খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরে কারখানায় আগুন : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২
  হাইকোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম তদন্তে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৬৫

আম নিয়ে যত কাণ্ড ইবিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্যাম্পাসের গাছ থেকে আম পাড়াকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এখন উত্তাল। আম পাড়ার কারণে সহপাঠী এক শিক্ষার্থীকে তাঁর স্ত্রীর সামনে এক সহকারী প্রক্টর থাপ্পড় মেরেছেন—এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ হিসেবে তাঁরা ঘোষণা দিয়ে আজ শনিবার ক্যাম্পাসের সব গাছ থেকে আরও আম পেড়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, আম পাড়া তাঁদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। প্রতিবাদ হিসেবে এ কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা।

ঘটনার সূত্রপাত গতকাল শুক্রবার। এদিন বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান আলী একই বিভাগের শিক্ষার্থী স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যান। তাঁরা দুজনই ক্যাম্পাসের পাশে শেখপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকেন। বাড়িওয়ালার ১০ বছর বয়সী মেয়েও তাঁদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে ঘুরতে গিয়েছিল।

আম পাড়তে দেখে সহকারী প্রক্টর আরিফুল ইসলাম হাসান আলীকে গাছ থেকে নামতে বলেন। ‘তুই তোকারি’ করে বকাঝকা করতে থাকেন। একপর্যায়ে সহকারী প্রক্টর স্ত্রী ও শিশুর সামনেই তাঁকে থাপ্পড় মারেন এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের গেস্টরুমে তিনজনকেই আটকে রাখেন।

হাসান আলী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী সহকারী প্রক্টরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দেন। তবে তিনি ওই শিক্ষককে চিনতে না পেরে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেন। কিন্তু তখনো শিক্ষক নিজের পরিচয় বা সহকারী প্রক্টর কিছুই পরিচয় দেননি। একপর্যায়ে সহকারী প্রক্টর স্ত্রী ও শিশুর সামনেই তাঁকে ডান গালে থাপ্পড় মারেন এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের গেস্টরুমে তিনজনকেই আটকে রাখেন।

এ সময় সহকারী প্রক্টর তাঁদের পাহারায় সেখানে একজন আনসার সদস্যকে দাঁড় করিয়ে রাখেন। ওই আনসার সদস্যের কাছ থেকে হাসান আলী জানতে পারেন, যিনি তাঁদের ধরে এনেছেন, তিনি আরিফুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর। ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পর সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম যান। তিনি ঘটনার আদ্যোপান্ত শোনার পর তাঁদের গেস্টরুমের বাইরে বের করে নিয়ে আসেন। এ সময় আরিফুল ইসলাম সস্ত্রীক ক্যাম্পাস ছেড়ে বাসায় ফিরে যান। সন্ধ্যায় ঘটনার তদন্ত ও সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন হাসান আলী।

হাসান আলীর দাবি, তিনি কোনো সময়ের জন্যও আরিফুল ইসলামের সঙ্গে কোনো প্রকার খারাপ আচরণ করেননি। স্ত্রী ও ছোট্ট শিশুর সামনে থাপ্পড় মারায় তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন। স্ত্রী ও শিশুটি কেঁদে ফেলে।

এদিকে এ ঘটনায় গতকাল বিকেল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টার ছড়িয়ে পড়ে। তাতে লেখা ছিল ‘২৪ এপ্রিল সারাদিন ক্যাম্পাসে আম পাড়া কর্মসূচি। সবাই আম পাড়তে চলে আসুন ’। সেইমতো শিক্ষার্থীরা আজ ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে সহপাঠী হাসান আলীকে স্ত্রীর সামনে থাপ্পড় মারার প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বিচ্ছিন্নভাবে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে আম পাড়া কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে আম পাড়ার ছবি ফেসবুকে আপলোড করে প্রতিবাদ জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তা হাবিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রতিবাদস্বরূপ ক্যাম্পাসে দুপুর ১২টার দিকে যান। এ সময় তিন-চারজন মিলে ১০ থেকে ১২টি আম পাড়েন। সেই আমগুলো তিনি বাসায় নিয়ে আসেন এবং ইফতারির পর খান।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আম পাড়াটা মূলত উদ্দেশ্যে নয়, প্রতিবাদটাই মুখ্য। একজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের আম পাড়তেই পারে। তাই বলে তাঁকে তাঁর স্ত্রীর সামনে একজন প্রক্টর থাপ্পড় দেবেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যে প্রক্টর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেবেন, সেই প্রক্টরের দায়িত্বহীন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর আরিফুল ইসলাম বলেন, একটা ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার প্রক্টরের কার্যালয়ে উভয় পক্ষ বসে আলোচনা হয়েছে। ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল, সেটা মীমাংসা হয়ে গেছে। থাপ্পড় মারার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার লেভেল কোন পর্যায়ে গেলে একজন শিক্ষক এক কাজটা (থাপ্পড়) করতে পারেন। বলতে গেলে ধৈর্যের সীমা অতিক্রম হয়েছিল এতটুকুই বলব। আমি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গা থেকে সঠিক কাজটাই করেছি বলে মনে করছি।’

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!