সোমবার । ১৭ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
পিবিআই’র চার্জশিটে অভিযুক্ত ৫

হাঁড়গোড়ের সূত্রে যশোরে মিললো খুলনার রাজিব হত্যা রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর 

যশোরে মাটিতে পুতে রাখা একটি ড্রামের ভেতরে ছিল শুধুমাত্র কিছু হাঁড়গোড়। সেই হাঁড় থেকে পরিচয় শনাক্ত ও কেন এ নৃশংস হত্যা এবং এর নেপথ্যে কারা রয়েছে সেটাও শনাক্ত করেছে পিবিআই। গত ছয় বছর পর চাঞ্চল্যকর রাজিব হোসেন কাজী হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের পর এবার বৃহস্পতিবার আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন যশোর (পিবিআই)। এটা পিবিআই যশোরের সর্বকালের সেরা সাফল্য বলে উল্লেখ করেছেন পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন।

মামলার চার্জশিটে একজন পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জিয়াউর রহমান।

অভিযুক্তরা হলেন, শহরের পুরাতন কসবার আজিজুল হকের ছেলে সজিবুর রহমান, পাগলাদাহ গ্রামের সোহরাব আলী খানের ছেলে হুমায়ন কবীর খান বাবু, বেজপাড়া পিয়ারী মোহন রোডের মৃত মনিরুল হকের ছেলে সাইফুল হক লিটন, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লঙ্কারচর গ্রামের আবুল হাসানের ছেলে পুলিশ সদস্য খারুজ্জামান শিহাব ও লোহাগড়া মঙ্গলহাটা গ্রামের মৃত নুর মিয়ার ছেলে যশোর সদর উপজেলার কিসমত নওয়াপাড়ার বাসিন্দা মো: সালাম। এছাড়া, পুরাতন কসবা নিরিবিলিপাড়ার গোলাম মোস্তফার ছেলে জয়নাল হাওলাদার ও লিচুতলার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে ইব্রাহিম মোল্লাকে এ মামলা থেকে অব্যাহিত চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। সালাম বাদে অন্য সব আসামি বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।

পিবিআই জানায়, ২০২২ সালের ৩০ মে রাতে যশোর কোতোয়ালি থানাধীন পুরাতন কসবা নিরিবিলি এলাকায় ভবন নির্মাণের জন্য মাটি খুড়ার পর একটি নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি পাওয়া যায়। ওই এলাকার বজলুর রহমানের বাউন্ডারি দেয়াল ঘেরা জায়গায় ভবন নির্মাণের জন্য খোঁড়ার সময় পরিত্যক্ত পুরাতন টয়লেটের কুয়ার ভেতর থেকে তা উদ্ধার করা হয়। এরপর পিবিআই ঘটনার জিডি তদন্ত করার জন্য আদালতের অনুমতি নেয়। এরপর শুরু হয় কঙ্কালের পরিচয় জানার তৎপরতা। এক পর্যায় তদন্ত কর্মকর্তা খুঁজে পান রাজিবের চাচা হাসমত আলীকে। এরপর খোঁজ করা হয় তার পরিবারকে। রাজিবের মা মাবিয়া ও বাবা ফারুক হোসেনকে ঢাকার সিআইডি পুলিশের সদর দফতরে নিয়ে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

ডিএনএ পরীক্ষক নাজমুল আলম তুতুল রিপোর্টে মতামত দেন, ওই কঙ্কালটি ফারুক হোসেন ও মাবিয়া দম্পতির জৈবিক সন্তান। এরপর কিছুটা খোলস বের হয়। এ ঘটনায় রাজিবের পিতা কোতয়ালি থানায় মামলা ছেলে রাজিব হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে কঙ্কালটি উদ্ধার হওয়ার স্থানে ইতিপূর্বে কে বা কারা ভাড়া থাকতো এবং উঠাবসা করতো তা জানার চেষ্টা করা হয়। এভাবে বেশ কয়েক মাস পর জানতে পারেন ওই বাড়িতে আব্দুস সালাম নামে এক রিকসা চালক ভাড়া থাকতেন। আব্দুস সালামকে আটক করা হলে তিনি আদালতে রাজিব হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আব্দুস সালামের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেন তদন্ত কর্মকর্তা। একই সাথে এই হত্যার সাথে জড়িত জয়নাল হাওলাদার ও ইব্রাহিম মোল্লাকে আটক করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে রহস্য বের হয়ে আসে।

মামলা তদন্তকালে পিবিআই জানতে পারে, এ হত্যার মুল নায়ক সজিবুর রহমান। তার বাড়িতে রাজিব কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতো। ওই সময় ছাত্রলীগ নেতা সজিবুরের এক আত্মীয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে রাজিবের। ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ রাজিব তার গ্রামের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার চন্দ্রনিমহলে ফোন করে জানান, তিনি বাড়িতে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি বাড়িতে না যেয়ে গোপনে সেই আত্মীয়ের সাথে সময় কাটান। এ ঘটনা সজিবুর দেখে ফেলেন। পরবর্তীতে তাকে ধরে নিয়ে বেধে ব্যাপক মারপিট করা হয়। টানা তিনদিন অভিযুক্ত আসামিদের সাথে নিয়ে মারপিট করে রাজিবকে হত্যা করা হয়। এরপর মৃতদেহ ড্রামে ভরে মাটিতে পুতে রাখা হয়। এর এ কাজে সহযোগিতা করে তৎকালীন যশোর পুলিশ লাইনে কর্মরত সজিবের বন্ধু পুলিশ সদস্য খাইরুজ্জামান শিহাব।

পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, এ ঘটনায় ছিলো না কোনো অভিযোগকারী। ফলে প্রথমেই তাদেরকে হত্যা রহস্য তদন্তে ব্যাপক বেগ পেতে হয়েছে। এছাড়া, এর ক্লু বের করতে পদে পদে তারা বাধাগ্রস্থ হয়েছেন। কিন্তু তাদের মনবল ছিলো রহস্য উন্মোচিত হবেই। শেষমেষ তারা পেরেছেন।

তিনি আরও বলেন, এ সাফল্য পিবিআই যশোরের সেরা সাফল্য। এটা একদিকে যেমন সত্য, তেমনি তার চাকরি জীবনেও এটি তার সেরা অর্জন বলে দাবি করেন। এজন্য পিবিআই যশোর টিমকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

খুলনা গেজেট/কেডি




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন