খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

সাবেক স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলীর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য শেখ রাজ্জাক আলীর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার।  ২০১৫ সালের ৭ জুন দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।

শেখ রাজ্জাক আলী বাংলাদেশের বিশেষ করে খুলনার রাজনীতির মাঠে একটি অন্যতম নাম। তবে রাজনীতির বাইরে তিনি দেশের একজন খ্যাতনামা আইনজীবী ও সমাজসেবক। পিছিয়ে পড়া খুলনা শিক্ষাঙ্গনে তার ভূমিকা চিরদিন খুলনাবাসী মনে রাখবে। খুলনা জেলার শিক্ষা বিস্তারে তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। শুধু মাত্র তার প্রতিষ্ঠিত খুলনা ‘ল’ কলেজ হতে আইনে ডিগ্রি নিয়ে শত শত পুরুষ ও মহিলা আইনজীবী বিভিন্ন বারে ভূমিকা রেখে চলছে।

তিনি খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার হিতামপুর গ্রামে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ আগস্ট এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে শেখ রাজ্জাক আলী জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে অর্থনীতিতে ও ১৯৫৪ সালে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর এখান থেকেই এলএলবি সম্পন্ন করেন।

পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন আইনজীবী। তিনি ১৯৫৮ সালে খুলনা জেলা জজকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্ট বারের সদস্য এবং ১৯৬৪ সালে খুলনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি খুলনা ল’কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাধ্যক্ষ এবং পরবর্তীতে ২৫ বছর এ অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় সক্রিয়ভাবে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে যোগ দিলেও রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি মওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সঙ্গে যুক্ত হয়ে; এরপর তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এ যোগ দেন এবং ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে জাসদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

১৯৭৮ সালে তিনি বিচারপতি সাত্তারের নেতৃত্বে গঠিত জাগদল-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন এবং ১৯৭৯ সালে এই দলের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) করা হলে সে বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ আসন থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। একই দল থেকে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালেও তিনি খুলনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান; পরে এ বছরের ৫ এপ্রিল ডেপুটি স্পিকার ও ১২ অক্টোবর স্পিকার নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে শ্রীলঙ্কার কলোম্বোতে অনুষ্ঠিত প্রথম সার্ক স্পিকার্স সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন ও সার্ক স্পিকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তার সভাপতিত্বেই জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি ২০০২ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের কয়েক দিন আগে ২০০৬ সালে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এরপর তিনি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ গঠিত এলডিপিতে যোগ দেন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং পরবর্তীকালে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন। তবে এলডিপি ভেঙে গেলে তিনি রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।

সমাজ সংস্কারক সম্পাদনা

শেখ রাজ্জাক আলী সিটি ল’কলেজ, খুলনা; সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয়, খুলনা; সবুরন্নেসা মহিলা কলেজ, খুলনা; বয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খুলনা; টুটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খুলনা; পাইকগাছা ডিগ্রি কলেজ, খুলনা; শহীদ জিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাইকগাছা, খুলনা; বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল, শিরোমণি, খুলনা; সিটি ল’কলেজ মসজিদ, খুলনা; হিতামপুর জামে মসজিদ, খুলনা এবং শাহ্ জাফর আউলিয়া মাজার সংলগ্ন মসজিদ, কপিলমুনি, খুলনার প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তিনি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ, খুলনা; খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; খুলনা মেডিকেল কলেজ; খুলনা মহিলা আলিয়া মাদ্রাসা ও হাজী ফয়েজউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বয়রা, খুলনা’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

শেখ রাজ্জাক আলী ছিলেন Bangladesh Legal Aid and Services Trust (BLAST)-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি।

পারিবারিক জীবন

শেখ রাজ্জাক আলী ১৯৫৩ সালে অধ্যাপক বেগম মাজেদা আলীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের পাঁচ মেয়ে-সন্তান; বড় মেয়ে ড. রানা রাজ্জাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক, দ্বিতীয় মেয়ে সাহানা রাজ্জাক স্ত্রীরোগ (গাইনি) বিশেষজ্ঞ হিসেবে খুলনায় কর্মরত, তৃতীয় মেয়ে অ্যানা রাজ্জাক মেডিসিন ও আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ হিসাবে জার্মানিতে কর্মরত, চতুর্থ মেয়ে লীনা রাজ্জাক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং কনিষ্ঠ মেয়ে ব্যারিস্টার ড. জনা রাজ্জাক ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ডের আইন বিভাগের অধ্যাপক।

জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, শিক্ষানুরাগী, বিশিষ্ট সমাজসেবক শেখ রাজ্জাক আলী বৃহত্তর খুলনা জেলায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বহু মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাসহ নানাবিধ সমাজসেবা ও উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। ‘শেখ রাজ্জাক আলী স্মৃতি পরিষদ’-এর পক্ষে সাধারণ সম্পাদক বেগম মাজেদা আলী এক বিবৃতিতে দেশবাসীর নিকট মরহুমের আত্মার মাগফিরাত ও দোয়া কামনা করেছেন।

 

খুলনা গেজেট/হিমালয়

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!