করোনা মহামারিতেও থেমে নেই যশোরের কৃষকরা। মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ক্ষেতের উৎপাদিত সবজি নিয়ে তারা হাটে আসছেন। তাদের এ উদ্যোগী কর্মকাণ্ডে যশোরাঞ্চলে সবজির সঙ্কট হয়নি। মানুষ স্বাভাবিক দামেই বাজার থেকে বিভিন্ন প্রকার সবজি কিনতে পেরেছেন। যদিও বৃহস্পতিবার যশোরের বারীনগর হাটে গিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সামাজিক নিরাপদ দূরত্বের বিষয়টি চোখে পড়েনি।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সবজির মোকাম যশোরের বারীনগর হাট। যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের কোল ঘেঁষে সাতমাইল বাজারে এ হাটের অবস্থান। সপ্তাহের বৃহস্পতি ও রোববার এ হাটে হাজারো কৃষক ও পাইকারদের সমাগম ঘটে। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে তাদের হাক-ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা হাট। করোনা পরিস্থিতির আগে বারীনগর হাট থেকে প্রতিদিন ৪০/৫০ ট্রাক সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হতো। এসব জেলা থেকে প্রতি হাটেই পাইকাররা আসতেন। কিন্তু বর্তমানে লকডাউন থাকায় সেইসব পাইকাররা হাটে আসতে পারছেন না।
তারপরও যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ আশেপাশের জেলা থেকে পাইকার এসে সবজি কিনে ট্রাক ভরে ঢাকা ও বরিশালে পাঠাচ্ছেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় পাইকাররা সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন। তারা পাওনা টাকা ঠিকমত পাচ্ছেন না। দিনকে দিন তাদের বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে।
এদিকে, করোনা দুর্যোগেও বারীনগর হাট বেশ জমজমাট হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। যদিও এ নিয়ে হাট কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সাজিয়ালি পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা হাটে মাস্ক বিহীন মানুষকে প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন। এছাড়া, ইজারদাররা হাটে আগত মানুষকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করছেন।
এরপরও করোনায় থেমে নেই মানুষের জীবন জীবিকা। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে শত প্রতিকূলতার মাঝে প্রয়োজনের তাগিদেই হাটে আসছেন। তাদের একটাই লক্ষ্য পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য হাটে কোন স্বাস্থ্যকর্মী বা কোন এনজিও সংস্থার কর্মীদের দেখা মেলেনি। ছিল না করোনা প্রতিরোধে তাদের কোন কর্মকান্ড।
হাটে পটল বিক্রি করতে আসা নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী বলেন, তিনি বৃহস্পতিবারের হাটে ৪ মন পটল এনেছেন। প্রতি কেজি ২৮ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছেন। ভালো দাম পেয়ে তিনি খুশি। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে তার তেমন কোন চিন্তা নেই। ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে তার বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।
হাটে এক ভ্যান মুলো নিয়ে আসা শাহাবাজপুর গ্রামের ভ্যানচালক গহর আলী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে তার আয় তিন ভাগ কমে গেছে। আগে যে পরিমাণ সবজি নিয়ে তিনি হাটে আসতেন, এখন তার তিন ভাগের এক ভাগও ওঠে না। এ কারণে তার আয়ও কম হচ্ছে। এছাড়া বারীনগর হাট বাজারে মানুষের উপস্থিতি ও চলাচলও আগের তুলনায় কমে গেছে।
হাটের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী রাখালগাছি গ্রামের ইউপি সদস্য মোবারক আলী বলেন, তিনি বারীনগর হাট থেকে সবজি কিনে ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে পাঠিয়ে থাকেন। লকডাউনের আগেও তিনি প্রতি হাটে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক সবজি পাঠিয়েছেন। কিন্তু এখন তার পরিমান কমে গেছে। বর্তমানে তিনি ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক সবজি পাঠাচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাকে অর্থনৈতিক সমস্যারও সম্মুখিন হতে হচ্ছে। পাইকাররা ঠিকমত টাকা পাঠাচ্ছে না। তার পাঠানো সবজির টাকা বকেয়া পড়ে যাচ্ছে।
এসব বিষয় নিয়ে হাটের ইজারাদার সাজেদুল ইসলাম মিন্টু ও আবু সিদ্দিক বলেন, গ্রামের কৃষকরা স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ততটা সচেতন নন। এ বিষয়ে হাটে তাদেরকে বোঝানো হচ্ছে। এছাড়া হাটে আসা মানুষকে মাস্ক বিতরণ ও স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে। তারা চেষ্টা করছেন শারীরিক নিরাপদ দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি হাটে আসা মানুষরা যাতে মেনে চলে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাজিয়ালি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুকুমার কুন্ডু বলেন, তারা হাটে আসা হাজারো কৃষক ও পাইকারদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও মাস্ক ব্যবহারে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সকাল থেকে শুরু করে হাট চলা অবধি ফাঁড়ির সদস্যরা এ কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র বারীনগর হাট নয়, তারা চুড়ামনকাটি হাট বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছেন। বেঁচে থাকার এ কাজে তিনি সবাইকে সহযোগিতা করার আহবান জানান।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি