প্রথম ওয়ানডে জিতে সিরিজে লিড নিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে পরের ম্যাচেই ঘুরে দাড়ায় লঙ্কানরা। তাই আজকের ম্যাচটা দুই দলের জন্য সমান। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশকে জয়ের পথে কিছুটা হলেও এগিয়ে দিয়েছেন বোলাররা। বিশেষ করে পেসাররা নতুন বলে দ্রুত উইকেট তোলে বড় জুটি গড়তে দেননি লঙ্কানদের। তবে এদিন ব্যতিক্রম ছিলেন জানিথ লিয়ানাগে। তিনি এক প্রান্ত আগলে রেখে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। তার অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ভর করে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
সোমবার (১৮ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রান সংগ্রহ করেছে শ্রীলঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ১০১ রান করেছেন লিয়ানাগে। বাংলাদেশের হয়ে ৪২ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছেন তাসকিন আহমেদ।
নতুন বলে দুর্দান্ত ছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। বিশেষ করে তাসকিন আহমেদ বেশ সুইং পেয়েছেন। এই পেসারের সুইংয়ে চোখে রীতিমতো সর্ষে ফুল দেখেছেন পাথুম নিশাঙ্কা! ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলটি ফুললেংথে করেছিলেন তাসকিন। সেখানে ডিফেন্ড করতে ব্যাটে খেলতে পারেননি নিশাঙ্কা, বল সরাসরি তার প্যাডে লেগেছে। তাতে লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবোরো। যদিও বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় মিস করে যেত লেগ স্টাম্প।
নিজের করা পরের ওভারেও উইকেট পেয়েছেন তাসকিন। এবার বাইরের দিকে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়েছেন আভিষ্কা ফার্নান্দো। ক্যাচ জমা পড়েছে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৪ রানে এই ওপেনারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দেন তাসকিন।
১৫ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর সাদিরা সামারাবিক্রমাকে নিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন কুশল মেন্ডিস। তবে সামারাবিক্রমা ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি। এই ইনফর্ম ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। সিরিজের প্রথমবার ম্যাচ খেলতে নেমে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার। মুস্তাফিজের মতোই প্রথম দুই ওয়ানডেতে একাদশের বাইরে ছিলেন রিশাদ হোসেন। আজ সুযোগ পেয়ে বল হাতে দুর্দান্ত শুরু করেন এই লেগ স্পিনার। নিজের প্রথম বলেই ফেরান উইকেটে সেট হওয়া কুশল মেন্ডিসকে।
ইনিংসের ১৮তম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে আসেন রিশাদ। তার করা প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে পরে টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ২৯ রান করা মেন্ডিসকে ফিরিয়ে ওয়ানডেতে নিজের অভিষেক উইকেট পেলেন রিশাদ। এর আগে আরও দুই ওয়ানডে খেললেও ছিলেন উইকেট শূন্য।
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে আরও একবার দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছেন চারিথ আসালঙ্কা। ইনফর্ম এই ব্যাটার দেখে-শুনে খেলে উইকেটে থিতু হয়েছিলেন। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৫তম ওভার মুস্তাফিজের ব্যাক অব লেংথের বলে কাট করতে গিয়ে আউট সাইড এডজে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন এই ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে ৪৬ বলে ৩৭ রান করেছেন তিনি।
সাতে নেমে দলের বিপদের মুহুর্তে ব্যর্থ দুনিথ ভেল্লালেগে। এই বোলিং অলরাউন্ডার ১ রানে সাজঘরে ফিরে দলের বিপদ আরও বাড়িয়েছেন। ৩১তম ওভারে মিরাজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন ভেল্লালেগে।
সুবিধা করতে পারলেন না ভানিন্দু হাসারাঙ্গাও। উইকেটে এসেই পাল্টা আক্রমণে ম্যাচের গতি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন হাসারাঙ্গা। কিন্তু এক ছক্কায়ই শেষ হলো তার পাল্টা জবাব। ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে ব্যাকফুটে জায়গা করে নিয়ে অফের দিকে খেলতে চেয়েছিলেন হাসারাঙ্গা, কিন্তু খানিকটা নিচু হওয়া বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৮ বলে ১১ রান।
১৫৪ রানে ৭ ব্যাটারকে হারিয়ে অলআউটের শঙ্কায় পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে অষ্টম উইকেট জুটিতে মাহিশ থিকশানাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন লিয়ানাগে। থিকশানা ১৫ রান করে সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ৬০ রানের জুটি। এটাই ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের জুটি। থিকশানা ফিরলেও আরেক প্রান্ত আগলে রেখে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন লিয়ানাগে। ১০১ বলে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। এটি তার অভিষেক সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ১০২ বলে ১০১ রান করে।
খুলনা গেজেট/ এএজে