সাতক্ষীরার ভোমরায় একটি বাসায় চট্রগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে আটক রেখে নির্যাতনের অভিযোগে সদর থানায় দায়ের করা মামলায় সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
এদিকে এ ঘটনায় পূর্ব থেকে দ্বিধাবিভক্ত ব্যবসায়ী নেতাদের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিতে শুরু করেছে। তবে, তাদের একটি পক্ষ এ নিয়ে ব্যাপকভাবে তৎপরতা শুরু করলেও অপরপক্ষ নিরবতা পালন করে চলেছে। বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভোমরা স্থল বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন জরুরি সভা আহবান করেছে।
জানা যায়, গত শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ আলম খানের মালিকানাধীন এমএন্ডএম ট্রেডার্স থেকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সাউদ মোহাম্মদ সাদাতকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ। ওইদিন রাতে ভিকটিম সাদাত বাদী হয়ে এএসএম মাকসুদ খানসহ ৫ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামীরা হলো ম্যানেজার মোহাসেন কবির, টফি, আকাশ ও রাজিব।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, এএসএম মাকসুদ খানের সাথে তার ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল এবং তার কাছে (সাদাত) মাকসুদ খানের ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা পাওনা হয়। তার ব্যবসায়িক অবস্থা ভালো না থাকায় তিনি সময়মত টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ওই পাওনা টাকা কিভাবে পরিশোধ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করার জন্য তিনি এজাহার মিয়া ও মোঃ আক্তারকে সঙ্গো নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে সাতক্ষীরায় আসেন। পরে তাদেরকে সাথে নিয়ে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের অফিসে যান। সেখান থেকে বিকাল সাড়ে ৫টার সময় মামলার আসামী মোহাসেন কবির ও টফি তাকে কৌশলে অপহরণ করে এমএন্ডএম ট্রেডার্সের অফিসে নিয়ে যায় এবং তাকে আটক রাখে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ওই মোহাসেন, টফি, আকাশ ও রাজিব তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটায় এএসএম মাকসুদ খান সেখানে আসে এবং এসএস পাইপ দিয়ে তার হাতে পায়ে কোমরে উরুতে বেদম মারপিট করে রক্তজমাট ফোলা জখম করে। এসময় তার প্যান্টের পকেটে থাকা ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় তারা। বিষয়টি সাউদ মোহাম্মদ সাদাত কৌশলে তার স্ত্রীকে জানায়। পরবর্তীতে ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় পুলিশ যেয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এএসএম মাকসুদ খান ও তার ম্যানেজার মোহাসেন কবিরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে সৃষ্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, এএসএম মাকসুদ খান চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীর কাছে টাকা পাবে এটা সে তার মামলার এজাহারেই স্বীকার করেছে। তিনি সময়মত টাকা পরিশোধ করেন নি। বন্দরের ব্যবসায় প্রতিনিয়ত বাকিতে লেনদেন করতে হয়। তবে এ ঘটনায় ভোমরা স্থলবন্দর সম্পর্কে যে ধরনের প্রচারণা শুরু হয়েছে তার ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। এ ঘটনার পর ভোমরার কোন ব্যবসায়ী বাইরের কাউকে ধারে-বাকিতে স্বাচ্ছন্দ্বে পণ্য সরবরাহ করবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আবার মিডিয়ার মাধ্যমে বাইরের ব্যবসায়ীদের জানানো হচ্ছে ভোমরায় টর্চার সেল আছে। ফলে বাইরের ব্যবসায়ীরা ভোমরায় এসে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে সাহস পাবে না।
আশরাফুজ্জামান আশু আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকটের কারণে ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা অনেকটা কমে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারীকে বেশ অর্থ কষ্টে ভুগতে হয়। কেবল সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ভোমরার ব্যবসা বাণিজ্যে প্রাণ ফিরে এসেছিল। ঠিক তখনই এ ধরনের প্রচারণা শুধু ভোমরা স্থলবন্দর নয়, সাতক্ষীরার ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, আমার জানা মতে, ভোমরা স্থলবন্দরে কোন টর্চার সেল নেই। তাছাড়া যে ভবনে এএসএম মাকসুদ খানের এমএন্ডএম ট্রেডার্স অবস্থিত সেই ভবনে আরও অনেকগুলো অফিস রয়েছে। সেখানে অনেকে চাকরি করে। প্রতিদিন বহু মানুষ যাতায়াত করে সেখানে। সেই ধরনের একটি ভবনে একজন ব্যক্তিকে ১৩দিন জোরপূর্বক আটক রাখা স্বাভাবিক অবস্থায় সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, আমাকে অনেকেই জানিয়েছে চট্টগ্রামের ওই ব্যবসায়ী সাউদ মোহাম্মদ সাদাত প্রতিদিন বর্ডার মসজিদে নামাজ পড়তে গেছেন, কাস্টম মোড়ের চায়ের দোকানে বসেছেন, হোটেলে খাওয়া দাওয়া করেছেন। এসব কথা যদি সত্য হয়, তাহলে তাকে জোর পূর্বক আটক রাখার ঘটনা সত্য নয়। যেহেতু মামলা হয়েছে পুলিশ সঠিক বিষয়টি খুঁজে বের করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে ঘটনা সম্পর্কে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দেলওয়ার রাজু বলেন, সামগ্রিক বিষয় আলোচনার জন্য মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এসোসিয়েশনের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সভার পূর্বে এসব বিষয়ে তিনি মুখ খুলতে রাজি না হলেও ভোমরা স্থলবন্দর নিয়ে বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ ধরনের ঘটনার জন্ম দেওয়া হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
খুলনা গেজেট/এনএম