খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ কার্তিক, ১৪৩১ | ২২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহীর সারদায় পুলিশের ২৫০ এসআইকে অব্যাহতি
  নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতে আপিল পুনরুজ্জীবিত করলেন আপিল বিভাগ, এ আদেশের ফলে জামায়াতের আইন লড়াইয়ের পথ খুলে গেল

সংসার সামলিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা হয়ে ওঠার গল্প

একরামুল হোসেন লিপু, দিঘলিয়া

নাসিমা খাতুন জীবন সংগ্রামে সফল এক নারী। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায়। নাসিমার বয়স যখন ১৩, পরিবারের চাপে তখন তাকে বাধ্য হয়ে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। পড়তেন ৮ম শ্রেণীতে। বিয়ে দেওয়া হয় একই জেলার সদর উপজেলার কাজী আঃ জব্বারের সঙ্গে। আব্দুল জব্বার ছিলেন একজন সমাজ সেবক। সংসারের প্রতি তিনি তেমন একটা যত্নবান ছিলেন না। সুতরাং ১৩ বছর বয়স থেকেই সংগ্রামী জীবন শুরু হয় নাসিমা খাতুনের। একদিকে স্বামী সংসার অন্যদিকে পড়াশুনা করার অদম্য বাসনা।

প্রবল ইচ্ছাশক্তি, অদম্য বাসনা এবং মনোবল নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সাথে এসএসসি পাশ করেন। এরপর বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্স-এ অনার্স এবং মাষ্টার্স সম্পন্ন করেন।

পড়াশোনা শেষ করার পর ১৯৯০ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)’র মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাগেরহাট জেলার রামপাল নিজ উপজেলায় স্টেনোগ্রাফার হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯৫ সালে উপজেলা নির্বাচন অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার হিসাবে অত্যন্ত দক্ষতা এবং যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

গত ৬ মার্চ শনিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাচন অফিসে নিজ অফিস কক্ষে বসে এ প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তার সংগ্রামী জীবনের অনেক কথা বলেন। শনিবার সরকারি ছুটি থাকা সত্বেও ১১ এপ্রিল ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালনে অনেক ব্যস্ততার মাঝেও তিনি সময় দেন।

তিনি বলেন, ২০০৩ সালে আমার স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু হয়। স্বামী মারা যাওয়ার সময় আমার বড় মেয়ের বয়স তখন ১২ বছর। সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছিলো। আর ছোট মেয়ে তখন সবেমাত্র জন্মগ্রহণ করেছে। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে অদ্যাবধি সংসার, দুই মেয়ের দেখভাল করা এবং চাকুরি একই সঙ্গে সামলাতে হচ্ছে।

পুরুষ শাসিত সমাজে একজন সরকারি নারী কর্মকর্তা হিসাবে কোন সমস্যা কিংবা কখনও কোন কাজে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা ? জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাকুরি করতে এসে এ পর্যন্ত আমি কোথাও কোন সমস্যা কিংবা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হই নাই। এক্ষেত্রে আমি আমার পরিবার এবং স্বামীর কাছ থেকে অনেক সাপোর্ট পেয়েছি।

উপজেলা নির্বাচন অফিসারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও আমি দক্ষতার সাথে সব কিছু সামাল দিয়ে যাচ্ছি। আগামী ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে একজন নারী অফিসার হিসাবেও আমাকে উপজেলার ৩ ইউনিয়ন দিঘলিয়া, বারাকপুর এবং গাজীরহাটের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে অনেক কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও সীমাবদ্ধতার কারণে সেগুলো সম্ভব হয় না।

সংসার এবং চাকরি সামাল দিয়েও বড় মেয়ে নুসরাত জাহানকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনি পেশায় মাস্টার্স সম্পন্ন করিয়েছি। ছোট মেয়ে খুলনা সিটি কলেজে প্রথম বর্ষে পড়াশুনা করছে। বর্তমানে নাসিমা খাতুন ছোট মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাসায়।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!