খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে দুই শিক্ষার্থী নিহত
  ঝিনাইদহে ২ ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালকের মৃত্যু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

খুলনায় ১১ দফা দাবিতে পুলিশের কর্মবিরতি ও শোক র‍্যালি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ দফা দাবিতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সদস্যদের কর্মবিরতি ও শোক র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকাল সোয়া ৩টার দিকে পুলিশ লাইন্সে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

পুলিশ সদস্যরা বলেন, “আমরা কারো শত্রু বা প্রতিপক্ষ না। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করি। আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে লাঞ্ছিত হই।”

তারা বলেন “আমরা জনতার পুলিশ হতে চাই। আমরা কোনো রাজনৈতিক নেতা বা কারও পেটোয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করতে চাই না। আপনারা যারা পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় বা পুলিশের ওপর আক্রমণ করতেছেন, তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের এভাবে আর আক্রমণ করবেন না। আমরা আপনাদেরই সন্তান, আপনাদেরই ভাই। আমরা রাস্তায় বের হতে পারি না। আমাদের সহকর্মীদের বিভিন্নভাবে হত্যা করা হচ্ছে। হত্যা করে তাদের লাশ ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে, পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ডিউটি করতে গিয়ে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। যার কারণে আমরা কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছি। আমরা যারা অধস্তন কর্মচারী তারা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের অর্ডার মানতে বাধ্য থাকি। তারা তাদের সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় আমাদের বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে। আমাদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করা হয়। না হলে আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।

পুলিশের সদস্যরা আরও বলেন, আমরা ছাত্র-জনতার বিপক্ষে নই। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অর্ডার পালন করতে গিয়ে হয়তো তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়েছে। কিন্তু আমরা কখনোই জনগণের বিপক্ষে নই। আমাদের বাধ্য করা হয় জনগণের বিপক্ষের দাঁড়াতে। আমাদেরকে যারা জনগণের শত্রু বানিয়েছে তাদের বিচার হোক, এটা আমাদের দাবি।”

চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশ সদস্যদের ১১ দফা দাবিঃ

১. (ক) স্বাধীন কমিশন গঠন, পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করে দলীয় প্রভাবমুক্ত জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে। আমরা যে রঙের ইউনিফর্ম পরিধান করে কলঙ্কিত হলাম সেই পোশাকের রং পরিবর্তন করে কনস্টেবল থেকে আইজি পর্যন্ত একই ড্রেস কোড করতে হবে।
(খ) আমাদের সকল পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এর সাথে সাথে যে সকল সিনিয়র অফিসাররা ক্ষমতালোভী দালাল পুলিশ অফিসারদের কারণে আমাদের শত শত পুলিশ সদস্য ও সাধারণ ছাত্র-জনতা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদেরকে গ্রেপ্তার করে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিচার করতে হবে। তাদের অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।

২. (ক) চলমান সহিংসতায় যে সকল পুলিশ সদস্য আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যে সকল সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জানমালের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন এবং যাদের আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার বিভাগীয় ব্যবস্থা অথবা হয়রানি করা যাবে না।
(খ) সকল পুলিশ সদস্যদের অন্যান্য সংস্থার চাকরির মতো শ্রম আইন অনুযায়ী ৮ ঘণ্টা কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যদি ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে ওভারটাইম হিসেবে গণ্য করতে হবে।

৩. ইন্সপেক্টর থেকে ৬০% এবং ৪০% এএসপি পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে। পদোন্নতির জটিলতা নিরসনের জন্য সকল পদে পদোন্নতির জন্য সুপার নিউমারারি চালু করতে হবে। ন্যূনতম পুলিশ সুপার পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। অধস্থন পুলিশ সদস্যদের টিএ/ডিএ প্রদান করতে হবে। সোর্সমানি প্রদান করতে হবে। ঝুঁকি ভাতা বেসিকের ৭০% দিতে হবে এবং ফ্রেশ মানি পুলিশ সদস্যের ব্যাংক হিসাবে দিতে হবে।

৪. আমাদের সকল পুলিশ সদস্য ও পরিবারের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত চিকিৎসা করা হলে তাহার ভাউচার অনুসারে কল্যাণ তহবিল থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৫. বিভাগীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে একবার পরীক্ষায় পাস করার পরে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা এবং অধস্থনদের পদোন্নতি বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনে সুপার নিউমারারি পদ সৃজন করতে হবে।

৬. অধস্থন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে পিআরবি অনুসারে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে হবে ও ব্যক্তিগত কাজে কোনো সদস্যকে ব্যবহার করা যাবে না। কনস্টেবল থেকে সকল পর্যায়ের অফিসারদের পোস্টিংয়ের বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।

৭. সার্জেন্ট এবং সাব-ইন্সপেক্টরদেরকে পিএসসির অধীনে একই নিয়োগের মাধ্যমে সকল ইউনিটে পদায়ন করতে হবে। বর্তমানে কর্মরত সার্জেন্টদেরকে তদন্ত ক্ষমতা দিতে হবে ও এটিএসআইকে এসআই নিরস্ত্র হিসেবে সমন্বয় করতে হবে। জনগণের স্বার্থে এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্রাফিক বিভাগের বাণিজ্য বন্ধ করা এবং মালামাল টার্গেট প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৮. কমিউনিটি ব্যাংক এবং সকল কল্যাণ তহবিলের সুস্পষ্ট হিসাব প্রতি বছর সকলকে প্রদান করতে হবে। লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ৬% এর নিচেই নিয়েই আসতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সমন্বয় করতে হবে।

৯. (ক) নবম গ্রেড থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে ষষ্ঠ গ্রেড নিশ্চিত করতে হবে এবং একই পদে সর্বোচ্চ ছয় বছরের মধ্যে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।
(খ) ইন্সপেক্টর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাকরি হারালে সকলেই পেনশনসহ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত এই সুবিধা দিতে হবে। সারা বাংলাদেশে যে সকল সদস্যদের বরখাস্ত করা হয়েছে তাদেরকে মানবিক কারণে বিবেচনা করতে হবে।

১০. (ক) প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের প্রতিবছর ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটির পাশাপাশি ২ মাস অর্জিত ছুটি বাধ্যতামূলক ভোগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
(খ) প্রত্যেক পুলিশ সদস্য নিজ রেঞ্জে পর্যায়ক্রমে পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অধস্থন পুলিশ সদস্যের ১০০% আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

১১. (ক) পুলিশের সকল সদস্য সকল ইউনিটে চাকরি করার সুযোগ থাকতে হবে। স্বায়ত্তশাসিত এবং টেকনিক্যাল বলে কোন ইউনিট থাকবে না ও সবাইকে সব ইউনিটে বদলির সুযোগ থাকতে হবে। পুলিশ সুপারের নিচে বডিগার্ড অর্ডারলি নিয়ম বন্ধ করতে হবে।
(খ) প্রত্যেক ইউনিট হতে সমন্বয় করে নতুন করে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন গঠন করতে হবে এবং কনস্টেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুলিশ সদস্যদের দাবিগুলো বিবেচনা করে দ্রুত মেনে নেবেন বলে আন্দোলনরত কেএমপি’র পুলিশ সদস্যরা আশা প্রকাশ করেন। এ সময় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল ইউনিটের অফিসার ও ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!