বুধবার । ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ । ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ভর দুপুরেও ঘন কুয়াশা, তীব্র শীতে জনজীবন বির্পযস্ত

শাহিন আহমেদ, অভয়নগর

অভয়নগরে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে জনজীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। গত দু’দিনে (শনিবার ও রবিবার) সকালে সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে শহর ও গ্রাম-গঞ্জের জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও বাতাসের হাওয়ায় রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষ চলাচল কমে গেছে। হাতে কাজ না থাকায় অভাবী মানুষের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। শীতবস্ত্রের অভাবে হতদরিদ্র মানুষগুলো চরম কষ্টে ছেলেমেয়েদের নিয়ে দিনাতিপাত করছে। তবে এ উপজেলা শীতার্তদের মাঝে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কম্বল বিতরণ করেছে।

তীব্র শীতের কারণে গ্রামাঞ্চলসহ ভবদহে পাড়ের মানুষ পড়েছে সবচেয়ে বেকায়দায় । তাছাড়াও ভৈরব নদের পাড়ে থাকা মানুষসহ পশু পাখির জীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে বিভিন্ন প্রকারের শীতজনিত রোগবালাই। দিনরাত তীব্র শীত ঘনকুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। টানা কয়েকদিন সকাল ও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় গোটা এলাকা।

শনিবার শীতের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে জনজীবন বির্পযস্ত করে তুলেছে। সন্ধ্যার পর থেকে এর ঘনত্ব বাড়ে। রাত ১০টার পর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পুরো এলাকা। একই অবস্থা শনিবার, রবিবার সকালে ও সারা দিন হিমেল হাওয়ার কারণে রাস্তাঘাট ছিল ফাকা। ফলে নওয়াপাড়া চুড়িপট্টি, কাপড়পট্টি, সোনাপট্টি, আকিজ সিটি মার্কেটসহ উপজেলার বিপণি-বিতান, রেলওয়ে স্টেশন, বাস স্টেশন, অটোরিকশা স্ট্যান্ডসহ কোলাহলপূর্ণ স্থানগুলোতে লোকজন নাই বললেই চলে। কাজের তাগিদে বের হওয়া সাধারণ মানুষ শীতের কাপড় গায়ে জড়িয়ে সারাদিন কাজ করতে দেখা গেছে। মহাসড়কে যানবহন চলাচলে লাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে।

কুয়াশা আর তীব্র শীতের কারণে হতদরিদ্র মানুষগুলো আগুন জালিয়ে শীত নিবারন করছে। এলাকায় ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায় গ্রাম। ফুটপাতের সবজি, মাছ, ফলমূল ও শীতের কাপড় বেচা-কেনা না থাকায় ব্যবসায়ীরা তারা দোকান গুছিয়ে বাড়ি চলে যেতে দেখা গেছে অনেকেই। তাছাড়াও রিকশাচালক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরাও ভাড়ার আশায় আর বসে থাকছেন না।

এ বিষয়ে স্টেশন এলাকার রিকশা চালক শহিদুল ফকির বলেন, শীতের কারণে শনিবার থেকে রবিবার ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত রিকশা চালানো সম্ভব হয়নি।

সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন, মাছ বিক্রেতা আতাউর গাজী, মিজানুর রহমান বলেন, কুয়াশার কারণে মানুষজন বের হচ্ছে না। এ কারণে অর্ধেক সবজি ও মাছ বিক্রি হয়নি। কম মূল্যে আড়োতে বিক্রয় করে চলে এসেছি।

থ্রি-হুইলার চালক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, সকাল ৭টার দিকে প্রচুর কুয়াশা পড়েছে। এক হাত দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছিল না। যাত্রী নিয়ে ধীরে গাড়ি চালাতে হয়েছে।

নৌবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, কুয়াশার কারণে সকালে লাইট চালিয়ে ছোট বড় জাহাজ লোড আনলোড করছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আলিমুর রাজিব বলেন, ঘন কুয়াশা, তীব্র শীতের কারণে শ্বাসকষ্ঠ, কাশিসহ বেশ কয়েকজন হাসপাতালে সেবা নিতে এসেছে। তাছাড়াও ১০ জনের করোনা স্যাম্পোল ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আমরা রোগিদের এ বিষয়ে পর্রামশ দিয়ে যাচ্ছি।

বিআইডব্লিউটিএ নওয়াপাড়া শাখার কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ জানান, রাতে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কুয়াশার কারণে ভোরে বেলায় নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশা কেটে গেলে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা কর্মকর্তা কৃষিবিদ গোলাম সামদানী বলেন, বাতাসের আদ্রতা প্রায় ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ হওয়ায় কুয়াশার এত ঘনত্ব বেড়েছে। আবহাওয়ায় উচ্চ বলয় চাপের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে তাপমাত্র সর্বনিম্ন ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তবে জেলার কোথাও কোথাও তা ৮ ডিগ্রী তাপমাত্রা রয়েছে। আলু ও সবজি চাষিদের কুয়াশার কারণে আমরা পরার্মশ দিয়েছি। যে কারণে আলু ও সবজিতে কোন প্রকার ক্ষতি না হয়।

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন