যশোরের চৌগাছায় ভৈরর নদের উপর স্লুইস গেটটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গেটটি এখন প্রায় নষ্ট। ফলে পানি ব্যবস্থাপনায় ভাটা পড়ে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। স্থানীয়রা স্লুইস গেট দ্রুত মেরামতে জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর ও জগদীশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া হতে ভৈরব নদের দুটি মোহনা মুক্তদাহ গ্রামের সন্নিকটে এসে একত্রিত হয়ে পাঁচনামনা গ্রামের মধ্য ভাগ হয়ে কপোতাক্ষ নদে মিলিত হয়েছে। এক সময়ের প্রমত্তা ভৈরব নদ কালের বিবর্তনে হয়েছে মরা খাল। প্রায় তিন বছর আগে সরকার ভৈরব খনন করে। কিন্তু আগের মত পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে জানান এলাকাবাসি। নদের উপর স্লুইস গেট নির্মাণের ফলে ভৈরবের অঢেল পানি ধরে রেখে সেখানে মাছ চাষ, গৃহস্থলির কাজ এমনকি কৃষি জমিতে সহজে পানি ব্যবহার করা হত। কিন্তু সেই ব্যবস্থাপনা এখন আর নেই।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৩ সালে সাবেক মন্ত্রী মরহুম তরিকুল ইসলাম ওই স্লুইস গেট নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এটি নির্মাণের ফলে এর সুফল পেতে শুরু করেন নদ পাড়ের মানুষ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে গেটের সবগুলো মুখ খুলে পানি সহজে কপোতাক্ষে বের করা যেত এবং বর্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে গেটের মুখ বন্ধ করে নদে পানি ধরে রাখা হত। পরবর্তীতে ওই পানিতে মাছ চাষসহ জমিতে সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদন করতেন চাষিরা। গেট নির্মাণের তিন দশক যেতে না যেতেই সেটি এখন অকেজো হয়ে পড়েছে। গেটের গুরুত্বপূর্ণ সব কিছুতেই মরিচা পড়ে গেছে। ফলে পানি নিয়ন্ত্রণের পাটাতনগুলো নষ্ট। এছাড়া গেটের উপরি ভাগে চলাচলের সুবিধার্থে রেলিং নির্মাণ করা হয়। সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। রাতের আঁধারে রেলিং ভেঙে সেখান থেকে রড বের করে বিক্রি করেছে দুর্বৃত্তরা।
পাঁচনামনা গ্রামের তরিকুল ইসলাম ও আপেল উদ্দিন বলেন, দৃষ্টিনন্দন স্লুইস গেটের অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। এটি সংস্কার না করলে ব্যবহার করা যাবে না।
গ্রামের গৃহবধূ রেবেকা খাতুন, ফাহিমা খাতুন বলেন, স্লুইস গেটের পাশেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এছাড়া এলাকাটি জনবসতিতে ভরে উঠেছে। সময়ে অসময়ে শিশুরা ছুটে আসে এখানে। কোন রেলিং না থাকায় শিশুদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে।
গ্রামের কৃষক লুকমান হোসেন বলেন, স্লুইস গেট যখন সচল ছিল তখন আমরা পানি ধরে রেখে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতাম। বিশেষ করে নদপাড়ের জমির কৃষি কাজে ধরে রাখা পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করা হত। কিন্তু বর্তমানে সেটি হচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান, স্লুইস গেট সন্নিকটে পশ্চিম পাশে একটি ব্রিজ আছে। ওই ব্রিজের রেলিংও দীর্ঘদিন ছিল ভাঙ্গা। গত তিন মাসের ব্যবধানে ব্রিজ হতে পড়ে আহত হয়েছেন আলামিন (৪২), টিটো মিয়া (৪০) ও ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন (১২)। এর মধ্যে আলামিন ও টিটোর কোমরের হাড় ভেঙে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।
সম্প্রতি পৌরসভার উদ্যোগে ব্রিজের রেলিং নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পাঁচনামনা গ্রামের বাসিন্দা সাহিদুল ইসলাম বলেন, স্লুইস গেট যে উদ্দেশ্যে নির্মাণ হয় তার সুফল থেকে মানুষ এখন বঞ্চিত। অচিরেই এটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হবে।
খুলনা গেজেট/ টিএ