খুলনা- মোংলা রেলপথ প্রকল্প নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ছিলো ৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২’শ ২৫ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকায় প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে পারে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়। এদিকে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রেলপথ নির্মিত হলেও ১ জুন থেকে খুলনা-মোংলা বেনাপোল রুটে পুরানো ইঞ্জিন এবং বোগী ‘খুলনা বেতনা এক্সপ্রেস বেনাপোল দিয়েই ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
সূত্রমতে, খুলনা মোংলা পোর্ট রেলপথ প্রকল্প ২০১১ সালের ২১ ডিসেম্বর একনেকে পাস হয়।এরপর আনুষাঙ্গিক সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট রূপসা ব্রিজের উপর রেল সেতুসহ প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে ভারতীয় ২টি এবং বাংলাদেশের ১ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লার্সন এন্ড টুরবো লিঃ (এলএনটি) রূপসা নদীর উপর রেল সেতু তৈরীর কাজ করেছে। বাকি কাজ করেছে ভারতের অন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশের মুন ব্রাদার্স জয়েন্ট ভেঞ্চার (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিগনালিং এবং টেলিকমিউনিকেশনের কাজটি করেছে। বেশ কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। শেষ দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছিলো চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের কাজে সময় লেগেছে সাড়ে ৬ বছর।
প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ এক হাজার কোটি টাকা। পক্ষান্তরে ভারত সরকারের পক্ষে সেদেশের এক্সিম ব্যাংকের বিনিয়োগ দুই তৃতীয়াংশ অর্থাৎ তিন হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্পের মোট খরচের মধ্যে রয়েছে ৫ দশমিক ১৩ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের রূপসা নদীর উপর রেল সেতু। এর মধ্যে মূল সেতু ৭১৬ দশমিক ৮০ মিটার। ভূমি অধিগ্রহণ দুই জেলায় সর্বমোট ৬৭০ দশমিক ৪৩৩৭ একর। এর মধ্যে খুলনা জেলায় ৩৮৫ দশমিক ৩৮৯৮ একর এবং বাগেরহাট জেলায় ২৮৫ দশমিক ০৪৩৯ একর।
লুফস ও ইয়ার্ডসহ ৬৩ দশমিক ৮২১ কিঃমিঃ দীর্ঘ ব্রডগেজ রেল লাইন নির্মাণের জন্য ৩১ টি ছোট বড় ব্রিজ নির্মাণ করতে হয়েছে। নির্মাণ করতে এসে ১০৭টি কালভার্ট,২৯ টি লেবেল ক্রসিং গেট, ৯টি আন্ডারপাস, শেডসহ প্লাটফর্ম, দুইটি ফুট ওভার ব্রিজস সহ ৮টি স্টেশন, ১৬ টি ফাংশনাল বিল্ডিং, ভায়াডাক্ট ৪৪১৩ দশমিক ২০ মিটার, ২ টি মসজিদ, ৮ টি মন্দির, ৫ টি কবরস্থান, ১টি ঈদগাহ মাঠ।
নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আরিফুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলার সাথে দেশের রেলওয়ের বর্তমান নেটওয়ার্কের সংযোগ স্থাপন এবং মোংলা বন্দরের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করা, মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথে আরামদায়ক ভ্রমণের সুব্যবস্থা করা, রেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে খুলনা মংলা পোর্ট রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি বলেন, পুরানো ট্রেন দিয়ে মোংলা বেনাপোল রুটে ১ জুন থেকে নিয়মিতভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও কোরবানী ঈদের পর এই রুটে নতুন ট্রেন সংযোজন করা হবে এবং ট্রেনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।
গত অক্টোবর মাসে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ কাজের পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, মোংলা সমুদ্র বন্দর শুধু আমাদের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মালামাল পরিবহন ক্ষেত্রে নই, প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। অভ্যন্তরীণ আমাদের যে সামর্থ এই বন্দরটি ব্যবহারের ফলে মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা আমরা সবাই মিলে পাবো, জনগণ পাবে।
এদিকে খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু হওয়ায় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে সবাই উপকৃত হবে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গতিশীলতা বাড়বে।সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। মংলা থেকে মালামাল পরিবহনে খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে।
উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৫ কিঃমিঃ নতুন রেল লাইনের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনের ৭ মাস পর ১ জুন থেকে খুলনা- মোংলা -বেনাপোল রুটে নিয়মিতভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।