মোবাইলে ইন্টারনেট পরিসেবার কারণে এখন আবহাওয়ার আগাম সব খবর পেয়ে যায় উপকূলের মানুষ। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে পারে সরাসরি বাংলাদেশ উপকূলে। ১৩ মে’র পর থেকে ১৫ মে’র মধ্যে যেকোন সময়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলবাসী। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা’র বার্তা রীতিমত দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে তাদের। বিশেষ করে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে উপকূলে বাসবাসকারি জনসাধারন।
জানা যায়, সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। সে সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা। এরপর ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল আঘাত হানে। সবশেষ ২০২০ সালের ২০ মে বিকেলে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে সাতক্ষীরা উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এ সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। যার ক্ষত শুকায়নি এখনো।
স্থানীয়রা জানান, শ্যামনগর উপকূল জুড়ে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও বেশ কিছু স্থান এখনও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। আবার অনেক স্থানে দায়সারা ভাবে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। যা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট প্লাবন মোকাবেলার সক্ষমতা রাখে না। যদিও পাউবোর দাবি, শ্যামনগর বেল্টের গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কাশিমাড়ীসহ অন্যান্য ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়েছে।
পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালি এলাকার বাইজিদ হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নের বেশ কিছু জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংষ্কার করা হয়েছে। কোথাও কোথাও কাজ চলছে। কিন্তু কাজের মান খুবই নিম্মমানের। বাঁধের যে উচ্চতা করা হয়েছে সামান্য জলোচ্ছ্বাসে তা উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করবে।
একই ইউনিয়নের ঝাপা এলাকার দেবনাথ কুমার বলেন, কিছু দিন আগে ঝাপা হাইস্কুল থেকে খেয়াঘাট অভিমুখে ৩ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের কাজ করেছে। তবে এসব বাঁধ উচ্চ-জোয়ারে টিকবে না। কাজ করা হয়েছে নাম মাত্র।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল জানান, বর্তমানে বুড়িগোয়ালিনীর দুর্গাবাটিতে দুই জায়গায় ও দাতিনাখালীসহ মোট তিনটি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ জানান, হরিনগর খাদ্য গুদাম সংলগ্ন মৌখালী নদীর ধারেসহ ৪টি স্থান বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিতে রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো সংস্কার করা দরকার।
গাবুরা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রহিম বলেন, হরিষখালী, পার্শেমারী টেকেরহাট, গাবুরা, চকবারা ও লেবুবুনিয়াসহ ৫টি স্থানে বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে আছে।
কাশীমাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, ঝাপালী বাজার হতে ঘোলা খেয়াঘাট অভিমুখে বেড়িবাঁধের ৩টি স্থান অবস্থা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সামান্য জলোচ্ছ্বাসে ওই বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে।
আটুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু বলেন, আটুলিয়া ইউনিয়নে তিনটি পয়েন্ট পাউবো’র বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে বিড়ালক্ষীতে দুইটি ও বড়কুপটের একটি জায়গা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানলে এসব জায়গায় বাঁধ টিকবে কি না তা নিয়ে শংকা রয়েছে।
যদিও শ্যামনগরে কর্মরত পাউবো’র সেকশনাল অফিসার (এসও) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শ্যামনগরে পাউবোর বেড়িবাঁধের অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকীগুলোর কাজ চলছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহিনুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। তাদেরকে সজাগ থাকার জন্য বলা হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তার হোসেন বলেন, আমরা ইতিমধ্যে প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সিপিপি টিম লিডারদের সাথে কথা বলেছি। উপজেলার ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার জন্য বলা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এসজেড