ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ছয় বছর বয়সী শিশুকন্যা মাহমুদা খাতুনকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ উঠেছে সৎ মা হুমাইরা খাতুনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিশুর মৃত্যু হয়। শিশু মাহমুদা কোটচাঁদপুর উপজেলার ভোমরাডাঙ্গা গ্রামের শাহিন মোল্লার মেয়ে। এর আগে, বুধবার দুপুরে গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান তার বাবাসহ স্বজনরা। এসময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শিশু মাহমুদাকে চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১ মার্চ সন্ধ্যার দিকে সবার অগোচরে নিজ বাড়িতে সৎ মা হুমাইরা খাতুন কোমল পানীয়র সঙ্গে বিষ মিশিয়ে শিশুটিকে পান করান। বিষক্রিয়ার কারণে শিশুটির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। বিষয়টি জানাজানি হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে যশোর জেনারেল হাসপাতাল এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গত মঙ্গলবার শিশুটিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর আবারও তার অবস্থার অবনতি হলে গত বুধবার তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিশুর বাবা শাহিন মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ছয় মাস আগে বিদেশে থাকাকালীন আমার এলাকার জিয়ারুল ইসলামের মেয়ে হুমাইয়ার সঙ্গে মোবাইলের মাধ্যমে বিয়ে হয়। আমি গত দুমাস আগে বিদেশ থেকে বাড়ি এসেছি। মেয়ে ১ মার্চ সন্ধ্যায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সে নিজেই জানায় তাকে কোমল পানীয় পান করান সৎ মা।
তিনি আরও বলেন, মেয়ের জন্মের সময় তার মায়ের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে আমার দাদির কাছে থাকতো সে। মেয়ে হত্যার বিচার চাই। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে বুধবার আমি কোটচাঁদপুর থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। পুলিশ কোনো অভিযোগ নেয়নি।
শাহিনের দাদী সকিনা বেগম বলেন, মাহমুদার জন্মের সময় তার মা আফরোজা খাতুন মারা যায়। এরপর থেকে আমিই তাকে লালন-পালন করে বড় করেছি। ওর বাবা শাহিন সৌদি আরবে অবস্থানকালে একই গ্রামের জিয়ারুলের মেয়ে হুমাইরাকে মোবাইলে বিয়ে করে। প্রায় দুই মাস আগে সে দেশে ফিরে তাকে বাড়ি আনে। সে কখনই মাহমুদাকে ভালো চোখে দেখতো না। কিন্তু বিষ খাইয়ে হত্যা করবে তা আমরা কেউ ভাবতেও পারিনি। আমি হুমাইরার শাস্তি চাই।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আল ইমরান জুয়েল বলেন, বিষক্রিয়ায় শিশুটির মুখ থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিশুটি তার আগেই মারা গেলো।
ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কোটচাঁদপুর সার্কেল) মো. মুন্না বিশ্বাস বলেন, বুধবার মেয়ের বাবা থানায় এসেছিলেন। সে সময় আমিও থানায় ছিলাম। মেয়ের আগে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এরপর বিষপানে যে অসুস্থ হয়েছে, চিকিৎসকের কাছ থেকে সেই সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে বলা হয়।
তিনি আরও বলেন, মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল থেকে কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের কাছে কোনো সার্টিফিকেট ছিল না। এছাড়া সৎ মা অর্থাৎ হুমাইরা খাতুনও নাকি বিষপানে অসুস্থ হয়ে কোথাও চিকিৎসাধীন আছেন বলে জেনেছি।
শিশু মাহমুদা খাতুন মারা গেছে জানালে তিনি বলেন, ডেট সার্টিফিকেট নিয়ে ওর পরিবার থানায় এলে আমরা মামলাসহ যাবতীয় আইনগত সহায়তা দেবো।
খুলনা গেজেট/ টিএ