দীর্ঘ প্রায় ৩৫ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাউনিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় কপোতাক্ষ নদে প্রবল স্রোতে উল্টে যাওয়া ট্রলার থেকে নিখোঁজ হওয়া তিন শ্রমিকের এখনও সন্ধান মেলেনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের উপস্থিতিতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফন্স এর উদ্যোগে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। কিন্তু বিকাল ৫টা পর্যন্ত নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধান মেলেনি। এদিকে নিঁখোজ পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে সেখানে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
নিখোঁজ শ্রমিকরা হলো, আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের বকচর গ্রামের মনজিল গাজীর ছেলে বাবর আলি গাজী (৪৫), একই গ্রামের ফজলে সানার ছেলে শফিকুল সানা (৪৮) ও পুইজালা গ্রামের মানিক মোড়লের ছেলে আব্দুল আজিজ মোড়ল (৫০)।
এর অগে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের প্রতাপনগরের কল্যাণপুর এসে ক্ষতিগ্রস্ত নিখোঁজ তিন পরিবারের সদস্যদের কাছে মাথা পিছু ১০ হাজার টাকা, ৫০ কেজি’র এক বস্তা চাউল ও একটি করে কম্বল তুলে দেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলীফ রেজা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ খান, প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন ও শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল।
প্রসঙ্গতঃ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে কপোতাক্ষ নদের পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে কুড়িকাউনিয়া এলাকায় বিশালাকৃতির খাল তৈরি হয়। গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সেনা বাহিনীর তত্তাবধায়নে পাউবো’র নিয়োগকৃত ঠিকাদারের মাধ্যমে ভাঙ্গন পয়েন্ট মেরামতের কাজ চলছে। বিভিন্ন স্থানের শ্রমিকরা ঠিকাদারের অধীনে এই ভাঙ্গন পয়েন্ট গত আড়াই মাস ধরে কাজ করছে। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্র“য়ারি) ভোর ৬টায় দিকে একটি ট্রলারে করে ১২ জন শ্রমিক বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজে যাওয়ার সময় ভাটার টানে স্রোতের মুখে পড়ে ভাঙ্গন পয়েন্টে ট্রলাটি ডুবে যায়। এসময় ট্রলারটিতে থাকা ১২ জনের মধ্যে নয়জনকে তাৎক্ষনিক উদ্ধার করা সম্ভব হলেও তিনজন নিখোঁজ থাকে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও সেনা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধারে মঙ্গলবার দিনভর অভিযান অব্যহত রাখে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদরেকে উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও ফায়ার সিভিল ডিফেন্স এর ডুবুরীরা।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও সেনা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও তাদরে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়েছে। বুধবার দ্বিতীয় দফায় নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। কিন্তু বিকাল ৫টা নাগাদ তাদের কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স এর উপসহকারি পরিচালক তারেক হাসান ভুঁইয়া জানান, খুলনা থেকে ডুবুরী আনার পর দুপুর একটা থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। নদীতে প্রবল স্রোত থাকা ও আলো স্বল্পতার কারণে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বুধবার সকাল থেকে আবারো উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়েছে। অভিযান অব্যহত রয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই