যশোরের চৌগাছা ও বাঘারপাড়া পৌরসভায় ফের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল ও কামরুজ্জামান বাচ্চু। রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলেন।
চৌগাছায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল ৬ হাজার পাঁচশ’ ৪৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত সমর্থিত কামাল হোসেন পেয়েছেন ২ হাজার নয়শ’ ৭৬ ভোট। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হালিম চঞ্চল হয়েছেন তৃতীয়। তিনি পেয়েছেন এক হাজার তিনশ’ ৬৯ ভোট। অপর মেয়র প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাত পাখা প্রতীকের প্রার্থী শিহাব উদ্দিন পেয়েছেন সাতশ’ ৭৪ ভোট।
নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা হলেন, এক নম্বর ওয়ার্ডে ফাতেমা বেগম, দু’নম্বর ওয়ার্ডে জোসনা খাতুন এবং তিন নম্বর ওয়ার্ডে জহুরা খাতুন।
নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাতটিতে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত দু’জন এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাতজন। বিএনপি সমর্থিত বিজয়ীরা হলেন এক নম্বর ওয়ার্ডে আনিছুর রহমান (৬৮৫ ভোট) এবং দু’নম্বর ওয়ার্ডে শাহিদুল ইসলাম (৬৮৯)। আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিজয়ীরা হলেন তিন নম্বর ওয়ার্ডে সোহেল রানা (৮৩০), চার নম্বর ওয়ার্ডে সিদ্দিকুর রহমান (৭৩৯), পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে জি এম মোস্তফা (৯৯০), ছয় নম্বর ওয়ার্ডে আতিয়ার রহমান (৮৮৮), সাত নম্বর ওয়ার্ডে রুহুল আমিন (৩৮৭), আট নম্বর ওয়ার্ডে শাহিনুর রহমান (৬৭৭) এবং নয় নম্বর ওয়ার্ডে আনিছুর রহমান (২২১)।
এর আগে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চৌগাছা পৌরসভা নির্বাচনে দশটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট গ্রহণকালে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। দিনভর কেন্দ্রগুলো ভোটারদের উপস্থিতিতে ছিল সরগরম। পুরুষ ভোটারের পাশাপাশি নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। দুপুরে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান ও পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। তারা সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে, দুপুর ১২টার দিকে মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে সাধারণ কাউন্সিলর দু’প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পাওয়ার সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোট কেন্দ্রের পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনেন। হাতাহাতির ঘটনার পরও স্বাভাবিকভাবেই ভোট গ্রহণ অব্যাহত থাকে। তবে দুপুর ১টার পর থেকে ভোটারের উপস্থিতি কমতে থাকে। দু’টোর পর থেকে ভোটারদের উপস্থিতি ফের বাড়তে থাকে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্টাইকিং ফোর্স ও পুলিশের ভূমিকা ছিল লক্ষনীয়। শারীরিকভাবে অসুস্থ ভোটার ও বয়স্ক ভোটাররা ভ্যানে চড়ে ভোট দিতে এসেছিলেন।
বাঘারপাড়া পৌরসভার নির্বাচনে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া রোববার শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এদিন সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। কেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকেই ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কামরুজ্জামান বাচ্চু দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন চার হাজার দুশ’ ৫৫ ভোট। তার নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের সিদ্দিকী জগ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন এক হাজার একশ’ আট ভোট। ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপি প্রার্থী আব্দুল হাই মনা দুশ’ ৭৪, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইনামুল হক হাতপাখা প্রতীকে দুশ’ ৫২ এবং লাঙ্গল প্রতীকের মহম্মদ আলী পেয়েছেন ২৮ ভোট।
কাউন্সিলরদের মধ্যে বিজয়ীরা হচ্ছেন এক নম্বর ওয়ার্ডে ফয়সাল আহমেদ (৪০৬ ভোট), দু’নম্বর ওয়ার্ডে শাহীন আলম (৫৫৬), তিন নম্বর ওয়ার্ডে খবিউর রহমান (৩৯৩), চার নম্বর ওয়ার্ডে শরিফুল ইসলাম শরিফ (১৯৬), পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে ওলিয়ার রহমান (২৬১), ছয় নস্বর ওয়ার্ডে সিরাজুল ইসলাম উজ্জল (৩৩৩), সাত নম্বর ওয়ার্ডে শহিদুল ইসলাম (৪০৪), আট নম্বর ওয়ার্ডে শহিদুল ইসলাম (৩৭২) ও নয় নম্বর ওয়ার্ডে মোস্তাক আহমেদ (২৭৬)।
এদিকে, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে নির্বাচিতরা হলেন, এক নম্বর ওয়ার্ডে সম্পা রানী সরকার (১০৪৫), দু’নম্বর ওয়ার্ডে নমিতা রানী শর্মা (৬৬১) এবং তিন নম্বর ওয়ার্ডে তাসলিমা খাতুন (৯০১)।
নিবাচনে সাত হাজার চারশ’ ৯২ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ছয় হাজার দুশ’ ৪৬ জন। ভোট বাতিল হয়েছে তিনশ’ ২৯টি।
পাঁচজন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও এই নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নয়জনসহ মোট ৪৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।