গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত ও দেশত্যাগী শেখ হাসিনা সরকার আমলে যশোরে নিয়োগ ১৪ জনের ওএমএস ডিলারশিপ বাতিল হচ্ছে। এসব ডিলার সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। নতুন করে যশোরে ওএমএস ডিলারশিপ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে খাদ্য অধিদপ্তর।
যশোর জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকার আমলে জেলায় দলীয় তদবিরের মাধ্যমে ৪২ জনকে ওএমএস ডিলারশিপ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিসিকসহ যশোর পৌর এলাকায় ১৪ জন, কেশবপুরে ৪ জন, মণিরামপুরে ৪ জন, অভয়নগরে ৪ জন, বাঘারপাড়ায় ৩ জন, চৌগাছায় ৪ জন, ঝিকরগাছায় ৩ জন, বেনাপোলে ৪ জন ও শার্শায় ২ জনকে ওএমএস ডিলারশিপ দেওয়া হয়। তবে বিসিকসহ যশোর পৌর এলাকায় ১৪ জনের খাদ্যপণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলমান থাকলেও অন্য স্থানগুলির ডিলারদের কার্যক্রম অনিয়মিত ছিলো। যশোর পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ১৪ জন ডিলারদের খাদ্য বিভাগ থেকে চাল ও আটা সরবরাহ করায় তারা সরকারি বন্ধের দু’দিন বাদে বাকি ৫ দিন নিয়মিত খাদ্যপণ্য বিক্রি করতেন। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্য স্থানগুলির ডিলারদের খাদ্যপণ্য সরবরাহ না করায় তারা বিক্রি করতে পারতেন না। বর্তমানে সরকারি বেধে দেয়া দরে ডিলাররা জনপ্রতি ৫ কেজি আটা (প্রতি কেজি ২৪ টাকা) ও ৫ কেজি চাল (প্রতি কেজি ৩০ টাকা) বিক্রি করছে। যার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে গরীব মানুষেরা।
যশোর পৌরসভা এলাকায় যাদেরকে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দলীয় টিকিটে ওএমএস ডিলারশিপ দেওয়া হয় তারা হলেন, শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়া ঢাকা রোড এলাকায় আবুল কাশেম বাবু, পূর্ব বারান্দী সরদারপাড়ায় হুমায়ুন কবির নাহিদ, ঘোপ সেন্ট্রাল রোডে রবিউল ইসলাম, হাটখোলা রোডে শ্যামল কুমার সাহা, পুরাতন কসবা আব্দুল আজিজ রোডে হাসান ইকবাল, খড়কি কবরস্থান এলাকায় রোকন ব্যাপারী, ষষ্ঠীতলা মুজিব সড়কে লাইজুজ্জামান, শংকরপুর চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ে বাহাউদ্দিন, রেল রোড চার খাম্বার মোড়ে তোতা মিয়া, বেজপাড়া গুলগুল্লার মোড়ে গোলাম মোস্তফা, শংকরপুর জমাদ্দার পাড়ায় ইব্রাহিম খাঁন, বকচর হুশতলা খুলনা রোডে সালাউদ্দিন, পশ্চিম বারান্দী নাথপাড়ায় ইউসুফ আলী বিশ্বাস ও ঝুমঝুমপুরস্থ বিসিক এলাকায় নিতাই চন্দ্র সাহা। রাজনৈতিক বিবেচনায় ও তদবিরে ওই সময় তাদেরকে ওএমএস ডিলারশিপ দেওয়া হয়েছিলো বলে সূত্রটি দাবি করেছে।
যশোর খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত ওই ১৪ জনের ডিলারশিপ বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বর্তমানে শহরের ৯টি ওয়ার্ডে নতুন করে ১২ জনকে ডিলারশিপ দেওয়া হবে। গত ২৩ অক্টোবর জেলা ওএমএস কমিটির সভায় নতুন করে ১২ জনকে ডিলারশিপ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষ্যে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতর থেকে ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ডিলারশিপের জন্য আগ্রহী ২৩৫ জন নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করেন। সোমবার ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিলো। দুপুর পর্যন্ত ১৫৮টি ফরম জমা হয় বলে জানা গেছে। এদের মধ্য থেকে বাছাই করে নতুন ডিলার নিয়োগ করা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান বলেন, শহরের গরীব মানুষের মাঝে খাদ্যপণ্য বিক্রির কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সেই জন্য নতুন ডিলার নিয়োগের আগ পর্যন্ত পুরনো ডিলারশিপ বাতিল করা হচ্ছে না। তবে নতুন ডিলার নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হলে পুরনো ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। তখন নতুন ডিলারের মাধ্যমেই শহরের ৯টি ওয়ার্ডে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ভুতুর্কির চাল ও আটা জনগন কিনতে পারবেন বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম