মরুভূমি বা আরব দেশের ফল হিসেবে খ্যাত ‘রক মেলন’ ফল। যা দেখতে খসখসে আবরণের মিষ্টি কুমড়োর মত সবুজ গোলাকৃতির। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন এলাকায় এ ফল চাষ হয়। কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে তরুণ উদ্যোক্তা মোঃ এবাদুল খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের আনন্দ নগর এলাকায় ঘেরের পাড়ে এ ফল চাষাবাদ শুরু করে। বিদেশি এ ফল চাষাবাদ করে সফল হয়েছেন তিনি।
এছাড়া খুলনার বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া উপজেলায়ও এ ফলের চাষ শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনপ্রিয় এ ফলের নাম ‘রক মেলন’ অনেকেই এই ফলটিকে ‘সাম্মাম’ নামেও চেনেন। এ ফলটিকে সৌদিতেও সাম্মাম বলে। তবে বিভিন্ন দেশে এটি রক মেলন, সুইট মেলন, মাস্ক মেলন, হানি ডিউ নামেও পরিচিত।
রূপসার এবাদুলের ঘেরের পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বাঙ্গি বা কুমড়া গাছের মতো লতানো এ রক মেলন গাছ। গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে গোল গোল ফল। প্রায় প্রতিটি গাছেই ভরপুর ফল ও ফুল। বাঁশের বাতা আর নেট ব্যাগ বা জালের ফাঁকে ফাঁকে পুরো ক্ষেত যেন ফলে ভরে রয়েছে। এ ফল খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ। বহির্বিশ্বে এ ফলের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে এটির চাষাবাদ খুবই কম। তবে তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেমন খুলনার কয়েকটি অঞ্চলে কিছু কৃষক উদ্যোগ নিয়ে এ ফলের চাষাবাদ শুরু করেছে। বাঙ্গি, তরমুজের মতো মাচা তৈরি ছাড়া মাটিতেই ফলিয়েছেন এ রক মেলন।
কৃষক নাদের আলী ভুঁইয়া থেকে জানা যায়, প্রথমে ভালো জাত নির্বাচন করতে হবে। নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী মাসে বীজ বপন করতে হবে। প্রায় ৫-৬ ফুট দূরে দূরে ১.৫ ফুট চওড়া মাদা তৈরি করে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে। চারা গজানোর পর প্রতিটি মাচায় অবশিষ্ট ২-৩টি চারা রাখতে হবে।
চাষি ক্ষিতীশ বলেন, “মাত্র ৩০ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এরপর পরাগায়নের আরো ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই ফুল থেকে ফল হয়। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের মধ্যে এ ফল খাওয়া ও বাজারে বিক্রি করার উপযোগী হয়। তিনি এ ফল চাষে এ পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ করেছেন মাত্র ৩০ হাজার টাকা। ফল বিক্রি করার টার্গেট রয়েছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। প্রতিটি ফল প্রায় দুই কেজি ওজনের সাইজ হয়েছে। খুলনার পাইকারি বাজার মূল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি।”
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা খুলনা গেজেটকে বলেন, “বিদেশি এ ফল অধিক লাভজনক। আধুনিক কৃষি গতানুগতিক কৃষিকাজের চেয়ে ভালো। রক মেলন বিদেশি ফল, তবে আমাদের আবহাওয়ার সাথে উপযোগী। তরমুজ, বাঙ্গি, শসার মত করে চাষ করা সম্ভব। ১০-১৫ জন কৃষককে আমরা চাষে পরামর্শ দিয়ে সার্বক্ষণিক সহায়তা করছি। আগামীতে এ চাষ বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করছি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তরুণ কুমার বালা জানান, “এই ফল সব ধরনের মাটিতে চাষ করা গেলেও বেলে-দোআঁশ মাটিতে সবচেয়ে ভালো ফলন হয়। একটি গাছে ২টির বেশি ফল থাকলে সাইজ ছোট হয়ে যাবে। এটি শরীর হাইড্রেট রাখে, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, ক্যান্সার, প্রদাহ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, হজম শক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করে। এছাড়া মার্কেটে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।”
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সকল প্রকার পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন গ্রুপ মিটিং, ট্রেনিং ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ ফসল চাষের বিষয়ে কৃষকদের প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বাজারে ভাল চাহিদা ও কৃষকরা ভাল দাম পাওয়ায় দিন দিন রক মেলন চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এনএম