Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
শুক্রবার । ২৫শে জুলাই, ২০২৫ । ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content
বৃহত্তর মোকাম রাজারহাটে চার কোটি টাকার বিক্রি

উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে হতাশ চামড়া ব্যবসায়ীরা

জাহিদ আহমেদ লিটন, যশোর

ঈদুল আজহা পরবর্তী শনিবার দেশের বৃহত্তম চামড়ার মোকাম রাজারহাট ছিল জমজমাট। এদিন হাটে চার কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। তবে হাটে বিপুল পরিমাণ চামড়া উঠলেও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ছিল না। ভালো চামড়ার উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় তারা কম মূল্যে মলিন মুখে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। ঢাকা থেকে ট্যানারি মালিকরা না আসা ও সকালের বৃষ্টি তাদের ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার গোপাল দাস এদিন চামড়ার মোকাম রাজরহাটে এক হাজার পিচ গরু ও ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কাঙ্খিত দাম না পেলেও সব চামড়া বিক্রি করে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে এ ব্যবসা করছেন, কিন্তু চামড়ার এতো কমদাম আগে কখনও দেখিনি। গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করা, লবণ লাগানো এবং পরিবহন খরচ মিলিয়ে চামড়ার দাম প্রতি পিচ আট থেকে নয়শ’ টাকা পড়েছে। সেই চামড়া হাটে এনে একই দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ী সরূপ বিশ্বাস জানান, তিনি সাড়ে ৪শ’ পিচ গরুর চামড়া এনেছেন। বড় চামড়া বিক্রি করেছেন ৮শ’ টাকায়, আর ছোট চামড়া ৪ থেকে ৫শ’ টাকায়। এতে কোন রকম তার পুঁজি টিকে গেছে। তিনি বলেন, ঈদ পরবর্তী প্রথম হাট ছিল শনিবার। হাটে ব্যাপক পরিমাণ চামড়াও উঠেছে। কিন্তু তারা যথাযথ মূল্য পাননি। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা না দেয়ায় কাঙ্খিত পরিমাণ চামড়া তারা কিনতেও পারেননি। এছাড়া এদিন সকালে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ও লকডাউনের কারণে ঢাকাসহ দূরের ব্যবসায়ীরা আসতে না পারায় চামড়ার দাম কমে গেছে। এ কারণে খুচরো ব্যবসায়ীরা লোকসানের শিকার হয়েছেন।

এদিন সকাল থেকেই চামড়ার হাট ছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরগরম। তবে সেই তুলনায় চামড়ার যোগান ছিল কম। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকার জীবন দাস জানান, তিনি ২২ পিচ ছাগলের চামড়া হাটে এনেছিলেন। প্রতি পিচ চামড়া কেনা ছিল ৪০ টাকা। এরপর লবণ ও পরিবহন খরচ রয়েছে। কিন্তু বিক্রি করেছেন একই দামে ৪০ টাকা পিচ হিসেবে। এতে তার লোকসান হয়েছে। অভয়নগর উপজেলার হরিচাঁদ দাস জানান, তিনি ২৪ পিচ গরুর চামড়ার মধ্যে ১০ পিচ বিক্রি করেছেন ৫শ’ টাকায়। আর ১৪ পিচ ৩শ’ টাকা হিসেবে। অথচ তার কেনা ছিল প্রতি পিছ ৫শ’ টাকা দরে। জেলার বাইরের বড় ব্যবসায়ীরা না আসায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

চামড়া ব্যবসায়ী পবন বিশ্বাস জানান, তিনি ৪৩০ পিচ গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন ৯শ টাকা দরে। এতে তার লোকসান না হলেও লাভ হয়নি। খরচ বাদ দিয়ে পুঁজি টিকে গেছে। বাজারের চামড়ার আড়তদার মোস্তাক আহমদ জানান, এদিন তিনি এক হাজার পিচ গরুর চামড়া কিনেছেন গড়ে ৬শ’ টাকা দরে। এ চামড়া ঢাকায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করলে তার লাভ হবে।

চামড়ার স্থানীয় ব্যাপারি শেফার্ড আহমেদ বলেন, ঈদের আগে ঢাকার ট্যানারি মালিকরা তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় স্থানীয় ব্যাপারিরা নগদ টাকার সঙ্কটে রয়েছেন। যে কারণে তাদের চামড়া কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণেও এদিন হাট জমেনি।

যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে রাজারহাট চামড়া ব্যবসায়ীদের ২০ কোটি টাকার উপরে পাওনা রয়েছে। মূলত নগদ টাকার সঙ্কট ও সকালে বৃষ্টির কারণে রাজারহাটের চামড়ার বাজার তেমন জমেনি। তারপরেও হাটে নগদ টাকায় প্রায় ৪ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভালো লাভ করতে না পারলেও তাদের লোকসান হবে না।

রাজারহাট চামড়ার হাটের ইজাদার হাসানুজ্জামান হাসু জানান, ৩/৪ বছর আগেও রাজারহাটে কোরবানি ঈদের হাটে এক লাখ পিচ গরু ও ৫০ হাজার পিচ ছাগলের চামড়া উঠতো। কিন্তু এখন আসছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার পিচ গরু ও ২৫ হাজার মতো ছাগলের চামড়া। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা না আসা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পুঁজি সঙ্কটের কারণে হাট এখন আর তেমন জমজমাট হয়ে উঠছে না।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন