সব ঠিক আছে, শুরুটা ভালো হওয়া প্রয়োজন- বিশ্বকাপে টানা ১৪ ম্যাচ হারা প্রসঙ্গে কথাগুলো বলেছিলেন আফগানিস্তানের কোচ জনাথন ট্রট, যাকে তার দেশ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছক কষতে হয়েছে। এই প্রথমবার দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন তিনি। আর তাতেই বাজিমাত করলো আফগানরা। ২০১৫ বিশ্বকাপে অভিষেকে এসেছিল একমাত্র জয়, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। তারপর থেকে হার, হার আর হার। সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এলো আফগানিস্তান। ৬৯ রানের বিশাল ব্যবধানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারায় তারা।
ট্রটের কথাই হলো সত্যি। শুরুটা দারুণ করেছিল আফগানিস্তান। রহমানউল্লাহ গুরবাজের চমৎকার ব্যাটিংয়ে ১১৪ রানের উদ্বোধনী জুটি হাতছানি দিচ্ছিল বড় স্কোরের। যদিও প্রত্যাশিত রান হয়নি মাঝের ওভারে ইংলিশ বোলারদের চাপে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ২৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর জমা পড়ে বোর্ডে।
শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাকি কাজ সারেন আফগান স্পিনাররা। মোহাম্মদ নবী, মুজিব উর রহমান ও রশিদ খান নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পাশাপাশি উইকেট নেন। ফজলহক ফারুকী ও নাভিন উল হক গতি দিয়ে চমক দেখান।
২২ ওভারের মধ্যে ১১৭ রানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ৫ উইকেট তুলে নেয় তারা।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেট পান ফারুকী। নিজের প্রথম বলে জনি বেয়ারস্টোকে (২) এলবিডব্লিউ করেন আফগান পেসার। তারপর দুই স্পিনার মুজিব ও নবী ভেঙে দেন টপ অর্ডার। ১৩ ওভারের মধ্যে তাদের দুজনের শিকার হন জো রুট (১১) ও ডেভিড মালান (৩২)। ৬৮ রানে ৩ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
একশ রানের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফেরা চতুর্থ ব্যাটার জস বাটলার। নাভিন উল হক তাকে ৯ রানে বোল্ড করেন। রশিদ খানের শিকার হন লিয়াম লিভিংস্টোন (১০)।
হ্যারি ব্রুক এই বিপদে একলা হাল ধরেন। উপযুক্ত সঙ্গ পাননি। স্যাম কারান (১০) নবীর বলে রহমত শাহের ক্যাচ হন।
মুজিব টানা দুই ওভারে ক্রিস ওকস ও ব্রুককে ফেরালে ইংল্যান্ডের শেষ প্রতিরোধ থেমে যায়। ব্রুক ইনিংস সেরা ৬৬ রান করে আউট হন। তখনও দল দুইশর ধারেকাছে নেই। ১৬৯ রান করতেই প্যাভিলিয়নে আট ব্যাটার।
মালান ও ব্রুকের গড়া ইনিংসের ৩৫ রানের সর্বোচ্চ জুটি ভাঙার পথে ছিলেন মার্ক উড ও আদিল রশিদ। কিন্তু পারেননি। নবম উইকেটে তারা তোলেন ইনিংসের তৃতীয় সেরা ২৯ রান। রশিদকে (২০) ফেরান রশিদ। কাকতালীয়, দুই ইনিংসেই দুই রশিদ একে অন্যের শিকার হয়েছেন। উড ও রিচি টপলির জুটিতে দুইশ পার করে ইংল্যান্ড।
ওয়ানডে ইতিহাসে এর আগে দুইবার মুখোমুখি হয়েছিল আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড, প্রত্যেকবার বিশ্বকাপে। সিডনিতে ২০১৫ সালের হার ৯ উইকেটে, গতবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পরাজয় ১৫০ রানে। এবার তারা ইংলিশদের চমকে দিয়ে ইতিহাস গড়লো।
চলতি আসরে বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে হারের পর প্রথমবার ২ পয়েন্ট পেলো আফগানিস্তান। তিন ম্যাচ শেষে সমান পয়েন্ট ইংল্যান্ডেরও। নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের কাছে হারে বড় ধাক্কা খেলো তারা।
এর আগে ভারতে অনুষ্ঠিত ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাস্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিনা উইকেটে ১১৪ রানের সংগ্রহ পায় আফগানিস্তান। তবে স্পিনারদের ঘূর্ণি জাদুতে ১৯০ রানের মধ্যে ৬ উইকেট তুলে নেয় ইংলিশরা। কিন্তু ইকরাম আলি খিল ও মুজিবের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ইংলিশদের ২৮৫ রানের লক্ষমাত্রা দিয়েছে আফগানিস্তান।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাটিং করে ২৮৪ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। দলের পক্ষে রহমানুল্লাহ গুরবাজ ৮০ এবং ইকরাম আলি খিল ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন।
রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ১৩ ওভারে স্কোর বোর্ডে একশো রান সংগ্রহ করেছিল আফগানিস্তান। তাদের ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের দিকে আগাচ্ছিল আফগানরা। কিন্তু ইংলিশ স্পিনারদের ভেল্কিতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে আফগান ব্যাটিং লাইনআপ। বিনা উইকেটে ১১৪ থেকে ১৫২-তে পৌঁছাতে চার উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
ইব্রাহিম জাদরানকে ২৪ রানে ফিরিয়ে ব্রেকথ্রু এনে দেন লেগস্পিনার আদিল রশিদ। ১২২ রানের মাথায় ৫৭ বলে ৮০ ক্যামিও খেলে বিদায় নেন মারকুটে ওপেনার গুরবাজ। অলরাউন্ডার ওমারজাইকে ১৯ রানে ফেরান আরেক লেগি লিভিংস্টোন। আফগান অধিনায়ক শাহিদি ৩৬ বলে ১৪ রানে বোল্ড হন রুটের বলে। ১৯০ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে আউট হন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী। ইকরাম আলি খিল একপ্রান্ত আগলে রেখে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি তুলে ৫৮ রানে ফেরেন। এছাড়া মুজিব ১৬ বলে ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। আদিল রশিদ সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট শিকার করেন।
খুলনা গেজেট/কেডি