রুনা বেগম (৩৫)। পেশায় একজন গৃহিনী। সূর্য ওঠার আগ থেকে মাঝরাত পর্যন্ত বিশ্রামহীন ছুটে চলা যার কাজ। পরিবারের সবার জন্য রান্না করা, ঘর গোছানো, দুই সন্তানের দেখাশোনা, বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুরির যত্ন নেওয়াসহ সংসারের যাবতীয় কাজ যিনি একা হাতেই সামলান। স্বামী এবং শ্বশুরের স্বল্প আয়ে ৬ সদস্যের এই সংসারে দরকার আর একটু স্বচ্ছলতা। তবে বাইরে যেয়ে কাজ করার সুযোগ নেই স্বল্প শিক্ষিত এই নারীর। তাই ভিন্ন উপায়ে সংসার সামলে পরিবারের আর্থিক উন্নয়নে একটি বড় ভ’মিকা রাখছেন এই নারী।
তিনি নিজ বাড়িতেই পালন করছেন দেশি হাঁস, মুরগি, গরু ও ছাগল। এর থেকে উৎপাদিত ডিম, দুধ এবং হাঁস-মুরগির বাচ্চাও বিক্রি করেন তিনি। গরুর গোবর দিয়ে তৈরি করেন বৈড়া/ঘুঁটে (এক প্রকার জ্বালানী)। বিক্রি করেন প্রতি ১শ’ পিস ঘুঁটে ১৪০ টাকা করে। সময় পেলেই বসে যান কাঁথা সেলাই করতে। নানান রকম সেলাইয়ে ফুটিয়ে তোলেন কাঁথার রুপ। প্রতি পিস কাঁথা বিক্রি করেন ৬০০-১৪০০ টাকা। উপার্জিত অর্থ ব্যয় করেন তার সন্তান ও পরিবারের উন্নয়নে।
রুনা বেগম ডুমুরিয়া উপজেলার থুকড়া গ্রামের মোঃ বিল্লাল গাজীর স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অল্প বয়সে বিয়ে দেছে বাপ-মা। লেখাপড়াও বেশিদূর করতি পারিনি। পরিবারে আমার ২টা ছেলেমেয়ে আছে, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আছে। দিন দিন সব কিছুর দাম যা বাড়ছে তাতে আমাগে মত মানুষগে চলা দায়। এজন্যি চেষ্টা করতিছি যাতে ছেলেমেয়েগে একটু ভাল রাখা যায়। তাগে যাতে একটু ভাল পরা আর খাওয়া দিতি পারি। এর থেকে আর বেশি কিছু চাইনে। তবে সংসারের জন্যি এত করেও আমগে মহিলাগে কোনও নাম হয় না।’
শুধু রুনা বেগম নয়। এরকম চিত্র গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই দেখা যায়। সংসারের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার পরও বাড়তি আয়-উপার্জনের জন্য, আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ মেটানোর জন্য কৃষিকাজ সহ বিভিন্ন কুটিরশিল্পের কাজ করে থাকেন।
তবে সারাদিন এই হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেও গ্রামীণ নারীদের আজও মেলেনি শ্রমের স্বীকৃতি। ঘরে-বাইরে নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। সংসারে তো বটেই বাইরে পরিশ্রম করেও নারী বলে হতে হচ্ছে অবমূল্যায়িত। পরিশ্রমের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। গ্রামীণ নারীশ্রমিকরা অশিক্ষা আর অসচেতনতার কারণেই সবক্ষেত্রে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করেন অনেকে।
এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামীণ নারীর অবদান গ্রামীণ অর্থনীতিতে ৫৩ শতাংশ যেখানে পুরুষের অবদান মাত্র ৪৭ শতাংশ। যেখানে পরিবারে মজুরিবিহীন কাজে পুরুষ সময় দেয় আড়াই ঘণ্টা আর নারী সেখানে দিয়ে থাকে আট ঘণ্টা। যেখানে প্রতিদিন নারী পরিবারের কাজ করে ১২টি যা মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অন্তর্ভুক্ত হয় না, আর পুরুষ করে গড়ে ৩টিরও কম কাজ।
খুলনা গেজেট/এনএম