আম্পানের এক বছরেও জরাজীর্ণ রয়েছে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ। দীর্ঘ এক বছর অতিবাহিত হলেও এখনো টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, যথেষ্ট সরকারি বরাদ্দ থাকলেও বাঁধ তৈরিতে গাফিলতি রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে জরাজীর্ণ। গত ২৭ এপ্রিল কপোতাক্ষ নদীর ভেড়িবাঁধ চুইয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে রেখেছে। এখনো শুরু হয়নি স্থায়ী কাজ।
এছাড়া পূর্ব মঠবাড়ি গ্রামের পবনার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ২০০৯ সালের ২৫ মে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। দীর্ঘ ৩ বছর পরে রিং বাঁধ দিতে সক্ষম হলেও আজও হয়নি স্থায়ী সমাধান। কয়রা নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বাড়লেই জরাজীর্ণ বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে।
এ নিয়ে এলাকার হাজারো মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। আম্ফানের ক্ষত শুকিয়ে উঠার আগেই পুনরায় যে কোন মুহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে ডুবে যেতে পারে এলাকার মানুষের ঘর-বাড়ি। আবারো ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, মৎস্য ঘের, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয় সূত্রে ও সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, কয়রার দশহালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিমি রাস্তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া পূর্ব মঠবাড়ি লঞ্চ ঘাট হতে পবনার ক্লোজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেলে লোকালয়ে উপচে পানি প্রবেশ করে। তখন স্থানীয় এলাকাবাসী মেরামতের চেষ্টা করে।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা জরুরি ভিত্তিতে এসব এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ না করলে যে কোন মূহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করবে।
স্থানীয় মৎস্য চাষী নাসির জানান, গত বছর আম্ফানে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তার দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনও সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি লিজ (হারি) নিয়ে ঘের (মৎস্য চাষ) করেন। এবার বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তাকে চরম ক্ষতিতে পড়তে হবে।
পূর্ব মঠবাড়ি গ্রামের পবনা রিংবাঁধের স্লোভে বসবাসকারী দেবাশীষ সানা বলেন, দীর্ঘদিন রাস্তায় মেরামত না করায় রাস্তার বেহাল দশা, জোয়ার একটু বেশি হলে রাস্তা ছাপিয়ে জোয়ারের জল ভিতরে প্রবেশ করে। রাস্তায় কাজ না করলে এবছর বর্ষা মৌসুমে ভেঙ্গে যেতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, বাঁধ মেরামতে সরকারি বরাদ্দ রয়েছে। তবুও কাজ করতে গড়িমাসি করায় আজ এ অবস্থা! আবারো যে কোন মূহুর্তে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পূর্ব মঠবাড়ি লঞ্চ ঘাট হতে পবনা ক্লোজার পর্যন্ত রাস্তা খারাপ আছে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, আশা করি তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, দশালিয়ার কাজটি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভ (জাইকা) দায়িত্বে, তারা কাজ করতে দেরি করছে । এ কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সাপোর্টিং কাজ চলছে। আশা করি তাড়াতাড়ি জাইকা কাজ শুরু করবে।
উল্লেখ্য, উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ গেল বছরের এপ্রিল মাসে জোয়ারের পানি বেড়ে উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে। খবর পেয়েই স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে পানি প্রবেশ বন্ধ করতে পারলেও মে মাসের আম্ফানে শেষ রক্ষা করতে পারেনি। আম্ফানে বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। এর আগে ২০০৯ সালে আইলার সময়ও ওই এলাকা ও পবনার বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই