খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনি রোডম্যাপ দেয়ার আহবান বিএনপির: মির্জা ফখরুল
  চলমান ইস্যুতে সবাইকে শান্ত থাকার আহবান প্রধান উপদেষ্টার: প্রেস সচিব
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৮

পাঁচ বছর পর দৌলতপুরের মিঠু হত্যার রহস্য উন্মোচন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আলী হোসেন মিঠু
আলী হোসেন মিঠু

বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে দুই বন্ধু বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে প্রথমে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করা হয়। পরে গলায় রশি বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা। লাশ গুমের উদ্দেশ্যে বস্তায় ভরে মোটরসাইকেলে করে গাবখান ব্রীজের উপর থেকে নদীর মাঝে ফেলে দেয়া হয়। এমনই লোমহর্ষক ও পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার হন খুলনার দৌলতপুরের আলী হোসেন মিঠু। ঘটনাটি ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বরের। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর মামলা দায়ের হলেও ঘটনার ৫ বছর পর আলোচিত মিঠু অপহরণ ও হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে খুলনা সিআইডি। আর মামলার এক আসামীর শালিকার সাথে প্রেমের সম্পর্কের জেরেই মিঠুকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডে জড়িত তিন আসামী গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমনটাই তথ্য পেয়েছেন খুলনা সিআইডি।

এ বিষয়ে খুলনা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান জানান, দৌলতপুরের আলোচিত আলী হোসেন মিঠু হত্যা মামলার রহস্য ৫ বছর পর উন্মোচন করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেফতার ৩ জন আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মিঠুকে হত্যার বিস্তারিত তথ্য পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত করা হবে।

মঙ্গলবার (২ ফেব্র“য়ারি) খুলনা সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, খুলনার দৌলতপুরের আলোচিত আলী হোসেন মিঠু অপহরণ ও হত্যার রহস্য ৫ বছর পর উন্মোচন করল খুলনা সিআইডি। ভিকটিম আলী হোসেন মিঠুকে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে তার কথিত বন্ধু রিয়াজুল ইসলাম ওরফে আহাদ শেখ(৩৫), মোঃ রাশেদুল ইসলাম(৩২) ও মোঃ সুমন মল্লিক(৩৫) কৌশলে খুলনা থেকে মোটরসাইকেল যোগে ঝালকাঠির রাজাপুর নিয়ে গলায় রশি পেচিয়ে হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে ঝালকাঠি গাবখান ব্রীজ থেকে ফেলে দেয় বলে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামী মোঃ রাশেদুল ইসলাম, সুমন মল্লিক এবং মেহেদি চৌধুরি ওরফে ইমরান।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর আসামী রাশেদুল ইসলাম ও রিয়াজুল ইসলাম ভিকটিম আলী হোসেন মিঠুর বাড়ীতে এসে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে মিঠুকে নিয়ে ৩ জনে মিঠুর মোটরসাইকেলে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে মিঠু আর ফিরে না আসায় আলী হোসেন মিঠুর বাবা মোঃ এনামুল সিকদার রিপন বাদী হয়ে ২৮ নভেম্বর দৌলতপুর থানার মামলা (নং-১৯) ধারা-৩৬৪/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন। মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করেন। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তভার সিআইডিতে আসে।

গ্রেফতার মেহেদি চৌধুরি ওরফে ইমরান

সিআইডি খুলনার তদন্তকারী অফিসার এসআই মোঃ রফিকুল ইসলাম তদন্তকালীন চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি খুলনার রূপসা থানাধীন বাগমারা এলাকা থেকে দীর্ঘদিন পলাতক থাকা এজাহারনামীয় ১ নং আসামী মোঃ রাশেদুল ইসলামকে (৩২) গ্রেফতার করেন। পরবর্তীতে আসামী মোঃ সুমন মল্লিককে (৩৫) গত ৫ জানুয়ারি রূপসা থানাধীন বাধাল গ্রাম থেকে গ্রেফতার করেন এবং আরেক আসামী ইমরান শেখ ওরফে মেহেদি চৌধুরীকে (৩৪) গত ২৫ জানুয়ারি ঝালকাঠি সরকারী কলেজের সামনে থেকে গ্রেফতার করেন।

এ মামলার এজাহারনামীয় ২ নং আসামী রিয়াজুল শেখ আহাদের শালিকা (১৮)-এর সাথে ভিকটিম আলী হোসেন মিঠু’র প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এজাহারনামীয় ২ নং আসামী রিয়াজুল শেখ আহাদ তার শালিকা এবং ভিকটিম মিঠুর এই প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। সে মিঠুকে তার শালিকার সাথে মেলামেশা করতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু মিঠু তার কথা শোনেননি। এ কারণে সে মিঠুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

আহাদ একজন পেশাদার অপরাধী ও খুন, অস্ত্রসহ একাধিক মামলার আসামী। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আহাদ এবং ১ নং আসামী রাশেদুল মিঠুর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘটনার দিন ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর রাশেদুলের মোবাইল নম্বর দিয়ে আহাদ ভিকটিম মিঠুকে ফোন করে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে আলী হোসেন মিঠুর বাড়ী এসে ভিকটিমের এফজেড মোটরসাইকেলে তিনজন ঝালকাঠি যায়। পূর্বে সেখানে অবস্থানরত আসামী সুমন মল্লিক এবং ইমরান শেখ ওরফে মেহেদি চৌধুরী মিলে ইমরান শেখের খালু মৃত বারেক ডিলারের পরিত্যাক্ত বাসায় ঝালকাঠি থানাধীন কেপায়েত নগর গ্রামে সবাই মিলে কোমল পানীয় (স্পীড)-এর সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে গলায় রশি বেঁধে শ্বাসরোধ করে ভিকটিম মিঠুকে হত্যা করে। হত্যার পর মিঠুর লাশ একটি বস্তায় ভরে ভিকটিম মিঠুর মোটরসাইকেলে করে গাবখান ব্রীজের উপর থেকে নদীর মাঝে ফেলে দেয়।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!