উদ্ধার করে। অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে খানজাহান আলী থানা পুলিশ লাশটির সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি লোকমুখে শুনে রুপসা মাস্টারপাড়া এলাকা থেকে রাণী বেগম নামক একজন মহিলা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসে অজ্ঞাতনামা লাশটি তার স্বামী মোঃ আবুল কালাম আজাদ (৫৬) বলে সনাক্ত করে।

তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী রাণী বেগম খানজাহান আলী থানায় এসে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে এজাহার দায়ের করলে বাদীর এজাহারের ভিত্তিতে গত ৮ জানুয়ারি অফিসার ইনচার্জ খানজাহান আলী থানার মামলা রুজু করে। পরবর্তীতে খানজাহান আলী থানার একটি চৌকস তদন্ত দলের নেতৃত্বে এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ও পারিপার্শ্বিক পর্যালোচনায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, এই মামলার মূল আসামী ভিকটিমের ইজিবাইকটি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ ভিকটিম মোঃ আবুল কালাম আজাদকে ফলো করে আসছিল এবং অন্যান্য আসামীদের যোগসাজসে তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ৫ জানুয়ারি ভিকটিমকে রুপসা ঘাট থেকে রিজার্ভ ভাড়া করে আটরা-আফিল গেট এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক অবস্থানরত অপরাপর আসামীরা ভিকটিমের ইজিবাইকে উঠে প্রধান আসামী মনির হাওলাদার তার স্ত্রীকে আনার কথা বলে মশিয়ালি নামক স্থানে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে আসামীরা বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে ইজিবাইক চালক ভিকটিম মোঃ আবুল কালাম আজাদকে থামায় এবং হঠাৎ তাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ী থেকে ফেলে দিয়ে অন্ধকারের ভিতর প্রধান আসামী মনির হাওলাদারসহ আসামী মোঃ রনি শেখ, জাহাঙ্গীর হোসেন, ফোরকান হোসেন তোহান, রিয়াদ লস্কর ও সৈয়দ মোহন হোসেন মিলে এই হত্যাযজ্ঞে শামিল হয় এবং তোহান ও রিয়াদ মাফলার দিয়ে ভিকটিমের নাক-মুখে প্যাচ দেয় এবং রনি শেখ ও জাহাঙ্গীর হোসেন ভিকটিমের হাত ধরে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করে। তৎপরে মনির হাওলাদার ভিকটিমের শ্বাসরোধ করে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করে হাত-পা বেঁধে সরিষা ক্ষেতে ফেলে দিয়ে ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি অন্য কোথাও বিক্রি করলেও ধরা পড়বে বিধায় ইজিবাইকটির যন্ত্রাংশ পার্ট পার্ট করে খুলে মালিক সেজে আসামী সৈয়দ মোহন হোসেন গ্রেপ্তারকৃত অন্য আসামী মোঃ জাহিদুল ইসলামের নিকট বিক্রি করে এবং পরবর্তীতে সে মোঃ আলামিন কাজীর নিকট ইজিবাইকটির যন্ত্রাংশ বিক্রয় করে।

কেএমপি কমিশনার বলেন, মামলাটির তদন্তকালে জানা যায় মৃত. আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘদিন ধরেঅন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। পরবর্তীতে সে ইজিবাইকটি ভাড়া নিয়ে চালিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালাতো। সে অত্যন্ত দীনহীন হওয়ায় মানবিক দায়িত্ব বোধ থেকে আমারা পাশে দাঁড়াবো। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সাধ্য অনুযায়ী মানবিক ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। সেই প্রেক্ষিতে কেএমপি’র পক্ষ থেকে আমরা নিহত ভিকটিমের স্ত্রী রাণী বেগমকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য একটি সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ প্রদান করছি।

ভিকটিমের স্ত্রী রাণী বেগম এই হত্যা মামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এ সময় কেএমপি’র ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত এম এম শাকিলুজ্জামান, অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) সোনালী সেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার (স্টাফ অফিসার টু পিসি) ইমদাদুল হক, সহকারী পুলিশ কমিশনার (দৌলতপুর জোন) মোঃ আবুল বাশার, খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক এবং পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত পলাশ কুমার দাস উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!